ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক বালকের কালবৈশাখী -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৯

এক বালকের কালবৈশাখী -স্বদেশ রায়

কাল বোশেখি বাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে গেছে সমুদ্রবাহী নদী। উত্তর থেকে দক্ষিণবাহী। ওই নদীর দক্ষিণ দিক কালো মেঘে ভরে গিয়েছিল এক বৈশাখের বিকেল। ওই ছোট বয়সে বড় অন্য রকম লেগেছিল। কারণ, ওই আমার নদীর ওপর প্রথম কাল বৈশাখীর মেঘ দেখা। যদিও বাড়ির পাশের নদী। তার পরেও নদীর পাশে যাওয়া ছিল এক দম নিষিদ্ধ। কারণ, নদীতে কুমির ছিল। তারা ছাগল ও গরুর বাছুর নিয়ে যেত। গল্প শুনেছি, কোন একদিন নাকি একটি ছোট ছেলেকেও নিয়ে গিয়েছিল। তাই বাড়ির পুলিন মামার হাত ধরে ছাড়া নদীর পাশে যাওয়ার অন্য কোন পথ ছিল না। আর সেটা ঘটত কালে ভদ্রে। মূলত পাঁচিলের ভেতরই ছিল সব জগত। যেদিন ওই নদীর ওপর মেঘ দেখলাম, সেদিন সারাদিন ছিল খুব গরম। বিকেলে মায়ের সঙ্গেই নদীর ধারে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। নদীতে জোয়ার ভরা ছিল না ভাটার টান ছিল এখন ঠিক মনে নেই। তবে নদীতে একটা জলের শব্দ ছিল তা এখনও মনে আছে। মায়ের হাত ধরেই ছিলাম, হঠাৎ মা বললেন, ‘কাল বোশেখি’ আসছে। চল বাড়ি যাই। মার মুখের দিকে আশ্চর্যভাবে তাকিয়ে বলেছিলাম, মা কাল বোশেখি কই? মা বললেন, ওই দেখো, নদীর ওপারে কালো মেঘ জমেছে। তাকিয়ে মনে হলো দূরে নদীর জল ছুঁয়ে যেন মেঘগুলো আকাশে উঠে গেছে। ঘন কালো মেঘ। মেঘের ছায়ায় ততক্ষণে নদীর জল ছাই রঙা হয়ে এসেছে। নদীর ওপারের গাছগুলোর যেন মাথা ছুঁয়ে যাচ্ছে মেঘ। আর সবুজ গাছগুলো শুধু গাঢ় সবুজ নয় কেমন যেন কালো কালো ছায়া মূর্তি হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। নদীর জলে ছল ছল শব্দ থাকলেও মেঘের সঙ্গে তারাও নীরব হতে চলেছে। জীবনে প্রথম দেখা নতুন এক ছবি। মায়ের সঙ্গে দেখা সিনেমার পর্দার ছবির মতোই মনে হচ্ছিল। বড় ভাল লেগেছিল। মনে হয়েছিল মাকে বলি, মা আরেকটু থাকি না এখানে। সাহসে কুলায়নি। কারণ, ততক্ষণে জ্যাঠামহাশয় ও বাবা হাওয়া খাওয়া বন্ধ করে বাড়ির দিকে ফিরতে শুরু করেছেন। সেই মেঘের কথাটুকুই মনে আছে। মনে আছে বললে ভুল হবে। আজও মনে গেঁথে আছে। মা উঠতে বললেও মায়ের হাত ধরে আরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম সে মেঘের দিকে। তারপরে হয়ত মায়ের হাত ধরেই মেঘের ছায়ায় বাড়ি ফিরেছিলাম। মনে নেই কীভাবে সেদিন বাড়ির পাঁচিলের ভেতর ঢুকেছিলাম। সেদিনের স্মৃতি বলতে কেবলই নদীর ওপারের আকাশ জোড়া সেই