ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পূর্ত মন্ত্রণালয়ে ১০০ দিনে দৃশ্যমান নানা পরিবর্তন

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ২০ এপ্রিল ২০১৯

 পূর্ত মন্ত্রণালয়ে ১০০ দিনে দৃশ্যমান  নানা পরিবর্তন

মশিউর রহমান খান ॥ মন্ত্রী হিসেবে শ. ম. রেজাউল করিম দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিনে দৃশ্যমান নানা পরিবর্তন এসেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের চেয়ে তুলনামূলক এ মন্ত্রণালয়টিতে কাজের গতি অনেক বেশি। কোন প্রকার দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না ও দুর্নীতবাজদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে গণপূর্তমন্ত্রীর এমন ঘোষণা মন্ত্রণালয়টিতে কর্মরত সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা কর্মচারীদের মনে আশার আলো জাগিয়েছে। মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারীরা নড়েচড়ে বসেছেন। মন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর নক্সা পাশে ধাপ কমানো ও সময় নির্ধারণ করে দেয়া, পুরান ঢাকাকে রিডেভেলপমেন্ট করে আধুনিক মডেল শহর গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ ও এ সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা তৈরি, সকল সংস্থাকে ১ মে থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে অটোমেশন পদ্ধতি চালুর ঘোষণা, ঢাকার সকল বহুতল ভবনের অনিয়ম চিহ্নিত করার জন্য ২৪টি বিশেষ টিম গঠন করা, বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুনের কারণ জানতে মন্ত্রণালয় রাজউকসহ বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন গণপূর্তমন্ত্রী। এছাড়া রাজধানীর পার্শ্ববর্তী পূর্বাচল মডেল টাউনকে ডিসেম্বরের মধ্যেই বাস উপযোগী করে তোলার ঘোষণা, মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু, মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকল সংস্থার সেবা সহজীকরণ, একই পদে দীর্ঘদিন থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনত্র বদলির পদ্ধতি চালু করা, প্রেষণে দীর্ঘদিন থাকা কর্মকর্তাদের প্রেষণ বাতিল করে নিজ সংস্থায় ফেরত পাঠানোর মাধ্যমে অন্যরকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভবন নির্মাণের প্রথম ধাপ ভবনের নক্সা পাস করতে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা দীর্ঘসূত্রতা এই প্রথমবারের মতো নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ে এসেছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ১৬টি ধাপ অতিক্রম করে ভবনের নক্সা পাস করতে হয়। এতে কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকায় গ্রহকদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সঙ্গে আর্থিকভাবেও খুশি করতে হয় সংশ্লিষ্টদের। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এই প্রথমবারের মতো চলমান ১৬টি ধাপের ছাড়পত্র প্রদান থেকে যাচাই বাছাই শেষে ভবন নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত অতি প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে মাত্র চারটি ধাপের ছাড়পত্র রেখে নক্সা পাসের বাকি ১২টি ধাপ বাতিল করে দিয়েছেন মন্ত্রী। ফলে ৪টি ধাপের ছাড়পত্র জমা দিলেও সর্বোচ্চ ৫৩ দিনের নক্সা পাবেন গ্রাহক। একইসঙ্গে কাগুজে আবেদন ও নক্সা পদ্ধতি বাতিল করতে আগামী ১ মে থেকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে যে কোন জমির মালিক নক্সা পাসের আবেদন গ্রহণ ও ফি গ্রহণের সুবিধা চালু করছে। মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, নগর উন্নয়ন অধিদফতর, গণপূর্ত অধিদফতর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ মোট ১২টি দফতর ও সংস্থা কাজ করছে। রাজউকসহ কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রী অভিযোগগুলোকে অস্বীকার না করে তা পরিবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বিক্রয়ের অনুমতি ও নামজারি করার জন্য অপ্রয়োজনীয় বিধানকে বাদ দিয়ে সুনির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া হয়েছে। এর ফলে রাজউক, গৃহায়ন, চউক, রাউক, কেডিএসহ এমন সংস্থা সমূহে সেবা পেতে অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন দফতরে যাওয়া, অনিশ্চিতকালের জন্য অপেক্ষা করা ভোগান্তির অবসান ঘটছে। এছাড়া সকল সংস্থায় ০১ মে থেকে অটোমেশন পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রবর্তন, সেবা