ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে প্রতিদিন কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে প্রতিদিন কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে

তৌহিদ আক্তার পান্না, ঈশ্বরদী ॥ লোকবল সঙ্কট, স্টেশন বন্ধ, ট্রেনের ক্রসিং ও প্রিসিডেন্সে অতিরিক্ত সময় ব্যয়, বন্ধ স্টেশন এলাকা অতিক্রমের সময় সতর্কতার জন্য অতিরিক্ত সময় ব্যয়সহ নানা কারণে রেলওয়ের পাকশী বিভাগসহ পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী সকল ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এতে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব আয় কম হচ্ছে এবং যাত্রী সাধারণের মধ্যে অসন্তোষ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। রেলওয়ের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে পশ্চিমাঞ্চলের সকল বিভাগের কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের দেয়া তথ্যে এসব জানা গেছে। সূত্র মতে, পাকশী ও লালমনিরহাট বিভাগে মোট ১শ ৮২টি অপারেটিং স্টেশনের মধ্যে ৭২টি স্টেশন বন্ধ থাকায় বিভিন্ন ট্রেনের জন্য ক্রসিং ও প্রিসিডেন্সে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। এছাড়া বন্ধ স্টেশন এলাকা সতর্কতার সঙ্গে অতিক্রম করার জন্য প্রতিটি ট্রেনের ২ মিনিট করে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। পঞ্চগড়-ঈশ্বরদী-ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে চলাচলকারী একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন ১৮টি বন্ধ স্টেশন অতিক্রম করে। এতে ট্রেন দুটির ৩৬ মিনিট অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। প্রত্যেকটি স্টেশন বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পাকশী বিভাগের জামতৈল থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ২শ ২৮ কিমি রেলপথে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ১শ কিলোমিটারের পরিবর্তে ৮৫ কিমি ট্রেন চালানোর গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ জারি করা হয়। পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী/২ গত ৬ জানুয়ারি এ আদেশ জারি করার পর থেকে উক্ত সেকশনে চলাচলকারী প্রত্যেকটি ট্রেনের ৪৫ মিনিট করে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়ে আসছে। এ অবস্থা এখনও বহাল রয়েছে। একই বিভাগের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি স্টেশনের সিএসএল কম থাকায় উক্ত স্টেশন দুটিতে আন্তঃনগর ট্রেনের ক্রসিং ও প্রিসিডেন্স সুবিধা পাওয়া যায় না। এছাড়া উক্ত স্টেশনে সিবিআই সিস্টেম, আংশিক কার্যকর থাকায় স্টেশন অতিক্রমকারী প্রতিটি ট্রেনে মৌচাক ও মির্জাপুর স্টেশন থেকে পিএলসি দিতে হয়। যে কারণে প্রত্যেকটি ট্রেন ৫ মিনিট করে অতিরিক্ত বিলম্বিত হয়। শুধু তাই নয়, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অধিকাংশ সেকশনে লাইন ক্যাপাসিটির অতিরিক্ত ট্রেন চলাচল করছে। যে কারনে কোন ট্রেন পাথ হারালে সেকশন বাঞ্চ হয়ে অন্যান্য ট্রেনকে বিলম্বিত করে। যেমন জামতৈল-জয়দেবপুর সেকশনের লাইন ক্যাপাসিটি ২২টি হলেও ওই সেকশনে দৈনিক শুধু যাত্রীবাহী ৩২টি ট্রেন চলাচল করছে। যে কারণে ট্রেন পাঞ্চুয়ালিটির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ফলে পাঞ্চুয়ালিটি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। চলতি বছরের শুধু জানুয়ারি মাসেই পশ্চিমাঞ্চলের পাকশী বিভাগের ৫৩, লালমনিরহাট বিভাগে ৯৭টি ট্রেন মিলে ১শ ৫০টি আন্তঃনগর ট্রেনসহ মোট ৩শ ২৮টি ট্রেন লোকোলসের কারণে মোট ৪২শ ৬৭ মিনিট বিলম্বিত হয় যা সময়ানুবর্তিতা হ্রাসের অন্যতম কারণ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসেও একইভাবে সকল ট্রেনগুলো বিলম্বিত হয়ে সময়ানুবর্তিতা হ্রাসের সৃষ্টি করে। লালমনিরহাট বিভাগের ৪৭টি আন্তঃনগর ট্রেনসহ মোট ১শ ১৮টি ট্রেন ইঞ্জিনের অভাবে নির্দিষ্ট সময়ের পরে ছাড়ায় ৭শ ৭৪ মিনিট বিলম্বিত হয়। আবার খুলনা স্টেশন রিমডেলিং করা হলেও সিগন্যালিং সিস্টেম ইন্টারলকড হতে নন-ইন্টারলকিং-এ রূপান্তর করা হয়েছে। যে কারণে উক্ত স্টেশনে বর্তমানে ২৬টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ ও সময় সাপেক্ষ অবস্থায় ম্যানুয়ালি অপারেট করতে হচ্ছে। ফলে স্টেশনে ট্রেন গ্রহণ ও প্রেরণে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে এবং কোন ট্রেন বিলম্বে আসলে কাক্সিক্ষত মাত্রায় সেসব ট্রেনের সময় সাশ্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। জানুয়ারি থেকে অদ্যাবধি এ অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। শুধু জানুয়ারি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় ১৬টি ট্রেন বিলম্বিত হয়। এ কারণে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনের পূর্ব পর্যন্ত আনপাঞ্চুয়াল হিসাবে ট্রেন চলাচল করে। এতেও ট্রেনের সময়ানুবর্তিতায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। পাকশী ও লালমনিরহাট বিভাগের উভয় পথে চিত্রা, সুন্দরবন ৮শ ২৪ কিমি রুপসা, সীমান্ত ৮শ ৯২ কিমি নীলসাগর ৮শ ৫৬ কিমি দ্রুতযান ১ হাজার ১২ কিমি লালমনি এক্সপ্রেস ৮শ ৯২ কিমি রংপুর এক্সপ্রেস ৮শ ৯৪ কিমি দূরত্ব এক রেখে এবং বন্ধ স্টেশন ও ইঞ্জিনিয়ারিং গতি নিয়ন্ত্রণে অধিকাংশ সময় পাঞ্চুয়ালিটি হারায়। এ সমস্ত কারণে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হচ্ছে। যাত্রী সাধারণের মধ্যে অসন্তোষ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। রেলওয়ের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে পশ্চিমাঞ্চলের সকল বিভাগের কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির মাধ্যমে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং সকল বিভাগের কর্মকর্তাদের স্বাভাবিক পরিবেশে দায়িত্ব পালনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সময়ানুবর্তিতা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত করতে হলে জরুরী ভিত্তিতে অস্থায়ী গতিনিয়ন্ত্রণাদেশ প্রত্যাহার, নতুন স্টেশন মাস্টার ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ, স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যান পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর, ঈশ্বরদী-পঞ্চগড়, ঈশ্বরদী-গোপালগঞ্জ পর্যন্ত ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ, ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনকে আধুনিকায়ন এবং সিগনালিং ব্যবস্থার মানোন্নয়ন উল্লেখযোগ্য। ভুক্তভোগী রেলওয়ের উন্নয়নে বিশ্বাসী মহলের মতে, বর্তমান রেলপথমন্ত্রী এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে রেলওয়ের উন্নয়ন এবং সমস্যা দূরীকরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মহলটি রেলমন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ করেছেন।
×