ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে অগ্নিঝুঁকি

বরিশাল নগরীতে ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

বরিশাল নগরীতে ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ নগরীর ঝুলন্ত বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল ক্রমশই সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। বিশেষ করে মাথার ওপরের এই ঝুলন্ত তার থেকে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে শহরের বিবিরপুকুর পাড় এলাকায় ঝুলন্ত জটাতার থেকে আগুনের সূত্রপাত নগরবাসীকে বেশিমাত্রায় আতঙ্কিত করেছে। ফলে পরবর্তীতে তারের জঞ্জাল থেকে আরও বড় ধরনের অগ্নিকা-ের আশঙ্কা রয়েছে। অথচ বিষয়টি সম্পর্কে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ওয়াকিবহাল থাকলেও প্রতিরোধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে দিন দিন জটাতারের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ করেন সচেতন নগরবাসী। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্যাটেলাইট টিভি ও ইন্টারনেটের তারের জঞ্জালের কারণে শহরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভবনের অংশবিশেষ আড়ালে পরছে। এমনকি সরকারী অনেক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডও ঢেকে গেছে। বিশেষ করে নগরীর সদর রোড, নতুন বাজার, নথুল্লাবাদ, বাজার রোড, গীর্জা মহল্লা, ফজলুল হক এ্যাভিনিউ ও চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার চিত্র এমনটি। অনেকস্থানে আবার তারের ভারে বৈদ্যুতিক খুঁটি বেঁকে যাওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সচেতন নগরবাসীর মতে, যত্রতত্র ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল শহরের সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে আতঙ্কে ভোগাচ্ছে। অবশ্য বরিশাল ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সও ঝুলন্ত এই জটাতার থেকে বড় ধরনের অগ্নিঝুঁকির আভাস দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, গত ১৪ মার্চ বিবির পুকুর পাড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে যে অগ্নিকা- সংঘটিত হয়েছে সেটি ঝুলন্ত তার থেকে। ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ইউসুফ আলী জানান, বিষয়টি বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। এমনকি পরবর্তীতে দুর্ঘটনারোধে তারের জঞ্জাল অপসারণেও উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। বরিশাল সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, স্যাটেলাইট টিভি ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডারদের ঝুলন্ত তার শুধুমাত্র শহরের সৌন্দর্যই নষ্ট করছে না, নানা ধরনের দুর্ঘটনার জন্যও দায়ী। এসব তারের জঞ্জাল বিদ্যুতের খুঁটিগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। যত্রতত্র এসব তার ছিড়ে পরে থাকছে। ভবনের অগ্নিকা-ের জন্যও এসব কেবল তার দায়ী। ঝুলন্ত তারের জন্য ভবনের অগ্নিকা-ের সময় উদ্ধার কাজেও ব্যাঘাত ঘটে। তারের জঞ্জাল অপসারণে তাদের সংগঠন খুব শীঘ্রই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডরদের সংগঠনকে লিখিত আবেদন দেবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডরদের কোন সংগঠন নেই। ফলে যে যার মতো করে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। তবে ঝুঁকির বিষয়টি একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠান মালিক স্বীকার করলেও বলছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করে আসছি। এমনকি বছর শেষে একটি বড় অংশের রাজস্বও দিচ্ছি। সরকার বিকল্প কোন ব্যবস্থা না করে দেয়ায় বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে তার টাঙ্গাতে তারা বাধ্য হচ্ছেন। তাছাড়া এ বিষয়ে সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান তাদের কোন দিকনির্দেশনা দেয়নি। এমনকি বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষও রয়েছে নিশ্চুপ। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিও) মোঃ খাইরুল ইসলাম বলেন, তারের জঞ্জাল থেকে বিবির পুকুর পাড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আগুন ধরার পরে বিষয়টি নিয়ে তাদের ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তারের জঞ্জাল অপসারণে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠান মালিকদের নিয়ে বসে জটাতার অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
×