ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের সভা

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের সভা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন অগ্নিকা-ের রিপোর্ট পর্যালোচনা এবং বিগত সময়ে এ সংক্রান্ত সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনার লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার ‘জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল’র সভা বসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ের চামেলী সভাকক্ষে বেলা ১১টায় এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভার আলোচ্যসূচিতে থাকছে, ‘গত সভার (২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত) কার্যবিবরণী নিশ্চিতকরণ, গত সভার সিদ্ধান্ত (১৯টি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত অগ্নিকা-ের রিপোর্ট উপস্থাপন, সংশোধিত দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি (এসওডি) ২০১৯ উপস্থাপন ও চূড়ান্তকরণ এবং বিবিধ। দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল’র সভায় ১৯টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল; এগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে সভায়। এছাড়াও ২৫৪ পৃষ্ঠার এসওডি, রাসায়নিক দুর্ঘটনা, অগ্নিদুর্ঘটনা, নগরায়ন দুর্ঘটনা নিয়ে পর্যালোচনা এবং বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যেসব অগ্নিকা-ের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সেগুলোর তদন্ত প্রতিবেদনও সভায় উপস্থাপন করা হবে। আর দেশ বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়লে এর থেকে পরিত্রাণ ও করণীয় নির্ধারণের জন্য জাপানের আদলে ‘ন্যাশনাল ইর্মাজেন্সি অপারেশন সেন্টার’ নামে নতুন একটি প্রতিষ্ঠানের স্থাপনের বিষয়েও আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য জাপান ও চীন আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০১৯ সাল বছরব্যাপী বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। খরার সময় বন্যা, অতিবৃষ্টি, ঘন ঘন বজ্রপাত, বন্যার সময় খড়া এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের এ রকম পূর্বাবাস আমলে নিয়ে এসওডি সংশোধন করা হচ্ছে। এর আগে ১৯৯৭, ২০১০ ও ২০১৭ সালে এসওডিতে সংশোধনী আনা হয়েছিল। এবারও এই সংশোধনী আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আজকের সভায় মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে কৃষি, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, রেলপথ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া নৌপরিবহন, পানি সম্পদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সভায় ভূমিকম্প ও নগর-দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি, মাইক্রোজোনেশন ম্যাপ তৈরির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ইতোমধ্যে সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচী-২ এর আওতায় সিলেট সীমান্তে সক্রিয় ডাউকি ফল্ট ও টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টের অবস্থান এবং উত্তর-পূর্বে সীমান্তে ইন্ডিয়ান প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর ও রাজশাহী শহরের মাইক্রোজোনেশন ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এ মানচিত্র অনুসরণে নগরে ভূমিকম্প প্রতিরোধক বাড়ি তৈরি করা হলে ঝুঁকি হ্রাস পাবে। এ বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে সভায় আলোচনা হতে পারে। এছাড়াও ভূমিকম্প মোকাবেলায় কন্টিনজেন্সি প্লান তৈরি, অনুসন্ধ্যান ও উদ্ধার যন্ত্রপাতি ক্রয়, দুর্যোগ মোকাবেলায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, দেড় বছর আগে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল’র সভার ১৯ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে সভায় আলোচনা হবে। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, ‘বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড’ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মালিক ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভবনে বসবাসকারীগণকে সরিয়ে নেয়া এবং স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে অবহিত করা, চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসমূহে রাজউক/সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক লাল রঙের সাইনবোর্ড লাগানো এবং সম্ভাব্য ভূমিকম্পে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের লক্ষ্যে বিদ্যুত ও গ্যাস লাইন এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে নির্দিষ্ট মাত্রার ভূমিকম্প হলে উক্ত লাইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, সরকারী-বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরে অন্তত দুবার ভূমিকম্পের মহড়া আয়োজন, একটি নির্দিষ্ট সময়ে সারাদেশে একযোগে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকম্প-সচেতনতা বিষয়ক কার্যক্রম গ্রহণ, ‘জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল’ এবং ‘জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল’ গঠন, সকল উন্নয়ন কর্মসূচীতে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা’র মত দুর্যোগের প্রভাব সমীক্ষা নিশ্চিত করা, দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসে স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ, ‘জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য পদ্ধতি’ নামে ওয়েবসাইট চালু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় মোবাইল এপ্লিকেশনের মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা, ঢাকায় একটি স্বয়ংক্রিয় ‘ন্যাশনাল এমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা, সৈয়দপুর বিমানবন্দরটি সর্বদা সচল ও প্রস্তুত রাখার ব্যবস্থা করা এবং ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে বন্যা, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
×