ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম বিশ্বকাপ নিয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই মুস্তাফিজের

তাসকিনের অশ্রু, খুশি মোসাদ্দেক

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

তাসকিনের অশ্রু, খুশি মোসাদ্দেক

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মঙ্গলবার আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় দলের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ১৫ সদস্যের দলে ঠাঁই পাওয়া আর না পাওয়া নিয়ে ক্রিকেটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ যেমন সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত, কেউ বাড়তি কোন উন্মাদনা অনুভব করছেন না, আবার কেউ সুযোগ না পেয়ে কষ্টে কেঁদে ফেলেছেন। মিডলঅর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অফস্পিন করতে পারা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত সুযোগ পেয়ে কিছুটা অবাক হলেও উচ্ছ্বাস জানিয়েছেন। তেমনি বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে জয় তুলে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু ফিটনেস সমস্যার কারণে তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদ সুযোগ না পেয়ে হতাশায় মুষড়ে পড়ে কেঁদে ফেলেছেন। অপরদিকে, বাংলাদেশ দলের পেস বোলিংয়ের অন্যতম শক্তি বাঁহাতি মুস্তাফিজুর রহমান প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন, এরপরও বাড়তি কোন রোমাঞ্চ অনুভব করছেন না। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঘরোয়া সিরিজ দিয়ে মুস্তাফিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমণ। এরপর ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপ ও ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেছেন তিনি। ‘কাটার মাস্টার’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এ বাঁহাতি আগমণেই বিশ্ব কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কাঁধের ইনজুরিতে অস্ত্রোপচার করানোয় আগের ধারালো ভাব হারিয়ে গেছে ভয়ানক সব ‘স্লোয়ারে’ সিদ্ধহস্ত এ পেসারের। তবে বাংলাদেশ জাতীয় দল এ পেসারকে ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। সে কারণে নিশ্চিতভাবেই তিনি স্বয়ংক্রিয় পছন্দ ছিলেন এবার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। প্রথমবারের মতো সবচেয়ে বড় আইসিসি আসর ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন এ বাঁহাতি। এক প্রতিক্রিয়ায় ২৩ বছর বয়সী এ বাঁহাতি বলেন, ‘জীবনে প্রথম (বিশ্বকাপ) খেলব। একবার টি২০ বিশ্বকাপ খেলেছি, এখন ওয়ানডে খেলব- এই আর কি!’ কিছুদিন আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ খেলার সময় পায়ের গোঁড়ালিকে চোট পেয়েছিলেন এবং দুই সপ্তাহের বিশ্রামে আছেন তিনি। তাই বিশ্বকাপের অনেক আগেই পরিপূর্ণ ফিটনেস ফিরে পাবেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের বোলিং আক্রমণের অন্যতম ভরসা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মুস্তাফিজ। তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করব আমার সেরাটা দেয়ার। উইকেট ব্যাটিং সহায়ক থাকবে ওইরকম ভাবলে পরে আর ভাল করার সুযোগ থাকে কম। আমি আমার জায়গা থেকে সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করব।’ মুস্তাফিজের সঙ্গে বিশ্বকাপে হয়তো দারুণ একটি জুটি হতে পারত বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে তাসকিন আহমেদের। ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথম খেলেই দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন তাসকিন। দারুণ গতিময় এ পেসার সেবার ৯ উইকেট দখল করেছিলেন এবং টি২০ বিশ্বকাপেও বোলিং এ্যাকশন ত্রুটিপূর্ণ শনাক্ত হওয়ার আগে প্রতিপক্ষদের কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ইনজুরি এবং অফফর্মের কারণে অনেক দিন বাইরে থেকে এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) ভয়ানক বোলিং করে নিউজিল্যান্ড সফরের দলে ফিরেছিলেন। শেষ মুহূর্তে গোঁড়ালির ইনজুরিতে আর খেলা হয়নি। দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থেকে সবেমাত্রই ফিটনেস ফিরে পাওয়ার অনুশীলন শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা সন্তোষজনক পর্যায়ে না পৌঁছনোয় বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাননি। এরপর এক প্রতিক্রিয়ায় হতাশ তাসকিন কেঁদে ফেলেন। