ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দপুর হাসপাতাল

রোগীদের দুর্ভোগ ঠেকাতে ‘সুভা’

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ২০ এপ্রিল ২০১৯

রোগীদের দুর্ভোগ ঠেকাতে ‘সুভা’

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুচ্ছের বাক প্রতিবন্ধী বালিকা ‘সুভা’ নয়। এটি সৈয়দপুরের স্বেচ্ছাসেবকদের ঐক্যর নাম। যাদের সেবায় সৈয়দপুর ১০০ শয্য হাসপাতালের চিত্র পাল্টে দেশের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। জানা যায়, ১৯৬৫ সালের ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ২০১৫ সালে পরিপূর্ণভাবে ১০০ শয্যায় রূপান্তর হয়। তৈরি করা হয় ৪ তলাবিশিষ্ট নতুন হাসপাতাল ভবন, ডরমেটরি, ৩টি স্টাফ কোয়ার্টার। শয্যানুযায়ী বাড়ানো হয় খাদ্য ও ওষুধের বরাদ্দ। তবে ১০০ শয্যার মঞ্জুরিকৃত জনবল না পাওয়ায় সঙ্কটে চিকিৎসার এ ক্ষেত্রটিতে চরম প্রভাব পড়ে। পরিচ্ছন্নতা কর্মী থেকে ডাক্তার সঙ্কটে অব্যবস্থাপনায় প্রায় সময় ভোগান্তির শিকার হন রোগীরা। রোগীদের নিত্য ভোগান্তি অভিযোগ নিরসনে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ। তারা এ জনপদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সৈয়দপুর উন্নয়ন সংস্থা, আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর, গরিব চিকিৎসা সেবা, ব্লাড ডোনেট ফাউন্ডেশন, শিক্ষা নগরী, এপেক্স ক্লাব, পুবালী স্কাউট, ভলান্টিয়ার অব সৈয়দপুর, অগ্রযাত্রা সমাজ সেবা, গোল্ড ব্লাড ডোনার ফাউন্ডেশন, সেতুবন্ধন, থিংকিং দ্য হিউমানিটি, সেফটি জোন, আলোর মিছিল, অঙ্কুর সংস্থা, সৈয়দপুর দর্পণ. সার্চ টিম, হৃদয়ে সৈয়দপুরদের একত্রিত করেন। সৃষ্টি করেন সমন্বিত সেবামূলক কমিটি ‘সৈয়দপুর ইউনাইটেড ভলান্টিয়ার এ্যাসোসিয়েশন। যা সংক্ষেপে ‘সুভা’ নাম দিয়ে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস এম গোলাম কিবরিয়া সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে রোগীদের সেবার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালটিতে ‘আর্তের সেবায় আমরা’ স্লোগানে শুরু করা হয় সুভার সেবার পথচলা। এতে ১৮টি সংগঠনের প্রায় ২ শত সদস্য ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ক্লান্তিহীনভাবে সেবা প্রদান করছেন। জনবল সঙ্কটের হাসপাতালে চিত্রপট পাল্টে গেছে। তারা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র কিংবা রোগ নির্ণয় না পারলেও সেবার সহায়তায় শতভাগ মানসিক ও দৈহিক সুস্থতা নিয়ে রোগীরা ঘরে ফিরছেন। সম্প্রতি হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, সৈয়দপুর উন্নয়ন সংস্থা নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ৬ যুবক। খয়েরি আর সাদা বর্ণের এ্যাপ্রন আবৃতে ছোটাছুটি। কেউ বহির্বিভাগে টিকিট কাউন্টারে আগতদের সারিবদ্ধ করছেন। জরুরী বিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ ভর্তি রোগীদের উপর থেকে নিচে প্যাথলজি, ইসিজি, এক্সরে পরীক্ষায় নিচে নামছেন। আবার কেউ বাইরে সতর্ক পাহারা দালাল কিংবা ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির অবাধ প্রবেশের। এ ব্যবস্থাপনায় দেখে হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডের আব্দুল মান্নান নামে রোগীর এক অভিভাবক জানান, আমি অভিভূত। আমি অপ্রস্তুতভাবে রোগী নিয়ে এখানে আসি। চিন্তায় ছিলাম। কি করব-কোথায় যাব? যুবকদের কারণে কোন বেগ পেতে হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজনীয় সব কিছুই তারা ব্যবস্থা করছে। হাসপাতালটির লেবার ওয়ার্ডের হামিদা (২১) নামে এক প্রসূতি জানান, আমরা গ্রাম থেকে এসেছি। যুবকরা ডাক্তারসহ সামগ্রিক ব্যবস্থা এমনকি তদারকি করছেন। গত এক মাস ধরে হাসপাতালটির আন্তঃ ও বহিঃবিভাগে চিকিৎসা গ্রহণকারীদের এমন সেবামূলক চিত্র বিরাজ করছে। এ হাসপাতালে কোন আগুন্তুকের আর সমস্যা হচ্ছে না। অনায়াসে তিনি পারিবারিক যতেœই চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। কথা হয় সৈয়দপুর উন্নয়ন সংস্থার সদস্য এজাজ আশরাফি, তাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, মতিউর রহমানের সঙ্গে। তারা জানান, মূলত আমরা সেবার ব্রত নিয়ে সংগঠন করছি। তাই আনন্দের সঙ্গে কাজ করছি। মানুষের কষ্ট কাছ থেকে অনুভব করায়, এ কাজে উৎসাহ পাচ্ছি। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক জুনায়েদ আল হাবিব জানান, আমরা সরকারের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত সংগঠন। এমন সেবামূলক কাজের সুযোগ পাওয়ায় সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তবে সঙ্কট যতই থাক, সেবকদের আন্তরিকতা থাকলে রোগীরা অর্ধেক সুস্থতা পায়। তাই এমন কর্মকা- যাতে নিয়মিত থাকে আমরা সেই দাবিই করছি। হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আরিফুল হক সোহেল বলেন, জনবল সঙ্কটে চিকিৎসা সেবায় নানা সমস্যা হয়। স্বেচ্ছাসেবকদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সহায়তা দানে ভাল ফলাফল পাচ্ছি। সুভার সভাপতি ও সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম গোলাম কিবরিয়া বলেন, সৈয়দপুরকে স্বপ্নের শহর বাস্তবায়নে অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো সুভার প্রথম লক্ষ্য। এরপর অন্যান্য বিষয়গুলো দেখা হবে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, সুভার এ কার্যক্রম দেশ সেবার একটি মাইলফলক। এর জন্য সকল সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এটা দেশ সেবার অনন্য একটি উদাহরণ। যাতে অন্যরা দেখে এ ধরনের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে এগিয়ে আসেন। -এম আর মহসিন, সৈয়দপুর থেকে
×