ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাতিষ্ঠানিকের শেয়ার কেনায় দরপতনের গতি কমল

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ২১ এপ্রিল ২০১৯

প্রাতিষ্ঠানিকের শেয়ার কেনায় দরপতনের গতি কমল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টানা ১২ সপ্তাহ গড়াল শেয়ারবাজারের দরপতন। আগের ১১ সপ্তাহ বড়পতন হলেও গত সপ্তাহে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয়তায় পতনের গতি কমেছে। এমনকি শেষ দুই কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে সব ধরনের সূচকই বেড়েছে। তবে শেয়ারদর বাড়তে থাকার বিক্রির আদেশ কমে যাওয়ায় সার্বিক লেনদেনে বড় কোন প্রভাব পড়েনি। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি কিছুটা হলেও ফিরেছে। কিন্তু সেইভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়েনি। আগের সপ্তাহের মতো গত সপ্তাহের তিন কার্যদিবসই বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরিয়ে আনতে রাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিককালে শেয়ারবাজারে আস্থা আর তারল্য দুটোরই সঙ্কট চলছে। একইসঙ্গে কেউ কেউ বলছেন একটি পক্ষ বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বাজারকে যতটা না সঙ্কটাপন্ন তার চেয়ে বেশি দেখানোর জন্য ফোর্স সেলের আশ্রয় নিয়েছে। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ ও কম দামে শেয়ার কেনার জন্য তারা পরিকল্পিত ধস নামানো চেষ্টা করছে। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে বাজারে আস্থা ফেরাতে স্কিপ্ট নিটিং, নতুন আইপিও হার কমানো, ব্রোকারেজ হাউসের বুথ খোলা, প্লেসমেন্ট নীতিমালা সংশোধনসহ বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ন্ত্রক সংস্থার কারণে জমা দিতে চাচ্ছে এতে কিছুটা হলেও আস্থার পরিবেশ ফিরে আসবে। সপ্তাহের বাজারচিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে চলমান পতনে সূচক সবচেয়ে দ্রুত কমেছে গত সপ্তাহে। বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর দরপতনই এর মূল কারণ। বিশেষ করে ইউনাইটেড পাওয়ার, মুন্নু সিরামিক ও মুন্নু স্টাফলারের মতো শেয়ারের প্রায় ক্রেতাশূন্য অবস্থায় লেনদেনের কারণে শেয়ারবাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। সর্বশেষে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৎপরতায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার কেনা শুরু করে। ফলে তিন চার কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসই সূচক বেড়েছ। কিন্তু একদিনের পতনকে তা পরাস্ত করতে পারেনি। ফলে সপ্তাহ শেষে নেতিবাচক ধারাতেই লেনদেন শেষ হয়। রবিবার পহেলা বৈশাখের ছুটির কারণে সেদিন লেনদেন বন্ধ ছিল। পরদিন সোমবারে সূচক কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবারে শেয়ারবাজারে সূচক বড় ধরনের দরপতন ঘটে। বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। তারা আস্থা ফেরাতে বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করে। এরপরের বিএসইসিসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হন শেয়ার কিনতে। সব পক্ষের প্রচেষ্টার পর শেয়ারবাজারে শেষ দুইদিনে সূচক বাড়ে। জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে স্টেকহোল্ডারদের আলোচনা শেষে সরকারের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ ক্রয়াদেশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এজন্য বাড়তি তহবিল জোগাড়ে তৎপর হন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। আইসিবি, বিডিবিএলসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হন। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল, ইস্টার্ন ক্যাবল, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের দর ও চাহিদা বেড়ে যায়। একইসঙ্গে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স ও প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের চাহিদা বাড়ে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগের সপ্তাহে যেখানে ৫২টি কোম্পানির দর বেড়েছিল সেখানে গত সপ্তাহে ১৭৬টির দর বাড়ে। এর বিপরীতে কমেছে ১৪৩টি কোম্পানির দর। আগের সপ্তাহে যা ছিল ২৮০টি। সোমবার লেনদেন শুরুর দিনে ডিএসইর সার্বিক সূচক ছিল ৫ হাজার ৩২৬ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবারের লেনদেন শেষে তা মাত্র ৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৩২১ পয়েন্ট। অর্থাৎ সূচক কমার হার কম। অর্থাৎ আগের তুলনায় বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির হার কমেছে। সাপ্তাহিক লেনদেনের সেরা কোম্পানিগুলো হলো ॥ ফরচুন সুজ, মুন্নু সিরামিক, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল, ইউনাইটেড পাওয়ার, এস্ক্যোয়ার নিটওয়্যার, মুন্নু জুট স্টাফলার, গ্রামীণ ফোন, সুহৃদ ইন্ড্রাস্টিজ ও ব্র্যাক ব্যাংক। দরবৃদ্ধির সেরা কোম্পানিগুলো হলো ॥ স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, হাক্কানী পার্ল্প, একটিভ ফাইন, ফাইন ফুড, এইচআর টেক্সটাইল, বিএসইসি, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স ও তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স। দর হারানোর সেরা কোম্পানিগুলো হলো ॥ রেকিট বেনকিসার, মুন্নু সিরামিক, জিএসপি ফাইন্যান্স, মুন্নু জুট স্টাফলারস, ইসলামিক ফাইন্যান্স, ব্র্যাক ব্যাংক, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, ফার্স্ট ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড এয়ার।
×