ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরের মাঠে এএফসি কাপের প্রতিপক্ষ মিনার্ভা পাঞ্জাব

আজ জয়ের আশায় আবাহনী

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

আজ জয়ের আশায় আবাহনী

রুমেল খান ॥ এএফসি কাপের আসরে এর আগে দু’বার খেলে একবারও দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া হয়নি, এবার সেই আসরে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই জয় এবং চার দলের মধ্যে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ স্থানে থাকা, এছাড়া দিন তিনেক আগেই প্রিমিয়ার লীগে প্রতিপক্ষ শেখ জামাল ধানম-ির বিরুদ্ধে সাত গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে দুর্দান্ত জয় কুড়িয়ে নেয়া ...সব মিলিয়ে এর চেয়ে আর ভাল কি হতে পারে? হ্যাঁ, ঢাকা আবাহনী লিমিটেড এখন আছে বেশ ফুরফুরে মেজাজে। তাদের আত্মবিশ্বাসের পারদটা এখন বেশ উঁচুতেই। আর এই মনোবল নিয়েই আজ সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে তারা অবতীর্ণ হবে এফসি কাপের ‘ই’ গ্রুপের লড়াইয়ে। স্বাগতিক হিসেবে আতিথ্য দেবে ভারতের মিনার্ভা পাঞ্জাব ফুটবল ক্লাবকে। নিজেদের দর্শক, নিজেদের মাঠ, নিজেদের আবহাওয়া ... সবকিছু অনুকূলে নিয়েই আজ চ-িগড়ের দল ‘ওয়ারিয়র্স’ খ্যাত পাঞ্জাবকে হারাতে দৃঢ়প্রত্যয়ী ধানম-ির দল ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনী। তবে সফরকারী মিনার্ভা পাঞ্জাবের আত্মবিশ্বাস দেখে মনে হচ্ছে আবাহনীকে হারিয়ে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই ফিরবে তারা নিজ দেশে। ফলে দু’দলের লড়াইটা যে জমবে, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। এই আসরে ‘ই’ গ্রুপে খেলছে ঢাকা আবাহনী, ভারতের মিনার্ভা পাঞ্জাব, চেন্নাই এফসি এবং নেপালের মানাং মার্শিয়াংদি ক্লাব। এই চার দলই ইতোমধ্যে খেলেছে একটি করে ম্যাচ। তার মধ্যে সর্বোচ্চ তিন পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে আবাহনী। পয়েন্ট শূন্য মানাং মার্শিয়াংদি। আর অন্য দুই দলই পেয়েছে এক পয়েন্ট করে। গত ৩ এপ্রিল চেন্নাই-পাঞ্জাব ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছিল। নেপালের মানাংকে তাদের মাটিতে ওই একই দিনে আবাহনী হারিয়েছে ১-০ গোলে। এরপর দেশে ফিরে প্রিমিয়ার লীগে দুই ম্যাচ খেলে দুটিতেই জেতে। হারায় চট্টগ্রাম আবাহনীকে ২-০ এবং শেখ জামাল ধানম-িকে ৪-৩ গোলে। গোলমেশিনরা সচল থাকায় পাঞ্জাবের বিরুদ্ধেও গোল আসবে, এমনটাই ধারণা আবাহনী থিংক-ট্যাংকের। আবাহনীর পর্তুগীজ কোচ মারিও লিচিনো লেমোস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা তিন পয়েন্টের জন্যই খেলতে নামব। কারণ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং সেটা অবশ্যই সম্ভব। দলের সবাই আত্মবিশ্বাসী। প্রতিপক্ষ অবশ্যই ভাল দল। তবে আবাহনীও কোন অংশেই খারাপ দল নয়।’ মারিও আরও বলেন, ‘ওদের খুব শক্তিশালী রক্ষণভাগ আছে। ওদের দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারই বিদেশী। মাঝমাঠও রক্ষণে যোগ দেয়। সবমিলিয়ে ওদের ডিফেন্স শক্তিশালী এবং গোছালো। ওদের স্থানীয় খেলোয়াড়রাও ভাল। তবে আমি মনে করি আমাদের জেতার সম্ভাবনা আছে। আমাদের আক্রমণভাগ অনেক শক্তিশালী। শেষ পাঁচ ম্যাচে আমাদের ফরোয়াডরা ১৩ গোল করেছে। আমাদের সানডে-জীবন বেলফোর্ট খুবই আত্মবিশ্বাসী গোল করার বিষয়ে।’ প্রিমিয়ার লীগে সর্বশেষ ম্যাচে শেখ জামালের বিরুদ্ধে জিতলেও সেটা ছিল অনেক ঘাম ঝরানো। কেননা, খেলায় ৪-১ গোলে এগিয়ে থাকলেও শেষদিকে দুই গোল করে জামাল স্কোরলাইন ৪-৩ করে ফেলে। তখন আবাহনীর ডিফেন্স লাইন ছিল একেবারেই ছন্নছাড়া-অসহায়। ম্যাচের শেষের দিকে এমন ছন্দপতন যদি পাঞ্জাবের বিরুদ্ধেও হয়? ‘তাহলে তো আমাদের জেতাটা কঠিন হয়ে যাবে। এ ম্যাচে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ওই ম্যাচের ভাবনা (মনোযোগ হারানো) আমাদের জন্য বড় শিক্ষা। শেষ বাশি বাজার আগ পর্যন্ত আমাদের তাই ম্যাচের বাইরে যাওয়া যাবে না।’ স্বীকার করেন কোচ মারিও। আবাহনীর গোলরক্ষক-অধিনায়ক শহীদুল আলম সোহেল বলেন, ‘গ্রুপ সেরা হওয়ার জন্য আমাদের গোলসংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে তিন পয়েন্ট পাওয়াটাই বেশি জরুরী। সে লক্ষ্যেই আমরা খেলতে নামব। দলের সব ফুটবলার ফিট আছে। রিকভারির জন্য যত রকম পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেটি ক্লাবের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। পর পর তিন ম্যাচ জিতেছি। দলের সবাই মানসিকভাবে উজ্জীবিত আছে।’ আবাহনীর বেশকিছু ফুটবলারের অভিজ্ঞতা আছে আগেও এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে খেলার। কিন্তু প্রতিপক্ষ মিনার্ভা পাঞ্জাবের কোন ফুটবলারেরই পূর্বে এএফসি কাপে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের এই দলের কোচ শচীন বাদাড়ে। তারপরও আজকের ম্যাচে জিততে আত্মবিশ্বাসী। বরং আবাহনীকে এক রকম অবজ্ঞা করে রীতিমতো চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছেন, ‘আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী। অবশ্যই তিন পয়েন্টের জন্যই খেলব। আবাহনী-মানাংয়ের ম্যাচটি দেখেছি। সত্যি বলতে আমার মনে হয়েছে নেপালই বেশি ভাল খেলেছে। কিন্তু আবাহনী তাদের গোলরক্ষকের জন্য গোল হজম করেনি। আমরা জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ব আশা করি।’ মিনার্ভার অধিনায়ক সৌভিক দাস বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি খুব ভাল হয়েছে। আমরা তিন পয়েন্টের জন্যই খেলব।’ আবাহনী গত প্রিমিয়ার লীগের চ্যাম্পিয়ন। মোট ১৭ বারের চ্যাম্পিয়ন তারা। চলতি লীগে তারা আপাতত আছে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে। এর আগে তারা দু’বার এএফসি কাপ খেলেছে (২০১৭ ও ২০১৮ সালে)। ১২ ম্যাচে ২টি জয়, ২টি ড্র, ৮ হার তাদের। এই দুটি আসর খেলে একবারও দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারেনি তারা, বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই। ৪৭ বছর বয়সী আবাহনী মোট ৩৬ ট্রফি করায়ত্ত করেছে। এএফসি কাপে এর আগে ১২ ম্যাচ খেলে যে দুটিতে জিতেছিল আবাহনী, সে দুটি জয়ই ছিল ভারতীয় ক্লাবের বিরুদ্ধে। প্রথম জয়টি ছিল বেঙ্গালুরু ফুটবল ক্লাবের বিরুদ্ধে (২০১৭ সালে, ২-০ গোলে)। পরের জয়টি আইজল ফুটবল ক্লাবকে তাদের মাটিতেই হারিয়ে (২০১৮ সালে, ৩-০ গোলে)। সে তুলনায় আবাহনীর চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে মিনার্ভা। ক্লাবের বয়স মাত্র ১৪। লীগ জেতেছে একবার, আই-লীগে (২০১৭-১৮)। চলতি মৌসুমের লীগে অবশ্য ১২ দলের মধ্যে নবম হয়েছে। এই প্রথম এএফসি কাপ খেলছে তারা। অবশ্য এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ খেলেছে একবার, ২০১৯ মৌসুমে। ফলাফল প্রিলিমিনারি দ্বিতীয় রাউন্ডে বিদায়। গত চার বছরে এই ক্লাবটি আই লীগসহ বয়সভিত্তিক ফুটবলে ছয় ট্রফি জিতেছে। এক সময় এশিয়ার ক্লাবগুলো নিয়ে তিনটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করত এএফসি। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, এএফসি কাপ ও এএফসি প্রেসিডেন্টস কাপ-এই তিনটির মধ্যে বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর সুযোগ হতো প্রেসিডেন্টস কাপে। ২০০৮ সাল থেকে এএফসির ক্লাব টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়েছে এএফসি প্রেসিডেন্টস কাপ। নিজের সারির ক্লাবগুলো প্রথমে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্ব খেলে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় নকআউট পর্বের। এবারের প্রতিযোগিতায় গ্রুপ পর্বে এশিয়ার ৩৬ লীগ শিরোপাধারী দলকে ৯টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি গ্রুপে আছে ৪টি করে দল। এই দলগুলোকে আবার ৫ অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো- পশ্চিম, মধ্যম, দক্ষিণ, পূর্ব ও আসিয়ান অঞ্চল। পশ্চিম ও আসিয়ান অঞ্চলের মধ্যে ৬টি গ্রুপসহ মধ্যম, দক্ষিণ ও পূর্ব অঞ্চলে ১টি করে ৩টি নিয়ে মোট ৯টি গ্রুপ। দক্ষিণ অঞ্চলের ‘ই’ গ্রুপে পড়েছে আবাহনী। পরিসংখ্যানের নিরিখে বয়স-অভিজ্ঞতা-সাফল্যে মিনার্ভার চেয়ে এগিয়ে আবাহনী, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আজ তারা জিতে তিন পয়েন্ট নিজেদের ভা-ারে যোগ করতে পারবে তো?
×