ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাদ পড়েই জ্বলে উঠলেন তাসকিন

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ২০ এপ্রিল ২০১৯

 বাদ পড়েই জ্বলে উঠলেন  তাসকিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ স্কোয়াড দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচকরা। ১৫ সদস্যের চূড়ান্ত সেই দলে ঠাঁই পাননি তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদ। সেই কষ্টে কেঁদেছেনও তিনি। মূলত ফিটনেস সমস্যার কারণেই তাকে দলে রাখা হয়নি। কিন্তু দল ঘোষণার দু’দিন পরই বল হাতে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে জ্বলে উঠেছেন তাসকিন। শুক্রবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল) লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে ৯ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে শিকার করেছেন ৪ উইকেট। আর এতে করে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব মাত্র ২০৫ রানেই গুটিয়ে যায়। ফিটনেস ঘাটতি নিয়েও তাসকিনের এক ধারালো বোলিং বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে উইকেট চারটি দখল করলেও দোলেশ্বরের এত কম রানে গুটিয়ে যাওয়া ইনিংসে তাসকিন ছিলেন বেশ খরুচে। এতে করে একটি বিষয় অন্তত বোঝা গেছে, পুরোপুরি সঠিক অবস্থানে এখন পর্যন্ত পৌঁছুতে পারেননি এ ডানহাতি পেসার। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন তাসকিন। ১২ ম্যাচে ২২ উইকেট শিকার করে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন তালিকায়। কিন্তু আসরের শেষদিকে ফিল্ডিং করতে গিয়ে গোড়ালিতে আঘাত পেয়েছিলেন। অথচ দীর্ঘদিন পর তিনি ফিরেছিলেন জাতীয় দলে। নিউজিল্যান্ড সফরে শেষ পর্যন্ত ওই ইনজুরিতে যেতেই পারেননি। সেরে উঠতে উঠতে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ শুরু হয়ে যায়। এবার ডিপিএলে প্রথমবার টি২০ আসরও হয়। সেখানেও দর্শক হয়ে বসে ছিলেন তাসকিন। এরপর লিস্ট ‘এ’ আসর শুরু হয় ডিপিএলের। সেখানেও ফিরতে পারার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে বিশ্বকাপ দল ঘোষণার সময় এগিয়ে আসছিল, তাই কিছুটা শরীরের ওপর জবরদস্তি করেই রূপগঞ্জের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন দুর্বল উত্তরা স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে। কিন্তু সেই ম্যাচে ৫ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। দুর্বল একটি দলের বিপক্ষে তাসকিনের এ শোচনীয় অবস্থাটা দেখেই নির্বাচকরা তার শারীরিক পরিস্থিতি বুঝে ফেলেন। ওই ম্যাচের পর আর তাসকিনকে মাঝে দুই ম্যাচ দেখা যায়নি। এর মধ্যে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা হয়ে যায় এবং তাসকিন বাদ পড়েন। এমনকি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি মঞ্চ হিসেবে দেখা আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ত্রিদেশীয় সিরিজের দলেও তাকে সুযোগ দেয়া হয়নি। অর্থাৎ বিশ্বকাপে খেলাটা অনেক বেশিই অনিশ্চয়তা। যদিও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু দল ঘোষণার দিন বলেছিলেন, ‘অনেকেই ব্যাকআপ খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে। তাসকিনের ফিটনেসজনিত সমস্যা আছে। আমরা ফিজিও, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং ওকে দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে এই মুহূর্তে সে ভাল অবস্থানে নেই পারফর্মেন্সের দিক থেকেও। এর মধ্যে ও নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করতে থাকুক। আমাদের লম্বা সময় খেলতে হবে। অনেকেই ফর্মে নেই এবং ইনজুরি সমস্যায় আছে। শেষ মুহূর্তে প্রয়োজন হলে তারও সুযোগ থাকতে পারে।’ নান্নুর এমন কথাতেই হয়তো শুক্রবার মাঠে নেমে জ্বলে উঠলেন তাসকিন। বাদ পড়ার কষ্টে কাঁদলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছিলেন, দোয়া রাখবেন, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে ফিরে আসব। সেই প্রক্রিয়া কি তবে এখুনি শুরু করে দিয়েছেন তাসকিন? একটি ম্যাচ দেখে বোঝার উপায় নেই। কারণ এ ম্যাচটিতেও ৪ উইকেট পেয়েছেন ঠিকই- তবে রান খরচার ক্ষেত্রে ছিলেন একেবারে উদার। প্রথম স্পেলে ৫-০-৩০-২, দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৬ রানে আরও দুই উইকেট। কিন্তু সেই স্পেলেরই শেষ দুই ওভারে ৯ করে মোট ১৮ রান দিয়েছেন। তাই বোলিং বিশ্লেষণের সার্বিক চেহারাটা একেবারেই ভাল দেখায়নি (৯-০-৫৪-৪)। উইকেট প্রাপ্তিতে তাসকিনকে সেরা পারফর্মার হিসেবে বিবেচনা করলেও প্রতিপক্ষ দোলেশ্বর মাত্র ২০৫ রানে যেখানে গুটিয়ে গেছে সেখানে তাসকিন রান দিয়েছেন ৬.০০ ইকোনমিতে। ওয়ানডে ক্রিকেটেও এখন পর্যন্ত ৩২ ম্যাচ খেলে তার ইকোনমি ৫.৯৪। বিপিএলে যে দোর্দ- প্রতাপে বোলিং করেছিলেন, এখন সেই অবস্থানে ফিরে আসতে পারনেনি তাসকিন এটা নিশ্চিত। সেটি হতে পারে ফিটনেস ঘাটতির কারণেই। তবে এই ম্যাচটির পরই তাসকিনকে নিয়ে আবার আলোচনা সূত্রপাত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয়। তাসকিনকে ফিরিয়ে নেয়া হোক বিশ্বকাপ স্কোয়াডে- এমনটাই বলছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে একটি ম্যাচ দিয়ে কিছুই প্রমাণিত হয় না। আরও দু’টি ম্যাচ হয়তো খেলার সুযোগ পাবেন ডিপিএলের সুপার লীগে। সেই ম্যাচ দুটিতে ভাল করতে পারলে হয়তো নান্নুর কথা অনুসারে তাসকিন কিছুটা আশায় থাকতে পারেন।
×