ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পের আলোয় মুজিবনগর দিবস উদ্যাপন

প্রকাশিত: ১১:১২, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

শিল্পের আলোয় মুজিবনগর দিবস উদ্যাপন

মনোয়ার হোসেন ॥ বৈশাখী বিকেলে উন্মুক্ত প্রান্তরে বইছে মৃদু বাতাস। চারপাশে ভেসে বেড়ায় শিশু শিক্ষার্থীদের কলরব। সেই শব্দ ধ্বনির মাঝে আবির্ভূত হন কাশফুলের মতো সাদা কেশ-দাড়িতে আবৃত কবি নির্মলেন্দু গুণ। কণ্ঠে তুলে নেন স্বরচিত কবিতা ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’। কবির উচ্চারণে আসে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত কবিতার পঙ্ক্তিমালা- একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে/লক্ষ লক্ষ অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে/ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে...। কবি কণ্ঠের উচ্চারণ থামতেই সবাই এগিয়ে যায় কবিতার উপজীব্য সেই মহামানবের নতুন ভাস্কর্য উন্মোচনে। অতিথিরা সকলে মিলে শিল্পের ওপর থেকে সরিয়ে দেন কালো কাপড়। ৭ মার্চের পুরো ভাষণের লিখিত রূপসহ খোদাইকৃত গ্রানাইট পাথরের মাঝে উদ্ভাসিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শিল্পকলা একাডেমির মাঠের এক কিনারে প্রায় এক শ’ ফুট দীর্ঘ দেয়ালজুড়ে ভাস্কর্যটি গড়েছেন ভাস্কর জাহানারা পারভীন। ‘শিল্পের আলোয় সাতই মার্চ’ শীর্ষক ম্যুরালে বিষয়ের সমান্তরালে উঠে এসেছে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের অভ্যুদয়সংলগ্ন আন্দোলন-সংগ্রামের দৃশ্যকল্প। বুধবার ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে উন্মোচিত হয় এ ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটি প্রসঙ্গে এর নির্মাতা জাহানারা পারভীন বলেন, আমার ভাস্কর্যের মাধ্যমে জাতির পিতার সেই আবেগ, সেই যুক্তি, সেই কঠিন নির্দেশনা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি চার ফুট বাই আড়াই ফুট কালো গ্রানাইট পাথরে। নিজেকে নিপীড়িত মানুষ ভেবে ভাষণের প্রতিটি শব্দকে প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছি দেশের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালবাসা, ¯েœহ-মমতা ও সহমর্মিতায়। ছাব্বিশে মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্রতিফলন রূপে ব্যবহার করেছি ২৬টি পাথর। ব্যবহৃত হয়েছে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সালের ফটোগ্রাফ। আছে শামসুর রাহমানের অমর কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’। সেই কবিতার সঙ্গী হয়েছে হাজার বছরের বাঙালীর গৌরবগাথা তুলে ধরা সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা ‘আমার পরিচয়’। ভাস্কর্য উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় মূল আয়োজন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। অনুভূতি প্রকাশ করেন ভাস্কর জাহানারা পারভীন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল। আলোচনা শেষে ছিল নৃত্য-গীতে সজ্জিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ‘আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’ গানের সুরে নাচ করে শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ ও ‘এ মাটি নয় জঙ্গিবাদের’ শীর্ষক সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশন করে একাডেমির শিশু শিল্পীবৃন্দ। শিশু শিল্পী সেঁজুতি গেয়ে শোনায় ‘আমি ধন্য হয়েছি আমি পূর্ণ হয়েছি’। এরপর ‘দুঃখিনী বাংলা জননী বাংলা’ এবং ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’ গানের সুরে পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য। আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিশু শিল্পী শ্রেয়সী। মোমিন গেয়ে শোনান ‘আমি যুদ্ধে যাবো মা’। এছাড়া একক কণ্ঠে গান শোনান সাইফুল, দিঠি আনোয়ার ও ঝিলিক। সব শেষে ‘মুজিব মানে আর কিছু না’ গানের সুরে পরিবেশিত হয় সমবেত নাচ।
×