ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফেরদৌসী খানম লাকী

বন্ধ হোক নারী নিপীড়ন

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

বন্ধ হোক নারী নিপীড়ন

মানব জাতির কাছে ধর্ম এসেছে সমাজে সঠিক পথ, সুন্দর সমাজ এবং পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে মহান আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশনা অনুযায়ী সমাজব্যবস্থা পরিচালনার জন্য। নারীর মর্যাদা সম্পর্কে ইসলাম ধর্মে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া রয়েছে । কিন্তু দেখা যায় ধর্মের লেবাসধারী ধর্মকে পুঁজি করে সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে মানুষের আস্থা অর্জন করে তাদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। কিন্তু কোন অঘটন ঘটলে তাদের আসল চেহারাটা সমাজের চোখে বের হয়ে আসে, এর আগে নয় । তা না হলে একটি ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল একজন নারীকে হেনস্তা করে যাচ্ছে তার প্রতিকার কেউ করেনি। নুসরাত পুড়ে যাওয়ার পর তার আসল মুখোশ উন্মোচন হলো কেন? নিশ্চয়ই এর আগেও ওই নরপশু অনেকের সঙ্গেই এ রকম ‘ব্যাভিচারী’ আচরণ করেছে। আসলে আজও আমরা নিজেদের শুধরাতে পারিনি। কারণ কেউ যদি অভিযোগ করে ‘যৌন হেনস্তার’ তাকেই বরং আমরা দোষারোপ করতে অভ্যস্ত। তাই অনেকেই এ বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চায়। ঘটনাগুলো যখন ঘটে তখনই নারীর পোশাক, নারীর চলাফেরা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য হয়। কিন্তু আমরা ভেবে দেখি নুসরাত, তনু তাদের পোশাক কি ছিল? তারা কি আদৌ কোন বেপর্দাভাবে বেরিয়েছিল যে ওদের ‘কুনজর’ তাদের ওপর পড়বে? যে পুরুষ তার মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন আমি মনে করি সে পুরুষ কোন নারীর অমর্যাদা কখনই করতে পারে না। যার ভেতরে গলদ সে যে পেশাতেই থাকুক না কেন তার পশুবৃত্তি আটকাতে পারে না । আজ প্রশ্ন এসেছে আমরা কেমন সমাজে বসবাস করছি? পৃথিবী আধুনিক হচ্ছে কিন্তু মন মানসিকতা কী আধুনিক হচ্ছে? আর আধুনিকতাই বা কি? এটা কি ধর্মের উর্ধে? সমাজের মানবিক মূল্যবোধ কোথায় দাঁড়িয়েছে? চার বছরের শিশু থেকে যে কোন নারীই ‘নর পিশাচদের হাত থেকে রেহাই পায় না? এটা কি সভ্য সমাজ? নাকি আমরা আদিম যুগে ফিরে গিয়েছি? ধর্মে যেখানে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে এবং সে ধর্ম পাঠ করেই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল পদে অধিষ্ঠিত হয় তাতেও তার বিবেক ধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করে এমন ‘নরপিশাচ’দের অপকর্ম ঢাকার জন্য যারা ফেনিতে মানববন্ধন করে তাঁর মুক্তির জন্য তারাও ওর অপকর্মের দোসর। আর এরাই সমাজকে অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করতে সহায়তা করে। এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। একজন নারী যখন নির্যাতিতা হয়, ধর্ষিতা হয় তখন একদল আছে নারীটির নানা ব্যক্তিগত দিক তুলে ধরে তাকে ‘চরিত্রহীনা’ বলে হেনস্তা করার নতুন পাঁয়তারা চলে তার সুবিচার করার বদলে। কারণ নারীকে ‘চরিত্রহীনা’ খেতাব দেয়া খুব সহজ এ সমাজে। কোন ঘটনা ঘটলেই প্রশাসন কেন গুরুত্বসহকারে দেখে না, কেন সব জায়গাতেই রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়? একটি চেয়ারে বসা ব্যক্তিটি কী তার দায়িত্ব পালনে দায়বদ্ধ নয়? আইন দিয়ে বিচার হয়। অপরাধীর শাস্তির প্রয়োগ হয় কিন্তু সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হলে সমাজের নারী/পুরুষ সবাইকে এ অন্যায়ের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধে দাঁড়াতে হবে। সর্বোপরি মনের পর্দা, চোখের পর্দার হেফাজত শুধু নারীর জন্য নয় পুরুষের জন্যওÑ তা অনুধাবন করতে হবে। সমাজকে আরও অন্ধকারে তলিয়ে না দিয়ে আসুন মুখোশধারীদের মুখোশ খুলে দিয়ে আইনের আওতায় এনে যথাযোগ্য বিচারের ব্যবস্থা করি। ধর্মের আড়ালে যেন অধর্মের কাজ না হয় সচেতন হই। ওরা দ্রুত পালাবে। আমরা আলোর মুখ দেখবোই। আগারগাঁও, ঢাকা থেকে
×