ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আলোর মশাল কোথায়?;###;আমেনা আক্তার প্রিয়া

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ নারী নিপীড়নে নৃশংসতা

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ নারী নিপীড়নে নৃশংসতা

‘আমি লড়ব শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।’ দৃঢ়তার সঙ্গে এই শব্দগুলো উচ্চারিত হয়েছিল নুসরাত নামের সদ্য কৈশোর পার হওয়া মেয়েটির কন্ঠ থেকে। সত্যি সে অসীম ধৈর্য আর সীমাহীন সাহস নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করেছিল। তার অদম্য সাহস আমাদের অন্যায় সয়ে যাওয়ার প্রথাগত ভিতটাকে নাড়িয়ে দিল, তার আপোসহীন মনোভব আমাদের সমাজব্যবস্থার মুখে করেছে চপেটাঘাত। তার মনোবল আমাদের বিবেকের রুদ্ধদ্বারকে করেছে উন্মুক্ত। মৃত্যু তাকে থামাতে পারেনি বরং একটা স্ফুলিঙ্গের মতো সে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ল। নুসরাত হয়ে উঠলো আমাদের জাগ্রত বিবেকের প্রতীক- এদেশের প্রতিটা সাহসী মেয়ের প্রতিচ্ছবি। তাই নুসরাত এখন আর শোকের নাম নয় বরং নুসরাত হয়ে উঠেছে অগণিত মানুষের শক্তির উৎস- সাহসের অপর নাম। ২০১৭ সালের ষোড়শী কন্যাটির চোখে চুন ছুড়ে বখাটেরা যখন থামিয়ে দিতে চেয়েছিল, তখন সে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল-‘তোমরা আমাকে থামাতে পারবে না।’ সত্যি ওরা নুসরাতকে থামাতে পারেনি। তার লড়াইয়ে প্রশাসন কিংবা সমাজ কেউ শামিল হয়নি, লড়াইটা ছিল তার একার। চোখে সীমাহীন জ্বালা নিয়ে সকল বাধা তুচ্ছ করে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে নিজেকে জিতিয়ে আনল। আলিমে এসে যখন সে আবারও হায়েনাদের থাবার শিকার হলো, তখন সে গর্জে উঠল দিগুণ সাহস নিয়ে। যথারীতি সে ছিল একা বরং ভক্ষককে রক্ষার জন্য এগিয়ে এলো অনেকে। কিন্তু তাতে কি! যার ভেতর প্রতিবাদের অদম্য শক্তি দানা বাধে তাকে রোখার সাধ্য কার? সমস্ত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে সে এগিয়ে গিয়েছিল। নোংরা মানুষের মুখোশ সে উন্মোচিত করে দিয়েছিল। এই কলুষিত সমাজ তা সহ্য করতে পারল না। তাই তারা চিরতরে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল তার সাহসী কণ্ঠকে। আগুনে পুড়িয়ে শেষ করে দিতে চেয়েছিল অপার সম্ভাবনার জীবনকে, স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল প্রতিবাদের ভাষাকে। পরিশেষে পশুর আদিম হিং¯্রতা আর পাশবিকতার নিষ্ঠুর থাবা নিভিয়ে দিল তাজা প্রাণটাকে, বিভীষিকার আগুনে ছাই হয়ে গেল বাবা-মায়ের স্বপ্ন। কিন্তু নুসরাত নিজে জ্বলে আমাদের জন্য আলোর মশাল জ্বালিয়ে দিয়ে গেল। আর এই মশালকে সমস্ত ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে বাঁচিয়ে উঁচু করে ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের। নুসরাতের আগুনে ধ্বংস হয়ে যাক সমস্ত পাশবিকতা, নিষ্ঠুরতা আর বিভীষিকা। যে মাটিতে নুসরাতের পোড়া শরীর শুয়ে আছে সেই মাটিতে লাশের মিছিল বন্ধ হোক। এদেশের মেয়েরা বুক ভরে নিঃশ্বাস নিক মুক্ত বাতাসে, আর কোন নারীর অসম্মানের দায়ভারে সমাজ যেন নুয়ে না পড়ে, সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধ এ রুখে দাঁড়াক বাংলাদেশ- এই যেন হয় আমাদের নতুন বছরের দৃপ্ত অঙ্গীকার। সোনাগাজী, ফেনী থেকে
×