ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী

যিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থান ও তাঁর আহ্বান

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ২১ এপ্রিল ২০১৯

যিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থান ও তাঁর আহ্বান

আজ রবিবার, মৃত্যু থেকে যিশু খ্রিস্টের পবিত্র পুনরুত্থানের স্মরণোৎসবের দিন। খ্রিস্টের পুনরুত্থান খ্রিস্টীয় ধর্মবিশ্বাসের নির্ভর-বিন্দু। তাই পৃথিবীর সর্বত্র খ্রিস্টিয়ানরা নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাদের পবিত্র উপাসনায় দিনটি উদ্যাপন করছে। খ্রিস্টের পুনরুত্থান স্বর্গীয় গৌরবে গৌরবান্বিত। তা পারলৌকিক তাৎপর্যে ভাস্বর; কিন্তু আমরা ইহজাগতিক বাস্তবতার মধ্যেই তার অর্থ ও আনন্দ উপলব্ধি করার আহ্বান আছে বলে জানি। সকল জরা-জীর্ণতা, গোঁড়ামি, অন্ধতা ও পাপাচারের বন্দিত্বের উর্র্ধে ওঠার সেই আহ্বান দেয়। বাইবেলের নতুন নিয়মে বর্ণিত যিশুর একটি আশ্চর্য কাজের বর্ণনায় বলা হয়েছে যিশু কোন এক উপাসনালয়ে ’বিশ্রামবার’ ধর্মোপদেশের পরে কুব্জা একজন স্ত্রীলোককে সুস্থ করেন (সাধু লোক রচিত সুসমাচার ১৩ অধ্যায়)। দীর্ঘ আঠারো বছর যাবত হতভাগ্য ঐ স্ত্রীলোকটি অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে তার জীবনকে বড় এক বোঝার মতো বয়ে চলছিল। সে ছিল পরাধীন, পরিবার ও সমাজের সকলের অবহেলা ও করুণার পাত্রী। যিশুর কাছে সুস্থ হবার কথা বলার আগেই তিনি তাকে সুস্থ করে দিলেন, তার পিঠ সোজা হয়ে গেল, সে মুক্ত হলো তার প্রতিবন্ধিতার কঠিন বোঝা থেকে। সেদিন যিশুর ঐ অলৌকিক কাজটি দেখে সমাজের সাধারণ মানুষ আনন্দ পেয়ে স্রষ্টার গৌরব ও প্রশংসা করেছিল। কিন্তু অনেক অসন্তুষ্ট হয়েছিল যারা গোঁড়া ধর্র্মীয় উপাসক। কারণ, ঐ মুক্তিদায়ী কাজটি একজন হতদরিদ্র ও দুর্বলতম মানুষের মহাউপকারের কাজ হলেও তা করা হয়েছিল ’বিশ্রামবার’ বা ধর্র্ম পালনের দিনে! প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যেÑ সুসমাচারের বর্ণনানুসারে যিশু বিশ্রামবারে আরও কিছু অলৌকিক কাজ করে ধর্মীয় নেতাদের রোষানলে পড়েছিলেন; এমনকি তারা তাঁকে তার জন্য হত্যা করার চক্রান্তও করেছিল। যিশুর কাছে আচার ও প্রথাসর্বস্ব ধর্ম পালনের চেয়ে মানুষের জীবন ছিল বেশি মূল্যবান। গোটা বাইবেলের এটিই প্রকৃত। জীবন প্রকৃত জীবনেরই জন্য। যিশু বলেছেন, বিশ্রামবার তথা ধর্র্ম মানুষের জন্য, মানুষ বিশ্রামবারের জন্য নয়। মানুষের ঐহিক জীবনের প্রকৃত শান্তি, মর্যাদা ও সম্প্রীতির জন্য তিনি এ পৃথিবীতে এসেছিলেন যেন তার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশিত হয়। তা-ই ধর্মের চিরায়ত বাণী। প্রতিষ্ঠার জন্য খ্রিস্ট তাঁর সম্পূর্ণ নিষ্পাপ ও পবিত্র জীবন মানুষের পাপের মুক্তির মূল্যরূপে উৎসর্গ করেছিলেন। পিতা ঈশ্বর তাঁর আত্মত্যাগকে মূল্যায়ন করলেন ও তাঁকে মৃত্যু থেকে উঠালেন। তিনি হলেন মৃত্যুঞ্জয়ী। সমাজে আজ হিংসা, লোভ ও অন্যায়ের অবাধ গতি। নারীর ওপর নিষ্ঠুরতা ও বর্বর আচরণের প্রায়ই হয়ে থাকে প্রধান খবর। বড়ই গভীর আমাদের এ অন্ধকার। তবু আমরা শত দুঃসংবাদের মধ্যেও আশায় আলোর পথেই এগিয়ে চলি। কারণ, সত্যময় ও ন্যায়বান ঈশ্বর আমাদের শক্তিদাতা, তিনি সমস্ত জ্ঞান ও আলোর উৎস। তিনি চান শুভবুদ্ধির সকল মানুষ যেন সমস্ত পাপ ও অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন ও কাজ করে যান। আমাদের চাই মন-মন্দিরের সংস্কার ও নবায়ন, প্রয়োজন অন্তরের পাশবিকতার কুরবানি। পার্থিব এ বাস্তব জীবনে খ্রিস্টের পুনরুত্থানে বিশ্বাসের অর্থ পরমেশ্বরের আত্মিক শক্তির পরিচালনায় জীবনকে নতুনভাবে চালানোর চেষ্টা। হিংসা ও লোভের পুরনো জীবনকে কবর দিয়ে প্রকৃত মানবীয় মূল্যবোধ ও চেতনায় নতুন হয়ে চলার আহ্বানই পুনরুত্থানের আহ্বান। লেখক : খ্রিস্টীয় ঈশতত্ত্বের শিক্ষক ও চার্চ পুরোহিত
×