ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ

এম শাহজাহান, ওয়াশিংটন থেকে ॥ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সফলতার গল্প আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মডেল হিসেবে তুলে ধরছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ। স্বল্পোন্নত থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত, দ্রুত দারিদ্র্য নিরসন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, রফতানি প্রবৃদ্ধি, বাজেটের আকার বাড়ানো, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, দশ মেগাপ্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়া, রেমিটেন্সে রিজার্ভ শক্তিশালী হওয়া, তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন বাংলাদেশের এক একটি সফলতার গল্প হয়ে উঠছে। এছাড়া ঋণ নিয়েও তা ঠিক সময়ে পরিশোধে বাংলাদেশের বড় অর্জন হিসেবে দেখছে দাতা সংস্থাগুলো। অথচ আফ্রিকার অনেক দেশ বিশ্বব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহারও অনেক দেশ করতে পারছে না। এদিকে, গত ৮ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন সভা। এবারে সদস্যভুক্ত ১৮৯ দেশের প্রতিনিধিরা ওই সভায় অংশগ্রহণ করে। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে ওই সময় বাংলাদেশের সফলতার গল্পও তুলে ধরেছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ। বিশেষ করে শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হার কমিয়ে আনা, নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন এবং গড় আয়ু বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলোও এবার তুলে ধরা হয়। দাতা সংস্থা দুটির মতে, বাংলাদেশ উন্নয়ন বিশ্বের রোল মডেল। স্বল্পোন্নত অনেক দেশ এখন বাংলাদেশকে অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে পারে। এমডিজি অর্জনের সাফল্যের পর জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি অর্জনেও বাংলাদেশ সফলতা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নে জাতিসংঘ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে প্রায় ৭৭ লাখ হাজার কোটি টাকা। অর্থায়নের ব্যাপারে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাতা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের সফলতার গল্প বিশ্ব্যাংক ও আইএমএফ তাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে তুলে ধরছে। তিনি বলেন, গত এক দশকে যত উন্নয়ন হয়েছে তা বিশ্বের আর কোন দেশের হয়নি। ফলে ছোট দেশগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নের বিষয়টি দেখে যেতে পারে। বাংলাদেশের পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ ॥ দেশের ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা কাটাতে কাজ করবে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা আইএমএফ। সংস্থাটি তাদের নিজস্ব টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে আরও উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে। এ কাজটি করার আগে ব্যাংকিং খাতের ওপর একটি স্ট্যাডি করবে। এছাড়া অবকাঠামো উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএফসি বছরে গড়ে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে শেষ হওয়া বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বৈঠকে এ অর্জন হয়েছে বাংলাদেশের। ওই বৈঠকে দেশের মানব সম্পদ উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা সঙ্কট উত্তরণ ও বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি প্রথম বৈঠক। এ বছর যে বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে আগামীতে এর ফলোআপ করা যাবে। তবে ব্যাংকিং খাত নিয়ে আলোচনা ভাল হয়েছে। ভ্যাট আইন নিয়ে আমাদের উদ্যোগ আইএমএফকে বুঝাতে পেরেছি। শিক্ষা খাতে বড় ধরনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় সফর করতে আইএমএফের প্রেসিডেন্টের সম্মতি পাওয়া গেছে। সব মিলে এ বৈঠকে অর্জন ভাল হয়েছে। জানা গেছে, এই বসন্তকালীন বৈঠক থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে কয়েকটি সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ। এগুলো হচ্ছে বেসরকারী ব্যাংক মার্জারসহ আর্থিক খাতে বড় ধরনের সংস্কার, বিশেষ করে দুর্বল ও ছোট ব্যাংকগুলোকে বড় ব্যাংকের সঙ্গে মার্জার, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ কমানো, পুঁজিবাজারকে আরও কার্যকর এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। বসন্তকালীন বৈঠকে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা (আইএমএফ)-এর প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড বাংলাদেশ সফর করতে রাজি হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন তার এই সফরের সময় দেশের উপকার হবে এমন নানাবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ পাওয়া যাবে। এছাড়া নেদারল্যান্ডসের রানীও ওই বৈঠকে বাংলাদেশ সফরে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বসন্তকালীন বৈঠকে আইএমএফের কাছে দেশের মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাত বিভিন্নভাবে দুর্বলতা ও সমস্যা আছে। এসব সমস্যা দূর করার তাদের সহায়তা চাওয়া হয়। কারণ এসব সমস্যা দূর করতে তাদের কাছে কার্যকরী টুলস আছে। এই টুলস ব্যবহার করে ব্যাংকিং খাতকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসবে। ব্যাংকিং খাতে কাজ করতে সংস্থাটি রাজি হয়েছে। খুব শীঘ্রই তারা স্ট্যাডি করে সুন্দর ও সফলভাবে ব্যাংকিং খাত পরিচালনা করা যায় সে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আগামী পহেলা জুলাই থেকে বাংলাদেশে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে। এ আইনটি প্রণয়নের পেছনে অনেক উদ্যোগ ছিল আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা আইএমএফের। আইনটি প্রণয়নে আর্থিক ও জনবলের দিক থেকে সহায়তা করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে লজিস্টিক সহায়তা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে আইনটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সংস্থাটির সুপারিশ ছিল নতুন ভ্যাট আইনে সিঙ্গেল রেট। এটি তারা চেয়েছে। অনেক আলোচনার মাধ্যমে সংস্থাটি রাজি হয়েছে ভ্যাটের তিনটি স্তর থাকার বিষয়ে।
×