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি ফিটনেস ফিরে পাওয়ার। কিন্তু হয় তো সেটা যথেষ্ট ছিল না। ভাগ্য খারাপ ছাড়া কিছু বলার নেই আমার। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, আমি আবার ধারাবাহিক পারফর্মেন্স দিয়ে ফিরে আসব।’ তার বিষয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু অবশ্য আশার একটি বাণী শুনিয়ে রেখেছেন। নান্নু বললেন, ‘আমরা ওকে নিয়ে অনেক দিন থেকেই চিন্তা করছি। সে কিন্তু ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশের হয়ে। ওটার পরে কিন্তু আমরা যখন ওকে নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য চিন্তাভাবনা করেছিলাম তখন আবার ইনজুরিতে পড়ে গেছে। আমাদের কাছে যে রিপোর্টগুলো আছে ফিজিওর, ও এখনও পুরোপুরি ফিট না। স্কিলের দিক দিয়ে পুরোপুরি ফিট হিসেবে চাচ্ছিলাম ওকে। এখন ওকে নিতে চাচ্ছি না। ঘরোয়া ক্রিকেটে একটা ম্যাচ খেলেছে সে। তবুও তার ফিটনেস সন্তোষজনক নয়। তবে এখনও সময় আছে। আয়ারল্যান্ড সফরে আমাদের ১৭ সদস্য যাচ্ছে। এর মধ্যে ও যদি পুরো ফিট হয়ে যায় এবং দরকার হয় তাহলে ওকে আমরা ব্যাকআপ হিসেবে রাখব। একটা দীর্ঘ বিরতি পড়ে গেছে (আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে)।’ দুই পেসারের দুই রকমের অনুভূতি থাকলেও একেবারেই আনন্দে ভাসছেন মোসাদ্দেক হোসেন। এবারই প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলবেন তিনি। তবে সুযোগ পেয়ে কিছুটা অবাকই হয়েছেন নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে দীর্ঘ সময় দলের বাইরে থাকা এ তরুণ। তিনি বলেন, ‘যখন থেকে খেলা শুরু করি তখন থেকেই স্বপ্ন দেখি বিশ্বকাপে খেলব। ঘুম থেকে ওঠার পর যখন শুনলাম তখন স্বাভাবিকভাবেই অবাক হয়েছি। অবশ্যই অনেক ভাল লাগছে। এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা অর্জন। চেষ্টা করব সুযোগ পেলে ভাল কিছু করার।’ মূলত সম্প্রতি প্রিমিয়ার লীগে দুর্দান্ত ফর্মে থাকার সুবাদেই এ সুযোগটা পেয়েছেন তিনি। কার্যকর অফস্পিনের পাশাপাশি ব্যাটিং হাতেই বেশি দুরন্ত মোসাদ্দেক এবার এ আসরে আবাহনীর হয়ে ১২ ম্যাচে মাঠে নেমে মাত্র ৮ বার বল হাতে নিয়েছেন। তাতে ২৩.৮৫ গড়ে ৭ উইকেট পেয়েছেন। ইকোনমি রেট দারুণ- ৩.৯৭। ব্যাটিংয়ে ১২ ইনিংসের একটিমাত্র শূন্য রানের ইনিংস বাদে বাকি ১১ ইনিংসে ৫টি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস। একটি সেঞ্চুরিসহ ৪৭.৫৫ গড়ে ৪২৮ রান করেছেন। প্রধান নির্বাচক নান্নু তার বিষয়ে বলেন, ‘মোসাদ্দেক ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল করেছে। মাহমুদুল্লাহর কাঁধের চোট পুরো সেরে ওঠেনি। ফলে ও বোলিং করবে না। আমরা একজন বিকল্প অফস্পিনার অলরাউন্ডার চাইছিলাম।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশ্য তেমন ভাল পরিসংখ্যান নেই এ তরুণের। ২৪ ম্যাচের ২০ ইনিংসে ৩১ গড়ে ৩৪১ রানের পাশাপাশি ২২ ইনিংসে বল হাতে নিয়ে পেয়েছেন ১১ উইকেট। আর ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মতো কন্ডিশনে ১০ ম্যাচ খেলে ৮ ইনিংসে ২৭.৮ গড়ে ১৩৯ রান তার। কিন্তু ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসকে থমকে দিয়েছিলেন ৩ ওভারে মাত্র ১৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে। এবার দেশের হয়ে বড় মঞ্চে স্মরণীয় কিছু করার জন্য মুখিয়ে আছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপে প্রতিটা ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ছোটবেলা থেকেই উত্তেজনা কাজ করে যে ভারতের সঙ্গে খেলা নিয়ে। আমার কাছে ভারতের সঙ্গের ম্যাচই বেশি উত্তেজনার ম্যাচ মনে হয়।’
×