মেঘ। রাতে মায়ের সেই কাল বোশেখি কেমন হয়েছিল তা আজ আর মনে করতে পারি না। কিন্তু ওই মেঘটা এখনও একটা শিশুর চোখে ভাসে। এর পরে অনেক কালবোশেখি পার হয়ে গেছে। এমনকি যে মাতলা নদীতে ক্যানিং সাহেব সিঙ্গাপুরের মতো বন্দর গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন ওই মাতাল মাতলা নদীতেও কাল বৈশাখীতে পড়েছি। মেঘনার বুকেও স্টিমারে কাল বৈশাখীর দমকা হাওয়ায় দুলেছি। প্রচ- কাল বৈশাখীর ঝড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজেছি শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন দিনে। এ সব অবশ্য পরের কথা। তবে জীবনে কৈশোরের আগে কখনও মনে হয়নি কাল বৈশাখীর স্মৃতিগুলো মনে রাখতে হবে। বরং বড়জোর মায়ের মুখের ‘কাল বোশেখী’ ও নজরুলের ‘কাল বসে কি’ একই রকম মনে হতো। তাই মাঝে মাঝে বেসুরো গলায় গেয়েছি, ওরে ও কাল বোশেখি, কাটাবি কাল বসে কি? এর ভেতর তরুণ বেলায় হঠাৎ একদিন কোন একটা শারদীয় পত্রিকায় আমার প্রিয় লেখক সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের একটি কাল বৈশাখীর স্মৃতি পড়ি। তিনি তার বাবার সঙ্গে গিয়েছিলেন গঞ্জের বাজারে হাল খাতায়। হালখাতা সেরে মিষ্টির হাঁড়িটি ব্যাগে নিয়ে ফেরার পথে রাঢ়ের বিলে পড়েন কাল বৈশাখীর কবলে। প্রচ- বৃষ্টি আর শিলাপাতে জলে ভরে যায় মিষ্টির হাঁড়ি। তারপরে বাপ ছেলেতে অন্ধকারে পথ হাতড়ে হাতড়ে ফিরে আসেন বাড়িতে। বড় চমৎকার সেই অন্ধকারের পথ চলার বর্ণনা। বাড়িতে তখন তার মায়ের উদ্বিগ্ন গলা! অপূর্ব সে লেখা। না, আর যাই হোক, সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের মতো আমি কখনই লিখতে পারব না। কাল বৈশাখী তো না জানিয়েই মানুষের জীবনে আসে, হঠাৎ করে ঘটায় চলমান সময়ের ছন্দপতন। এই স্মৃতিগুলো মনে রাখা তো মন্দ নয়। আর স্মৃতিকে কি মনে রাখতে হয়, স্মৃতিগুলো মনের পরতে পরতে এমনিই সাজানো থাকে। কেবল একটু পিছনে ফিরলেই তো অনেক স্মৃতি মনে পড়ে। সেকি ছিল সাংবাদিকতার শুরু! জ্যাঠাত ভাই নিথর দা ও আমি সম্ভবত দু’জনই গ্রীষ্মের ছুটিতে। সেদিন সন্ধ্যার পরে প্রচ- কাল বৈশাখী বয়ে যায়। সারা বাড়ি যেন ওলট পালট করে। টিনের চালগুলোয় ছিল শিলাবৃষ্টির এক দোর্দ- প্রতাপ। বড় জ্যাঠামহাশয়ের এক তলা ছাদ শিলায় ভরে যায় সে রাতে। ভোর হতেই দেখি তুষ আর মাটির গর্ত মিলিয়ে কেমন একটা বরফ সংরক্ষণের জায়গা করে বাড়ির কাজের মামা ও দাদারা শিলা রেখে দিয়েছে আমাদের বাচ্চাদের দেখানোর জন্য। আর ভোর হতেই উঠে দেখি বাড়ির উঠান, ফুল বাগান সবই ভরে গেছে গাছের পাতায়, ভাঙ্গা ডালে