গ্রহণকারীদের জন্য ভোগান্তিহীন ও দ্রুততম সময়ে সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজধানীর নির্মাণাধীন ও নির্মিত বহুতল সাধারণ ভবনের অনিয়ম ও সমস্যা চিহ্নিত করতে রাজউক কর্তৃক ২৪টি টিম গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পরিদর্শন শেষে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পুরান ঢাকার অপরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘রিডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ এর মাধ্যমে নতুন ইমারত নির্মাণ করে মালিকদের হিস্যা অনুযায়ী ফ্ল্যাট বণ্টনের পরিকল্পনা নিয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এফআর টাওয়ার দুর্ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে মালিক, ডেভেলপার এবং অনিয়মের নির্মাণকালীন সময়ে দায়িত্ব পালনকারী রাজউকের কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এফআর টাওয়ারের অগ্নিকা-ে প্রাণহানির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অবহেলাকারী দায়িত্ব পালনকারী সদস্যদের বের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ঘোষণা, অন্যান্য সংস্থা থেকে এসে প্রেষণে দীর্ঘদিন থাকা কর্মকর্তাদের প্রেষণ বাতিল করে নিজ সংস্থায় ফেরত পাঠানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রস্তাবে সরকারী স্বার্থ যথাযথভাবে সংরক্ষিত না হওয়ায়, ওই সকল প্রস্তাব বাতিল করেছে। যা নজিরবিহীন বটে। উন্নয়ন প্রকল্প অযৌক্তিক কারণে বিলম্বিত করে, নির্ধারিত সময় বৃদ্ধি ও প্রকল্পের অর্থ বৃদ্ধির যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা রেওয়াজ মন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশে বাতিল করা হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজউকের বহু পুরনো অভিযোগ ফাইল গায়েব হয়ে যাওয়া। গুরুত্বপূর্ণ প্লট ও ফ্ল্যাটের নথি হারিয়ে যাওয়া বন্ধে মন্ত্রী আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে সকল নথি উদ্ধারের পদক্ষেপ নেন। ফলে, রেকর্ড রুমে না থাকা রাজউকের অন্তত ৮০০ নথি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে বাকি সকল নথি উদ্ধারের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেধে দিয়েছেন গণপূর্তমন্ত্রী। এছাড়া নথি মুভমেন্ট রেজিস্ট্রার প্রণয়ন, ঠিকাদারি সিন্ডিকেট কর্তৃক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ঠিকাদারি জিম্মি করে রাখার অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে সকল উন্নয়ন কাজ ই-টেন্ডার পদ্ধতি চালুর নির্দেশনা দেন রেজাউল করিম। ঠিকাদারি কাজ পাওয়া, বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বদলি ও পদায়নের তদ্বিরের পরিবর্তে বিধি ও নিয়ম অনুসরণ করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অতি কম সময়ের মধ্যে নানা প্রকার নির্দেশনার কঠোর বাস্তবায়ন ও গৃহীত উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা একই হারে অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে দুর্নীতির অন্যতম খাত ও অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া মন্ত্রণালয় হিসেবে খ্যাত এই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়টি তার নিয়মিত কার্যক্রমে গতি ফিরে পাবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের। একইসঙ্গে মন্ত্রীর উদ্যোগগুলো ভবিষ্যতে কতটুকু বাস্তবায়িত হয় তাও দেখার অপেক্ষায় রয়েছে দেশের নাগরিকগণ। ১০০ দিনের মন্ত্রিত্বের দায়িত্বের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে শ.ম. রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে অনেক আস্থা নিয়ে বিশাল এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। আমি এই আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে চাই। সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তা পালনের চেষ্টা করছি। আমার মন্ত্রণালয়ে কোন প্রকার অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির প্রশ্রয় দেব না। সাফল্য-ব্যর্থতা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমি নতুন মন্ত্রী তবে অনেকটা আত্মবিশ্বাসী। সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি দায়িত্ব ও সকল ঘোষণা নিয়মের মাঝে ও নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়নের। সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
×