ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

ঢাকায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

সাড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ উৎসব পালন উপলক্ষে এবারে ঢাকায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডাঃ লোটে শেরিংয়ের চার দিনের সফর ছিল তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ। উল্লেখ্য, ভুটানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ টান্ডি দরজি বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে অধ্যয়ন করেছিলেন। সেই স্মৃতি ধারণ করে তিনি তার প্রিয় ক্যাম্পাসে সহপাঠী ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি ভাল চিকিৎসক হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য সর্বাগ্রে ভাল মানুষ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এর বাইরেও তিনি সুরের ধারা আয়োজিত হাজার কণ্ঠে বাংলা নববর্ষের সঙ্গীত উৎসবে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডাঃ লোটে শেরিংয়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে স্থল সংযুক্তি বা ট্রানজিট, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে ভুটানের ১৬টি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধার পাশাপাশি বাংলাদেশের ১০টি পণ্যেও দেয়া হবে এই সুবিধা। খুব শীঘ্র এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে ভুটানে জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগ ও আমদানির বিষয়টি। এতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি আঞ্চলিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা মজবুত হবে। বিদ্যুত সেক্টরে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর সরকার এবার সবিশেষ জোর দিয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে। যার মধ্যে অন্যতম জলবিদ্যুত, সৌর ও বায়ুবিদ্যুত। এর মধ্যেও সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হয়েছে প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটানে জলবিদ্যুতে যৌথভাবে জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগ করে তা দেশে এনে ব্যবহারের ওপর। ভারত ইতোমধ্যে নিজেদের জমি ব্যবহারের শর্ত শিথিল তথা তুলে নেয়ায় সঞ্চালন লাইন স্থাপনেও আর প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। এতে সাশ্রয়ী দামে যেমন জলবিদ্যুত পাওয়া যাবে, তেমনি তা হবে পরিবেশবান্ধব। সরকার ইতোমধ্যে ভূগর্ভে পানির স্তর ঠিক রাখার জন্য উত্তরাঞ্চলে আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানে ২০৪১ সালের মধ্যে ৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুত উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে, যা প্রধানত আসবে নেপাল ও ভুটানে যৌথ বিনিয়োগে উৎপাদিত জলবিদ্যুত থেকে। এর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে চরাঞ্চল ও সমুদ্র উপকূলে সবিশেষ জোর দেয়া হবে সৌর ও বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনে। দেশে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে বিশাল বিনিয়োগের পর বাংলাদেশ এবার ঝুঁকেছে নেপাল ও ভুটানে জলবিদ্যুত উৎপাদনে যৌথ বিনিয়োগের দিকে। হিমালয় পর্বতমালার সুউচ্চে অবস্থান বিধায় এই দুটো দেশে পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য জলবিদ্যুত উৎপাদনের সমুজ্জ্বল সম্ভাবনা বিদ্যমান। এ ক্ষেত্রে বিদেশী ঋণ ও প্রযুক্তি পাওয়াও অপেক্ষাকৃত সহজ। আর তাই বাংলাদেশ সার্কভুক্ত প্রতিবেশী দেশ দুটোতে জলবিদ্যুত উৎপাদনে বিনিয়োগসহ উৎপাদিত বিদ্যুত দেশে আমদানি করতে ইচ্ছুক। এ নিয়ে নেপালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর পাশাপাশি নেপালের আপার কারনালি জলবিদ্যুত প্রকল্প থেকে আপাতত ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুত আমদানি নিয়েও হয়েছে ফলপ্রসূ আলোচনা। এর মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতাও বৃদ্ধি পাবে নিশ্চিতভাবে। ভুটানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, যেটি অগ্রাধিকার পেয়েছে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে। এর ফলে সে দেশে বাংলাদেশী পণ্য রফতানিসহ বিনিয়োগের পথও প্রশস্ত হবে।
×