ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানি হচ্ছে বগুড়ার লাল মরিচ বিশ্ব জুড়ে নন্দিত

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

রফতানি হচ্ছে বগুড়ার লাল মরিচ বিশ্ব জুড়ে নন্দিত

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ায় যমুনার ঘাট এখন লাল মরিচের ঘাট। বগুড়ার লাল মরিচের ঝাল এখন বিশ^জুড়ে নন্দিত। রান্নায় অন্য অঞ্চলের মরিচের দরকার যেখানে ৫ থেকে ৬টি সেখানে বগুড়ার একটি মরিচই যথেষ্ট। হালে বগুড়ার মরিচ এখন যন্ত্রে গুঁড়া হয়ে প্যাকেটজাত হয়েছে। কনজ্যুমার গুডসের কোম্পানিগুলোর কাছে বগুড়ার মরিচের কদর অনেক বেশি। এতে ব্যবসায়িক সাফল্য এসেছে। একই কারণে রফতানিকারকদের আগ্রহ বেড়েছে। বগুড়ার সবুজ কাঁচা মরিচ ও লাল শুকনো মরিচ দুইই রফতানি তালিকায় বড় আসন করে নিয়েছে। রফতানিকারক সৈয়দ আহমেদ কিরন জানালেন, বগুড়ার অনেক পণ্য বিদেশ বিভূঁইয়ে সুনাম কুড়িয়েছে। বগুড়ার দই ভারতে যাচ্ছে। বিদেশে বাঙালী অধ্যুষিত এলাকায় মরিচের কথা উঠলেই বগুড়ার মরিচের ঝালের চাহিদা প্রথমে আসে, যা বড় কার্টনে ভরে বিদেশে পাঠানো হয়। বগুড়ার মরিচের তীব্র ঝাল এখন সর্বজনীন। দেশের গুঁড়া মসলা কোম্পানিগুলো মরিচ আবাদ প্রধান বগুড়ার যমুনা তীরের গ্রাম, চরগ্রামে গিয়ে ক্রয় কেন্দ্র খুলেছে। মরিচ রফতানিকারকরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে চাষীদের আগাম বায়না করে রাখছে। রফতানিকারক এক প্রতিষ্ঠান জানালেন, মরিচ বিশ্বের সকল দেশের গুঁড়া মসলা কোম্পানির কাছে অতি প্রয়োজনীয়। বগুড়ার মরিচের ঝালের আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। বগুড়ায় মরিচ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় এলাকা যমুনা তীরের সারিয়াকান্দির গ্রাম, গাবতলির কলাকোপা, ধুনটের গোসাইবাড়ি, ভা-ারবাড়ি, সোনাতলার রানীরপাড়া, হরিখালি এবং আশপাশের এলাকা। এই এলাকাগুলোতে মরিচের আবাদ অনেক বেড়েছে। সারিয়াকান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কিষানবাড়ির আঙিনা ও চাতালে বিশেষ ব্যবস্থায় মরিচ শুকানো হচ্ছে। মরিচের বাজার বেশ চড়া। কনজ্যুমার গুডসের কোম্পানির লোকজন গত ক’বছর ধরে মরিচ চাষ করার জন্য কৃষকদের উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি উৎপাদিত মরিচ আগাম কেনার অর্থ প্রদান করায় কৃষকের আয় বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষক মরিচের আবাদ করে লাভসহ বিক্রির নিশ্চয়তা পেয়েছে। কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে বগুড়ায় মরিচ আবাদের টার্গেট করা হয়েছিল প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে। লক্ষ্য ছিল এই পরিমাণ জমিতে আবাদ করে ফলন মিলবে প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন। আবাদ মৌসুমে দেখা গেল মরিচ চাষীরা টার্গেটের চেয়ে অনেক বেশি জমিতে আবাদ করেছে। যে এলাকাগুলোতে আগে কখনও মরিচের আবাদ হয়নি সেই এলাকাতেও মরিচের আবাদ হচ্ছে। নানা জাতের মরিচের মধ্যে লাল, টোপা মরিচের চাহিদা বেশি। টোপা মরিচ মাঠে পেকে যাওয়ার পর সংরক্ষণের কাজগুলো করেন নারী। শুকনো মরিচ সংরক্ষণ ও বস্তায় ভরার কাজ খুব সহজ নয়। এক ধরনের তীব্র ঝাঁঝ কখনও অসহনীয় হয়ে ওঠে। নারী শ্রমিক ফেরদৌসী, জাহান আরা বললেন ঝাঁঝ যতই হোক মরিচ বেচে লাভের মুখ দেখার পর ঝাঁঝের কথা আর মনে থাকে না। কৃষক মোজাহার ও আকবর বললেন শ্রমিকদের মজুরি দিতে হচ্ছে বেশি। ফড়িয়া দালালদের কারণে লাভের অংশ কমে যাচ্ছে। পাইকারি বাজারে শুকনো মরিচ প্রতি মণ ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। খুচরা বাজরে তা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। মাঠের কৃষকের কথা মরিচ বেচে লাভবান হচ্ছেন। গাঁয়ের বধূদেরও কথা- এখন আর শিল পাটায় শুকনো মরিচ পিষতে হয় না। হাত জ্বালা করে না। কোম্পানির লোক কিনে নিয়ে গুঁড়া করে প্যাকেটে ভরে গ্রামের মানুষের কাছেই বেচছে।
×