ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘রাতকানা’ রোগ আর নেই- স্বাস্থ্যসেবায় বড় সাফল্য

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

‘রাতকানা’ রোগ আর নেই- স্বাস্থ্যসেবায় বড় সাফল্য

সমুদ্র হক ॥ অতীতে রাতকানা রোগ নিয়ে কত ঘটনা, ঘটনাকে ঘিরে কতই না কথা। দিনে যে ব্যক্তি সবকিছুই দেখত সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি সে কিছুই দেখত না। লাঠি বা হাত এগিয়ে সম্মুখে কিছু আছে কি না অনুভবে চলতে হতো। কখনও সাহায্যকারী লাগত। সেই ‘রাতকানা’ রোগ দেশ থেকে উধাও হয়ে গেছে। মেডিক্যাল কলেজগুলোতে উদাহরণ দেয়ার জন্য একজন রাতকানাকেও খুঁজে পাওয়া যায় না। গত দশ বছরে রাতকানা রোগকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, যা বড় সাফল্য। এমন অনেক সাফল্য নিয়ে প্রথমবারের মতো দেশজুড়ে স্বাস্থ্য সেবা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের আগে স্বাস্থ্য বিষয়ে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বুধবার বগুড়ায় স্বাস্থ্য সচেতনতা, পুষ্টি ও খাদ্য বিষয়ক এক সেমিনারে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন সামির হোসেন মিশু জানালেন, দেশে বর্তমানে এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ২ কোটির বেশি। তাদের অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব দূর করাসহ শিশু মৃত্যুর কারণে কয়েকটি রোগ থেকে রক্ষা করতে প্রতি বছর জাতীয়ভাবে এক ডোজ করে নীল ও লাল রঙের ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। দেশে যেন আর কখনও রাতকানা রোগ না আসতে পারে প্রতিনিয়ত তার ফলোআপ করা হয়। এই রোগের বিজ্ঞান নাম ‘জেরোফথ্যালমিয়া’। বিট্স স্পটও বলা হয়। যা চোখের ভেতরের এক ধরনের প্রতিবন্ধী। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দৃষ্টি সূর্যালোকে স্বাভাবিক থাকে। সন্ধ্যার পর থেকে রাতভর দেখতে পারে না। অপুষ্টি ও ভিটামিন ‘এ’র স্বল্পতা রাতকানা রোগের অন্যতম কারণ। শিশু জন্মের এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই এক লাখ ও দুই লাখ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিটের (আইইউ) ক্যাপসুল খাইয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি, শারীরিক গঠনে উচ্চতা বৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তির (মেধা) বিকাশ ঘটাতে বড় ভূমিকা রাখে। হালে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, এই ক্যাপস্যুল ফুসফুসের সংক্রমণ, ডায়রিয়া কমানো, শরীরের ত্বকের মসৃণতা ও ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে দিয়ে শিশুদের সকল ধরনের মৃত্যুহার আগামীতে অনেক কমিয়ে আনবে। শিশুবেলায় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোসহ স্বাস্থ্য সেবাকে অধিক গুরুত্ব দেয়ায় শিশুদের মেধা বৃদ্ধি ঘটছে দ্রুত। প্রজন্মের শিশুরা প্রযুক্তির ব্যবহার বড়দের চেয়ে কয়েক শ’ গুণ বেশি জানে। তারা প্রযুক্তির সার্বিক দিক অতিদ্রুত আয়ত্তে আনে। এরা মস্তিষ্কে যা ধারণ করে তা দীর্ঘ সময় ধরে রাখতেও পারে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, গ্রীষ্মে দিনের তীব্র আলোয় না ঘোরা, প্রয়োজনে সবুজ কাঁচের রোদ চশমার ব্যবহার, রাতে উজ্জ্বল বাতির দিকে সরাসরি না তাকানোর পরামর্শ দিয়েছে। রাতে অন্ধকারে ঘুমানোই ভাল। তবে প্রয়োজনে লাল ঢিম বাতি জ¦ালোনো যেতে পারে। অতীতের অনেক লেখক তাদের গল্প-উপন্যাসে রাতকানাদের বর্ণনা দিয়েছেন। অনেক নাট্য ও চলচ্চিত্রকার এদের নিয়ে নাটক লিখেছেন ও ছবি বানিয়েছেন। রাতকানাদের জীবনের যে বড় দুঃখ বোঝানো হয়েছে তা মর্মস্পর্শী। সেদিনের প্রতিবন্ধী রাতকানাদের জীবনের দুঃখ-বেদনাগুলো পরিবার ও সমাজের মধ্যে প্রভাব ফেলত। স্বাস্থ্য সেবার অগ্রযাত্রায় সেদিনের দুঃখ-বেদনা দূর হয়েছে।
×