ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারী নির্যাতনের শেষ কোথায়?

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ১৯ এপ্রিল ২০১৯

নারী নির্যাতনের শেষ কোথায়?

ঘরে কিংবা বাইরে সব জায়গাতেই প্রতিনিয়ত বখাটেদের বেপরোয়া উৎপাতের শিকার হতে হচ্ছে নারীকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো পবিত্র স্থানেও এই চিত্র! তুচ্ছ কোন বিষয়কে কেন্দ্র করেই গুম, খুন, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজ করতেও পিছপা হচ্ছে না সমাজের মানুষ নামধারী কিছু নরপশু। এর থেকে মুক্তির উপায় কী? কী কী করলে সংহিসতার হাত থেকে মুক্তি পাবে নারী? অপরাধ প্রবণতা যেখানে মাত্রাহীন বেড়ে যায় সেখানে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন কতটুকুইবা সম্ভব! তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে দিনদিন। এতে করে সমাজের সচেতন নাগরিকেরা শুধু উদ্বিগ্নই নন, রীতিমতো শঙ্কিত। সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজিতে মাদ্রাসা ছাত্রী রাফা পৈশাচিক কর্মকাে র প্রতিবাদ করতে গিয়ে অমানুষদের আগুনে পুড়ে চলে যায় না ফেরার দেশে! এমন ভয়াবহ ঘটনা বিবেকবান প্রতিটা মানুষকে নাড়িয়ে তুলেছে। বিচার প্রক্রিয়া বিলম্ব হওয়াতে মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন শুধু বেড়েই চলছে। যার শিকার হচ্ছে, রাফি, তনু, মিতু, আফসানা, খাদিজা, পারুলিসহ তাদের মতো নাম না জানা আরও কত নারী! আর কত নির্যাতনের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেলে সমাজ তথা দেশকে বাঁচাতে সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে? বিপজ্জনক ও সমাজবিনাশী ওই পরিস্থিতি থেকে নারীরা মুক্তি পাবে না? এসব নিয়েই কথা বলেছেনÑ রুমান হাফিজ। আইনের কঠোর প্রয়োগের বিকল্প নেই জুরানা আজিজ সহকারী অধ্যাপক শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে ভুক্তভোগী নারীর পরিবারের সদস্যদের সমর্থনের অভাব এজন্য দায়ী। কঠিন পরিস্থিতির শিকার নারীর প্রতি পরিবারের অসমর্থন নারীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস করে। এতে নারীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদে সে বারবার দ্বিধাবোধ করে। ফলে নারী সহিংসতার ঘৃন্যতম ঘটনাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই গোপন করে এবং পরবর্তীতে সেগুলোর পুনরাবৃত্তিতে মাত্রাতিরিক্ত হারে সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। তাই যে কোন সহিংসতা রোধে পরিবারের অকুণ্ঠ সমর্থন অত্যাবশ্যক। এই সমর্থন নারীর বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্যে করবে এবং সে বুঝতে পারবে সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একা নয়। পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করা। বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের সমাজকে আচ্ছন্ন রেখেছে যা খুবই দুঃখজনক। এর থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প নেই।’ প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন রেহেনা আক্তার রেখা ক্যাম্পাস ডেস্ক ইনচার্জ, দৈনিক অধিকার ‘আমার মতে- নারীকে নারী নয়, মানুষ হিসেবে চিন্তা করা উচিত। অভিভাবকদের উচিত ছোটবেলা থেকে সন্তানদের ছেলেমেয়ে হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে চিন্তা করার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। এছাড়া, নারীদের সহিংসতা প্রতিরোধে সবার আগে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে শুধু সরকার নয়, সরকারের পাশাপাশি সর্বশ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এখন এমন একটি সময় যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় অল্প দিনের পরিচয়ের বন্ধুকে অনেক বেশি বিশ্বাস করে তার সব মনের কথা শেয়ার করছে। এর ফলে তরুণ প্রজন্মের এক বড় অংশ, বিশেষ করে নারীরা প্রতারক চক্রের ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে নারীকে সোশাল মিডিয়া ব্যবহারে খুব বেশি সচেতনা অবলম্বন করতে হবে। পুরুষশাসিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। এখনো অনেক শিক্ষিত পুরুষ মনে করেন, নারী মানে ঘরে রান্না করবে, সন্তান লালন করবে। ঘর-সংসার করবে, কিন্তু এর বাইরেও যে প্রতিটি নারীর নিজস্ব একটা জগৎ আছে সেটা সে মানতে নারাজ। তাই অনেক শিক্ষিত নারী চাকরি করতে চাইলে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়। আর তাই যতদিন নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে না ততদিন সহিংস আচরণ থেকে নারীরা মুক্তি পাবে না।’ রুখে দাঁড়াতে হবে সবাইকে নাহিদ নেওয়াজ শিক্ষার্থী : সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ‘যে কোন নারী নির্যাতন ও হয়রানির জন্য দ্রুত বিচার আইন ও তা কার্যকর করা অতি আবশ্যক। আইনি প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু বিচার যেমন অপরাধীকে দুর্বল করে তেমন ভিকটিমসহ সকলকে সাহসী ও আশাবাদী করে। তাই এখন শুধু মানববন্ধন নয়, ব্যানার ফেস্টুন নয় প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দাঁড়িয়ে নির্বিকার তাকিয়ে না থেকে কিংবা ভিডিও না করে, হয়রানির স্বীকার একজনের পাশে তার চারপাশের সবাইকে তাৎক্ষণিক রুখে দাঁড়াতে হবে ও জরুরি সেবার জন্য নিজ উদ্যোগে কল করে জরুরী নিরাপত্তা কর্মীদের সহযোগিতায় অপরাধীকে আইনের বিচারাধীন করতে হবে। নারীদের লজ্জা ও ভয়কে জয় করে সকলের সম্মুখে যে কোন হয়রানির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হবে। নিজের সচেতনতা ও নিরাপত্তার স্বার্থে সকলের জন্য সহোযোগিতার হাত প্রশস্ত করতে হবে। পরস্পর ভালবাসা শ্রদ্ধাবোধ সহযোগিতা ও সচেতনতাই নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে বড় হাতিয়ার।’
×