ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভবিষ্যত নেতৃত্ব নিয়ে জাপায় চলছে ঠাণ্ডা লড়াই

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

ভবিষ্যত নেতৃত্ব নিয়ে জাপায় চলছে ঠাণ্ডা লড়াই

রাজন ভট্টাচার্য ॥ এরশাদের অবর্তমানে দলের কর্তৃত্ব কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে এ নিয়ে জাপার ভিতরে চলছে ঠা-া লড়াই। আপাতদৃষ্টিতে সহোদর জিএম কাদেরকে এরশাদের অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলেও দলের ভিতরে থাকা কয়েকজন সিনিয়র নেতা এরশাদের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে চলেছেন। তারা চাচ্ছেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে দলের ভবিষ্যত চেয়ারম্যান বানাতে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে রওশন বলেছেন, জাপার ভবিষ্যত নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে তা দলের কাউন্সিলে নির্ধারণ হবে। জাপার শীর্ষ কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির ভবিষ্যত নেতা নির্ধারণ নিয়ে দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত এখন দুধারায় বিভক্ত। এর মধ্যে একটি ধারা আছেন রওশনের সঙ্গে। অন্যটি জিএম কাদেরের সঙ্গে। তবে দলের মধ্যে প্রভাবশালী নেতাদের বেশিরভাগই জিএম কাদের বিরোধী। আর তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই রওশন বিরোধী। জাপার সব পক্ষই একটি বিষয়ে একমত, এরশাদের অবর্তমানে দলের নেতৃত্ব হয় রওশন, নয়তো জিএম কাদেরের হাতে যাচ্ছে। তাই পছন্দের নেতৃত্ব ঠিক করে দলে বিভক্তি শুরু হয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, রওশন এরশাদ কোন অবস্থাতেই দেবরের হাতে জাপার নেতৃত্ব তুলে দিতে নারাজ। তাই এরশাদকে যে কোন মূল্যে বশে রাখার চেষ্টা চলছে। তাছাড়া দলের ভবিষ্যত নেতৃত্ব নিজের হাতে রাখতে না পারাকে নিজের পরাজয় হিসেবে দেখেন রওশন। এতে প্রধান বাধা হলো তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। রওশনের পরামর্শে জিএম কাদেরকে বিরোধী দলের উপনেতা, ভবিষ্যত চেয়ারম্যান ও উপনেতার পদ থেকে বাদ দেন এরশাদ। কিন্তু তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অব্যাহত চাপের মুখে উপ-নেতার পদ ছাড়া অন্য দুটি দায়িত্বে কাদেরকে পুনর্বহাল করতে বাধ্য হন দলপ্রধান। জাপার অনেক নেতার ধারণা তৃণমূল পাশে থাকলে রওশন এরশাদ ঘুঁটি চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবেন। তাছাড়া বয়সের কারণে দলের হাল ধরতে পারবেন না রওশনও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, জাপায় রাজনৈতিক কোন দ্বন্দ্ব নেই, আছে পারিবারিক কোন্দল। আর এ কোন্দলে পার্টির কয়েক সিনিয়র নেতা জড়িত থাকলেও তৃণমূল অথবা মধ্যম সারির কোন নেতাকর্মীই এ দ্বন্দ্বের মধ্যে নেই। সিনিয়র নেতারাই সিদ্ধান্ত নিয়ে এইচ এম এরশাদকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলেন। জিএম কাদের মুঠোফোনে এ প্রসঙ্গে বলেন, জাতীয় পার্টি একটি বড় দল ও সংসদের প্রধান বিরোধী দল। এখানে পদ-পদবীর প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। দলের চেয়ারম্যান আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি পার্টির সকল সিনিয়র নেতার পরামর্শে সকলের সমন্বয়ে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। সকলে একটেবিলে বসলে অনেক বিভেদ ও সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এদিকে জিএম কাদেরকে পার্টির ভবিষ্যত চেয়ারম্যান ঘোষণা করায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। তবে, পার্টিতে জিএম কাদের বিরোধীরা এখনও সক্রিয়। তাই দলে ঠা-া লড়াই থেমে নেই। গত ৪ এপ্রিল জিএম কাদেরকে পুনরায় পার্টির ভবিষ্যত চেয়ারম্যান ঘোষণা করার পর থেকে নেতাকর্মীরা এরশাদের বাসবভন প্রেসিডেন্ট পার্কে পাহারা অব্যাহত রেখেছেন। যাতে কাদের বিরোধীরা এরশাদকে দিয়ে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে না পারে। এরশাদ নিজেও শেষ বয়সে নিজ সিদ্ধান্ত না বদলে সহোদর ভাইকে পার্টির উত্তরাধিকার হিসেবে দেখতে চান। এ কারণে দলের মধ্যে থাকা কাদের বিরোধীদের পাত্তা দিচ্ছেন না এইচ এম এরশাদ। জানা গেছে, সম্প্রতি জাপার দুই প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদেরের বিষয়টি পরিবর্তনের জন্য এরশাদের বাসভবনে গেলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে সেই দুইনেতাকে ভর্ৎসনা করেন। তবে হাল ছাড়তে রাজি নন জিএম কাদের বিরোধীরাও। তারা গুলশানে একাধিক বাসায় দফায় দফায় বৈঠক করছেন। যদিও তাদের মধ্যে কয়েক নেতা দলের বৃহত্তর স্বার্থে এরশাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। তবে জাপার নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, রাজনীতিতে বারবার মত পাল্টানো নেতা হিসেবে এরশাদ সবচেয়ে বেশি পরিচিত। মুহূর্তের মধ্যে মত পাল্টানোর কারণে তার এই পরিচিতি। নেতাকর্মীদের চাপের মুখে জিএম কাদেরের দুটি পদ ফিরিয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত তা বহাল থাকবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আমি বারবার বলেছি দলের ভবিষ্যত নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এরশাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি ইতোমধ্যে জানিয়েছেন কে হবে পার্টির ভবিষ্যত কর্ণধার। যদিও এটা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানারকম আলোচনা আছে। কিন্তু পার্টির বৃহত্তর স্বার্থে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের যে কোন সিদ্ধান্ত নেতাকর্মীরা মেনে নেন। জাপার অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান বলেন, প্রেসিডিয়াম থেকে শুরু করে পার্টির সকল পদ-পদবী আমরা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বাক্ষরে পেয়ে থাকি। পার্টিতে তার সিদ্ধান্তই শেষ কথা। জিএম কাদেরের বিষয়েও তিনি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা যদি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বাস্তবায়ন করি তাহলেই দলের জন্য মঙ্গলজনক।
×