আর পাখির বাসায়। বড় কষ্ট লাগল বাড়ির সামনের নারিকেল গাছগুলো থেকে অনেকগুলো বকের বাসা ভেঙ্গে পড়েছে মাটিতে, তাল গাছ থেকে ছিঁড়ে পড়েছে বাবুইয়ের বাসা। বাড়ির কুলো পুরোহিত যাকে ঠাকুরদা বলেই ডাকতাম। বড় হয়ে বুঝেছি, তার ভেতর রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরদা বা দাদা ঠাকুর চরিত্রগুলোর একটা ছায়া ছিল। এই ঠাকুরদা কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে কয়েকটি পা ভেঙ্গে যাওয়া পাখি বাঁচাতে চেষ্টা করছেন। এ দেখে জ্যাঠাত ভাই নিথর দাকে ডেকে বলি, রাস্তায় যাবে? সেও রাজি হয়ে যায়। বাবার একটা ডাক্তারি প্যাড ও নিজের ফাউনটেন পেন নিয়ে দুই ভাই কাউকে কিছু না বলে সেদিন বাড়ি থেকে রাস্তা ধরে অনেক দূর গিয়েছিলাম। আর পথে পথে বাবার ডাক্তারি প্যাডের পাতায় লিখেছিলাম ক’টা মরা পাখি দেখলাম, কটা ডানা ভাঙ্গা পাখি দেখলাম আর কতগুলো গাছ পড়ে গেছে, ঘরের চালা উড়ে গেছে কটা। কাগজে এগুলো ঠিকঠাক মতো লিখে নিয়ে দুই ভাই বাড়িতে ফিরি। বাড়িতে ফিরে নিথর দাকে বলি তুমি রেডিও তো খবর পড়, আমি খবর লিখে দেই। তখনও বাড়িতে আকাশাবাণী শুনত বেশি। দুই ভাই লুকিয়ে জ্যাঠামহাশয়ের ঘরে ঢুকি। তার পরে আমার লেখা খবর বড় কাঠের রেডিওটির পেছনে মুখ লাগিয়ে নিথর দা সেদিন পড়ে। রেডিওটা ততদিনে পরিত্যক্ত। কারণ, বড় দা ইতোমধ্যে ফিলিপস ট্রানজিস্টর কিনেছেন, জ্যাঠামহাশয়ও কিনেছেন। তাই সেদিন সবার চোখ লুকিয়ে নিথর দা আমার লেখা খবর ওই পরিত্যক্ত কাঠের বক্সের রেডিওর পেছনে মুখ লাগিয়ে পড়তে শুরু করেন। ‘আকাশবাণী কলকাতা, খবর পড়ছি নিথর রায়। গত রাতের ঝড়ে আমাদের বাড়িতে একটি শালিখ ও রাস্তায় দুটি শালিখ মারা গেছে। পা ভেঙ্গে গেছে তিনটির। ফুল বাগান পাতায় ভরে গেছে। রমা কাকু পাতা পরিষ্কার করছে।’ এমনি আরও কয়েক লাইন ছিল, ঠিক মনে নেই। আমাদের ওই খবরে সেদিন যা স্থান পায়নি বা সেদিন বুঝিনি যে ওই গন্ধটুকু হতে পারত খবরের অংশ। সেদিন দুই ভাই সকালের নতুন আলোয় রাস্তায় বেরিয়েই পেয়েছিলাম মাটিতে একটা নতুন গন্ধ। ওই গন্ধ আমাদের ফুল বাগানের পাশের মাটিতে ছিল। রাতে কাল বৈশাখীর ঝড়ে আর জলে ভিজে মাটি কেমন যেন তাজা হয়েছিল। সকালের আলোয় মাটি, বাতাস আর আলো মিলে কেমন যেন একটা আলাদা আবহাওয়া। আর তার ভেতর মাটির বুক থেকে উঠে আসছিল আলাদা এক গন্ধ। ওই গন্ধকে খবরে নেয়ার কথা মনেও পড়েনি। আর প্রকাশ করতে পারতাম কিনা জানিনে। তবে ওই ছোট বেলার ভাষা দিয়ে নিশ্চয়ই এটুকু লিখতে পারতাম, আমাদের বাড়ির মাটিতে আজ একটা নতুন গন্ধ। মাটির ওই গন্ধটা ভোরের