ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনা সভা

অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ১১:৫১, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যু হ্রাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি লাভ হলেও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে অসুস্থ মানুষদের ৬১ শতাংশই অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। দেশের ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ৯৭ শতাংশের কমপক্ষে একটি অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি আছে। এসব রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। তাই অনেক সময় অনেক অসংক্রামক রোগে আক্রান্তকে চিকিৎসার অভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হয়। গত ছয় বছরে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে সকল রোগে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু সংখ্যার শতকরা ৬৭ ভাগের জন্য দায়ী ছিল অসংক্রামক রোগের ছোবল। গত ২০১১ সালে এই হার ছিল ৫২ শতাংশ। জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ উপলক্ষে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন-কমিউনিক্যাবল ডিজিজ (এনসিডি) প্রোগাম এবং দৈনিক ভোরের কাগজ এর যৌথ উদ্যোগে ‘এনসিডি চ্যালেঞ্জ : হেলথ ইন অল পলিসি ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ মুরাদ হাসান এমপি, স্বাস্থ্য সচিব (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ) মোঃ আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এনসিডি প্রোগাম এর লাইন ডিরেক্টর নূর মোহাম্মদ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আফজালুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খালেদা ইসলাম প্রমুখ। আলোচনা সভায় সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের উপর জোর দিয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন সংক্রামক রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও বেড়েছে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারীভাবেও নানা কর্মসূচী গ্রহণের পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমাতে হবে। অসংক্রামক রোগের ব্যাপকতা ও গুরুত্বের ওপর নীতিনির্ধারক এবং পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা দরকার। রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন সেক্টরকে কেন্দ্র করে একটি সমন্বিত পদ্ধতির প্রবর্তন করতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় জনশক্তি ও কাঠামোগত উন্নয়ন, ঝুঁকির কারণগুলো সংশোধন ও নিয়ন্ত্রণ, রোগ শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সকল পর্যায় শক্তিশালী করতে হবে। বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অবস্থা তুলে ধরে আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে প্রায় ২ কোটি লোক কোন না কোন ধরনের কিডনি রোগে ভুগছে। আক্রান্তের শতকরা ৭৫ ভাগ রোগী কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে এ মরণব্যাধির অস্তিত্ব ধরতে পারেন না। কিডনি বিকল রোগীর চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে, মাত্র শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ লোকের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য আছে। দেশে প্রতি বছর ২৫ হাজার লোকের কিডনি বিভিন্ন কারণে হঠাৎ করে অকেজো হয়ে যায়। প্রতি বছর কিডনিজনিত রোগে প্রায় ৪০ হাজার লোক মারা যায়। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস এখন মহামারী হয়ে উঠছে। বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৪১ কোটি। দেশে প্রায় ৭১ লাখ, বছরে বাড়ছে আরও ১ লাখ রোগী। শুধু ডায়াবেটিসের কারণে বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হয়। বিশ্বের সর্বত্র বয়সী মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ও ওই সব রোগের আক্রমণের পথ প্রশস্ত করে ডায়াবেটিস।
×