ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেদিনের টমটম আজ শুধু ঐতিহ্যের ধারক

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২০ এপ্রিল ২০১৯

 সেদিনের টমটম আজ শুধু ঐতিহ্যের ধারক

প্রাচীন বাহন ঘোড়ায় চালিত গাড়ি। উৎপত্তি অন্তত সাড়ে তিন হাজার বছর আগে। তবে ষষ্ঠদশ শতকে বিশ্বে বেশি পরিচিতি পায় এই গাড়ি। ব্রিটের রাণী এখনও ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। বংশ পরম্পরায় ব্রিটিশদের রানী আজও ঘোড়ায় গাড়িতে চড়ে রাজপ্রাসাদ থেকে বের হয়ে হাউস অব কমন্সে যান। অষ্টাদশ শতকে উপমহাদেশে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ঘটায় ব্রিটিশরা। এক ঘোড়ায় চালিত দুই চাকার ঘোড়া গাড়িকে বলা হয় ‘টমটম’। দুই ঘোড়ায় চালিত চার চাকার ঘোড়ার গাড়ির নাম এক্কাগাড়ি। এক্কাগাড়ি চৌকোনা বড় বাক্সের মতো। যার মধ্যে চার জনের বসার আসন থাকত। ছোট দরোজা ছিল। পিছনে একজন গার্ড হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকত। একটা সময় দুই ধরনের ঘোড়ার গাড়ি ছিল। বনেদী পরিবারের লোকজন ব্যবহার করত এক্কাগাড়ি। সাধারণের বাহন ছিল টমটম। পুরান ঢাকার মানুষদের একটা পরিচিতি ‘কুট্টি’। তাদের টমটম ও এক্কা গাড়ি একটা সময় ঢাকায় ছিল ঐতিহ্যের বাহন। এই ঘোড়া গাড়ি নিয়ে কত যে মজার কথা প্রচলিত ছিল। যা আজও প্রবীণদের কথায় উঠে আসে। যেমন এক ভদ্রলোক পরিবারসহ টমটমের কাছে এসে বললেন এই ঘোড়া যাইবা নাকি! চালক কোন কথা না বলায় এবার ভদ্রলোক চালকের উদ্দেশে কাছে গিয়ে বললেন কথা বলেন না কেন। চালকের তাৎক্ষণিক উত্তর ‘আবে হালায় জিগাইচেন তো ঘোড়ারে। আমারে তো জিগান নাই।’ এরপর দরদামে কম হলে চালক বলে ‘চাপায়ে যান- ঘোড়ায় হুনলে (শুনলে) হাসবো সাব।’ আবার এমনও হয়েছে চালক চাপবাজি করে বলছেন ‘পঙ্খরাজের মতো উইড়া লইয়া যাইবো সাব।’ সেই ঘোড়াগাড়ি যখন ধীরগতিতে সব গাড়ির পিছনে গিয়ে তখন যাত্রীর রাগান্বিত কথায় চালক উত্তর দেয় ‘কি যে কন সাব। দ্যেখছেন না গ¹ল গাড়িরে ক্যমনে খেদাইয়া লইয়া যাইতাছে।’ এদের যুক্তি শুনলে হাসি পায়। যন্ত্রচালিত সভ্যতায় আজ আর ঘোড়াগাড়ি টমটম নেই। সহজে দেখা যায় না। একটা সময় প্রতিটি রেলস্টেশনের সঙ্গে যাত্রীদের দূরের গন্তব্যে পৌঁছানোর বাহন ছিল টমটম। টমটম ছিল স্বাচ্ছেন্দ্যের যানবাহন। টমটমের হর্ন ছিল অন্যরকম। চালক ঘোড়া নিয়ন্ত্রণের কাঠের ছোট ছড়ি চলন্ত চাকার সঙ্গে ঠেকিয়ে রাখলে এক ধরনের টকটকটকটকটকটক্কর শব্দ হতো। এই শব্দে সমুখের লোকজন সরে যেত। একটি টমটমে চার থেকে আটজন যাত্রী উঠতো। ঘোড়ার শক্তি অনুযায়ী দ্রুত ছুটে চলতো গ্রামের এবড়ো থেবড়ো পথে। ঘোড়াগাড়ি প্রায় উঠেই গেছে। কোন অঞ্চলে ঘোড়াগাড়ির আধুনিকায়ন হয়ে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। যেমন চরে ঘোড়ার গাড়ির সঙ্গে মোটরের টায়ার এঁটে চরের বালির মধ্যে অধিক ওজনের পণ্য নিয়ে চলাচল করছে। শহরে ও গ্রামে কোন অনুষ্ঠানে বিশেষ করে বিয়ের অনুষ্ঠানে কখনও বর যাত্রী, কখনও হলুদের অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণকারীরা টমটমে চরে অনুষ্ঠানস্থলে যায়। শহর ও নগরীর বর্ণাঢ্য র‌্যালি শোভাযাত্রায় টমটম (ঘোড়ার গাড়ি) রাখা হয় ঐতিহ্যের পরিচিতিতে। সেদিনের টমটম আজ শুধু ঐতিহ্যের ধারক হয়ে পথে চলছে। টমটম কালেভদ্রে তবু দেখা গেলেও এক্কাগাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না। খোঁজখবর করে জানা যায় পুরান ঢাকায় আজও হাতে গোনা কিছু এক্কাগাড়ি আছে। বড় কোন অনুষ্ঠানে এই গাড়িগুলো সাজিয়ে পথে নামানো হয়। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×