বাতাস চলে যাওয়া আর রোদের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। খবর পড়া শেষে একটা সময়ে এসে রমা কাকুর ফুল বাগান পরিচর্যা দেখছিলাম তখন আর ওই গন্ধটি পাইনি তা এখনো মনে আছে। তবে ওই গন্ধটা ইচ্ছে করলে আজও মনে করতে পারি। বাস্তবে গন্ধটা সঙ্গে আছে, কাল বৈশাখী এখনও আছে তবে সেদিনের সেই কাল বৈশাখীতে বিধ্বস্ত সকাল কি আর ফিরে পাওয়া যাবে! সব কিছুকে আনন্দময় করতে হয় যেমন ফিরে পাওয়া যাবে কি জ্যাঠামহাশয় ও বাবার সঙ্গে পানসি নিয়ে কাল বৈশাখীতে পড়া সেই শেষ বৈশাখের বিকেলটি। সেদিন ছিল সাপ্তাহিক হাটবার। বিশাল মোকাম। হাজার হাজার লোক আসে। নদী-নালার এলাকা। আমাদের বাড়ি থেকেও অনেকগুলো নৌকা যেত বাজারে। আর সেদিন জ্যাঠামহাশয় ও বাবা সাজিয়ে নিয়েছিলেন পানসি খানা। সঙ্গে আরও কে একজন যেন ছিলেন, আজ আর মনে করতে পারি না। বাজার শেষে বিকেলে বাবা ও জ্যাঠামহাশয়ের মাঝখানে বসে একখানা বৌদ্ধ জাতকের বই নিয়ে, জাতকের গল্প পড়তে পড়তে বাড়ি ফিরছি। পানসি খানার আগে পিছে চলছে বাড়ির অনেক ছোট-বড় নৌকা যা বাজার সদাইতে ভর্তি। আকাশে কখন মেঘ জমেছে তা সেদিন দেখিনি। কারণ, বৌদ্ধ তখন বানর জাতক হয়ে একের পরে একটা অভিনব ঘটনা ঘটাচ্ছেন। বানর জাতকের ওই কীর্তিতে আমি একেবারে ডুবে আছি। হঠাৎ পানসির ছাদে একটা ঠা-া বাতাস এসে আমার শরীরে লাগে। গণেশ দা অনেক শক্ত-সমর্থ মানুষ। আমাকে যেন বানর জাতকের বাচ্চার মতো উঁচু করে পানসির ভেতর নিয়ে গেলেন। পিছে পিছে বাবা ও জ্যাঠামহাশয় এসে ঢুকলেন। এর ভেতর কে যেন বললেন, বড় কাল বৈশাখী আসছে। পানসির ভেতরে থাকা ঠিক নয়। গণেশ দা আমাকে নিয়ে বাবা ও জ্যাঠা মহাশয়ের মাঝখানে শক্ত করে বসলেন। সম্ভত অতুল দা একটা ছাতা নিয়ে বাবা ও জ্যাঠা মহাশয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এর পরে একটি ঝড়ের ধাক্কা কেবল মনে আছে। ছোট্ট নদীটির কূল ঘেষে থাকা আমাদের পানসিটি এক ধাক্কায় বিলের পানিতে উঠে কাৎ হয়ে আটকে পড়ে। অতুলদার হাতের ছাতা উড়ে গেছে। গণেশ দা আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছেন। মাথার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে বৃষ্টি। আর জীবনে ওই প্রথম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আকাশে বিজলী চমকাতে দেখলাম। কতক্ষণ ঝড় ছিল তা মনে নেই। কাৎ হয়ে মাটিতে আটকে যাওয়া পানসির গলুইয়ের দিকে সকলে বসে আছি। গণেশ দাদার শক্ত হাতে বানর জাতক যেমন বেদের কাছে আটকা থাকে আমি তেমনি আটকে আছি। এক সময়ে মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় থেমে