ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিজিএমইএ ভবন এক ঘণ্টার মধ্যে ভাঙ্গা সম্ভব

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

বিজিএমইএ ভবন এক ঘণ্টার মধ্যে ভাঙ্গা সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর হাতিরঝিলে অবস্থিত বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গতে সেনাবাহিনী নয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকই যথেষ্ট। দেশীয় এমন প্রযুক্তি রয়েছে যা ব্যবহার করলে এক ঘণ্টার মধ্যেই ভবনটি স্তুপ আকারে বসে পড়বে। ঝুঁকিপূর্ণ নয় এমন আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে পরিবেশ সম্মত উপায়ে ২৫ এপ্রিলের পর যে কোন সময় ভবনটি ভাঙ্গা হবে বলে জানিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। একইসঙ্গে ভবন ভাঙ্গার জন্য কোন উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান না পাওয়া গেলে আধুনিক নির্মাণ প্রক্রিয়ায় রাজউককে দিয়েই ভাঙ্গার বা বর্তমান স্থান থেকে উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে বলেন মন্ত্রী। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার সবশেষ প্রক্রিয়া সম্পর্কে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এবারের বিজ্ঞান সম্মত, পরিবেশ সম্মতভাবে ভবন ভাঙ্গার প্রস্তুতি নিয়েছি। যাতে কোনভাবেই প্রাণহানি বা ক্ষতির সম্মুখীন না হই, সেভাবেই এগোচ্ছি। এই ভবন ভাঙ্গতে ইতোমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি। যে সকল প্রতিষ্ঠানের এ যাবতীয় ইমারত ভাঙ্গার অভিজ্ঞতা আছে তাদের ২৪ এপ্রিলের মধ্যে কোটেশন দাখিল করার জন্য আহ্বান করেছি। আগামী ২৫ এপ্রিল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব, কোন সংস্থা উপযুক্ত যাদের দিয়ে ভাঙ্গা সম্ভব। কবে নাগাদ এ ভবন ভেঙ্গে ফেলা হবে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ২৫ এপ্রিলের পর এক সপ্তাহের ভেতরে বিজিএমইএ ভবন ভেঙ্গে ফেলার কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব হবে। জনাব রেজাউল করিম বলেন, অনেক ব্যয়ে অনেক পরিকল্পনার ভেতর দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল করা হয়েছে। কিন্তু সেই সুন্দর ঝিলের মাঝখানে বিষফোঁড়ার মতো বিজিএমইএ ভবন করা হয়েছে। তবে নির্মাণের সময় এ নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি। ফলে অনাকাক্সিক্ষতভাবে ভবনটি গড়ে উঠেছে। আর সেই ব্যর্থতার দায় আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকেরই রয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ বিজিএমইএ ভবন ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে আমরা ভবনটি ভাঙ্গার কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশেই এমন প্রযুক্তি আছে এক ঘণ্টার ভেতরে বিজিএমইএ ভবনটি ভেঙ্গে স্তূপ আকারে জায়গাতে বসে পড়বে। বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, এরইমধ্যে ভবনটি আমাদের দখলে নিয়েছি। ভবনে অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছি। ভবনের প্রয়োজনীয় সেবা সংযোগের মধ্যে একেবারে প্রয়োজন ছাড়া সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। ভবনটি ভাঙ্গার জন্য পরিবেশ তৈরি করতে সময় লাগবে। ভবনটি গুড়িয়ে দেবার পরে যেখানে পড়বে তার আশপাশে যাতে দুর্ঘটনার মুখোমুখি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি অর্থাৎ বিদ্যুতের সংযোগ অনেক দূর থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। একইভাবে গ্যাস পানির লাইন সংযোগস্থল থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে। মন্ত্রী বলেন, আমরা যদি উপযুক্ত সংস্থা পাই তাহলে তাদের সমন্বয়ে, আর যদি উপযুক্ত সংস্থা না পাওয়া যায় তাহলে আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজউকের পক্ষ থেকে ভবনটা উচ্ছেদের জন্য যে প্রক্রিয়া দরকার সেই প্রক্রিয়ায় যাব। যেহেতু এ ধরনের ইমারত ভাঙ্গতে হলে অন্যান্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সুযোগ দেয়ার বিধান রয়েছে। তাই আমরা সুযোগটি দেব। দরপত্রের পর উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান না পাওয়া গেলে আমরাই ভাঙ্গব। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ভবনটি বিজিএমইএ ভবন কর্তৃপক্ষকেই ভাঙ্গার দায়িত্ব নেয়ার কথা, এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ভাঙ্গার দায় দায়িত্ব আমাদেরেই নিতে হবে। কারণ আমরা চাই রাষ্ট্রের চমৎকার একটি স্থাপনার মাঝখানে এ ধরনের অবৈধ স্থাপনা টিকে না থাকুক। একই সঙ্গে দেশবাসী জানুক যে যেখানে বেআইনী ইমারত থাকবে বা স্থাপনা নির্মাণ করবেন তাদের সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে। ভবন ভাঙ্গতে ডিনামাইট ব্যবহার করা হবে কি না এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, কোনভাবেই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভাঙ্গতে যাব না। আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলব। সে ক্ষেত্রে নানা রকম পরিকল্পনা রয়েছে। যারা টেন্ডার দাখিল করবে তাদের মধ্যে দেখব সেই সংস্থার আধুনিক প্রযুক্তি আছে কি না? যদি না থাকে আমরা বাইরের প্রযুক্তি সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসব। আমাদের সঙ্গে এরইমধ্যে অভিজ্ঞ নির্মাণ প্রযুক্তিতে যারা দক্ষ তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে আমরা অগ্রাধিকার দিতে চাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে, যদি সে রকম না পাই সেক্ষেত্রে আমরা বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলব। বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। কোনভাবেই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে না কোনভাবেই মানুষের জীবন এবং মালে ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে এই ভবন ভাঙ্গা হবে না। ভবন ভাঙ্গতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের সিভিল প্রশাসনই যথেষ্ট। এ জাতীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকই যথেষ্ট। এলাকার নিরাপত্তা এবং অন্যান্য বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্যে নিতে পারি। ইমরাত ভাঙ্গতে বাইরের অন্য কোন সংস্থার প্রয়োজন হবে না। যে পদ্ধতির কথা গণমাধ্যমে আসছে সবটা সঠিকভাবে আসেনি। ডিনামাইটের প্রচলিত অর্থ বোমা হলেও এটা আসলে একটা নির্মাণ পদ্ধতি। আমাদের দেশেই এমন সব পদ্ধতি আছে ভবনটি ভাঙ্গতে বেশি সময় লাগবে না। এক ঘণ্টার ভেতরে ভবনটি স্তুপ আকারে জায়গাতেই বসে পড়বে। তবে, সব কিছুতেই জননিরাপত্তা রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে।
×