যায়। থামে না মুষল ধারার বৃষ্টি আর মাঝে মাঝে হাওয়ার দোলা। আমাদের সওদা বোঝাই অনেকগুলো নৌকা পানসির পেছনে ও সামনে কাৎ হয়ে পড়ে আছে। অনেকগুলো পানিতে ডুবে গেছে। বাবা বললেন, ভাগ্য ভাল পানসিটা প্রথম ধাক্কায় বিলের জলে উঠে গিয়েছিল। তা না হলে ঝড়ের যে গতি ছিল ওকে নিয়ে তো আজ বিপদে পড়তে হতো। গণেশ দা বাবাকে বললেন, কী বলেন বাবু, ছোড়দাকে নিয়ে কোন আসুবিধা হতো না। আমি ছিলাম না! এইটুকু কাল বৈশাখী কি আমাকে কাবু করতে পারে! বাবা ও গণেশ দা যখন কথা বলছেন ততক্ষণে ছোট নদীটাতে ভাটার টান এসেছে। আমাদের সওদার নৌকার মতো অনেক নৌকা সামনে ও পেছনে ডুবে গেছে। শেষ বৈশাখের হাট। সবার নৌকাতে ছিল পাকা আমের ঝুড়ি। ভাটার টানে পানসির গা ঘেঁষে ভেসে যাচ্ছিল বেশ কয়েকটি পাকা আম ¯্রােতে পাক খেতে খেতে। জ্যাঠামহাশয় হাসি মুখে পানি থেকে কীভাবে দুটি আম তুলে ছিলেন জানিনা। একটি আমার হাতে দিয়ে নিজে অন্যটির খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে আমাকেও আমটা খেতে বলেন। জ্যাঠা মহাশয়ের দিকে কিছুটা অবাক চোখে তাকাতেই তিনি বললেন, জীবনে অনেক দিন নানা বিপদে আপদে পড়বে। তবে যাই ঘটুক না কেন, জীবনের সব সময়কে আনন্দময় করার চেষ্টা করো। ওই ছোট বেলায় জ্যাঠা মহাশয়ের কথার অর্থ সবটুকু বুঝিনি, তবে বৃষ্টির ভেতর বসে একটি আম খেতে খারাপ লাগেনি, খারাপ লেগেছিল যখন তাকিয়ে দেখি আমার জাতকের গল্পের বইটি বিলের পানিতে ভাসছে। আমরা হয়ত সেদিন কাল বৈশাখীতে পড়েও জ্যাঠা মহাশয়ের কারণে আনন্দময় একটা স্মৃতি সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম। কিন্তু যে সারা সপ্তাহের রোজগার দিয়ে সওদা কিনে ফিরছিল, সেকি সব হারিয়ে আনন্দময় করতে পেরেছিল, না অনেক অন্ধকারে একা একা কোন একটি কুড়ে ঘরের সামনে বাতি নেভা অন্ধকারে অসহায় এক মানুষ দাঁড়িয়েছিল? সেদিন গভীর রাতে বাড়ি ফিরে ছিলাম। আকাশের তারা দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম পানসির ছাদে তাও জানিনে। তবে সেদিন গল্পের ফাঁকে বাবা বা জ্যাঠা মহাশয় কে যেন বলেছিলেন, কাল বৈশাখী আমাদের সঙ্গে থাকবেই। প্রতি চৈত্র ও বৈশাখে আসবেই। মৌসুমী বায়ুর ফলে এটা হয়। আরেকটু বড় হয়ে জানতে পারি, কাল বৈশাখী বাঙালীর যেন এক নিতান্ত বেসুরো আত্মীয়। মৌসুম বায়ুর ফলে এটা বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ আর উত্তর-পূর্ব ভারতে হয়। এসব জায়গাতেই বাঙালীর বাস। বাঙালীর চরিত্রের ভেতর তাই হয়ত খুঁজে পাওয়া যায় কাল বৈশাখীকে। হঠাৎ তার জীবনে ওঠে ঝড়ো হাওয়া।
×