স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচিত্র বিষয় উঠে আসে সেলুলয়েডে। তাই রুপালি পর্দা নিছক বিনোদনের তকমা ছাপিয়ে হয়ে ওঠে জীবনের দর্পণ। উঠে আসে মুক্তিকামী মানুষের জীবন সংগ্রাম থেকে মানবাধিকার রক্ষার চালচিত্র। সেই সূত্র ধরে উঠে আসে সভ্যতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো পীড়নের কথাও। পৃথিবীর মানুষের মুক্তি ও মানবাধিকার রক্ষার নানা প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম মেলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে শুরু হচ্ছে সপ্তম আন্তর্জাতিক মুক্তি ও মানবাধিকারবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র উৎসব। এবারের উৎসবের প্রতিপাদ্য ‘রোহিঙ্গা পীড়ন’। দু’জন দেশী চলচ্চিত্রকার নির্মিত দুটি প্রামাণ্যচিত্র ছাড়াও উৎসবে প্রদর্শিত হবে বিশে^র ১৩ দেশের প্রামাণ্যচিত্র। কাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এ উৎসবের উদ্বোধন হবে। এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন মুক্তিযোদ্ধা ও সঙ্গীতজ্ঞ সুজেয় শ্যাম। উদ্বাধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে চিত্রশিল্পী দিলারা বেগম জলি পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র ‘জঠরলীনা’ প্রদর্শিত হবে। পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব চলবে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত। আগামী বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য হবে ‘বঙ্গবন্ধু : দ্য লিবারেশন’। মঙ্গলবার সকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের উৎসব ও আগামী বছরের উৎসবের বিষয়ে এ সকল তথ্য জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন উৎসব পরিচালক বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক আহমেদ। বক্তব্য প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উর্ধতন কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাকর্মীবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এবারের উৎসব নিয়ে জানানো হয়, আগারগাঁয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মূল মিলনায়তন, সেমিনার রুম (বেসমেন্ট-২) প্রামাণ্যচিত্রগুলো প্রদর্শন করা হবে। শুধু ১৯ ও ২১ এপ্রিল উন্মুক্ত মঞ্চেও চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। চারটি বিভাগে এবার চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শন করা হবে। ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম সেকশন বিভাগে সারাবিশ্বের সাম্প্রতিক মুক্তি ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। এতে এ বছরের অস্কারে শর্ট লিস্টেড স্পেনের প্রামাণ্যচিত্র ‘দ্য সাইলেন্স অব আদারস’ প্রদর্শিত হবে। নাইন্টিন সেভেনটি ওয়ান এ্যান্ড বিয়ন্ড বিভাগটি মূলত প্রতিযোগিতামূলক বিভাগ। এখানে বাংলাদেশের সম্প্রতি নির্মিত আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী সময় নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। এ বিভাগে প্রদর্শিতব্য চলচ্চিত্রসমূহের সর্বোচ্চ ব্যাপ্তিকাল ৬০ মিনিট। এ বছর প্রতিযোগিতার জন্য পাঁচটি ছবি নির্বাচন করা হয়েছে। ছবিগুলো হলো দিলারা বেগম জলির ‘জঠরলীনা’, ফরিদ আহমেদের ‘লালসবুজের দীপাবলী’, তারেক মাহমুদের ‘শব্দসেনা’, ফুয়াদ চৌধুরীর ‘মারসিলেস মেইহেম’ এবং ফারশাত রিজওয়ানের ‘জননী যন্ত্রণা’। এই বিভাগে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রামাণ্যচিত্রসমূহ থেকে একটি ছবিকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেয়া হবে। যার মূল্যমান ১ লাখ টাকা।
ওয়ান মিনিট ফিল্ম সেকশন বিভাগে ১ মিনিট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট চলচ্চিত্রসমূহ প্রদর্শিত হবে। এই বিভাগে প্রদর্শনের জন্য তিনটি বিষয় নির্ধারণ করা হয়। নির্বাচিত চলচ্চিত্রের বিষয় : মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে একদিন, বধ্যভূমিতে একদিন অথবা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে একদিন। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই বিভাগে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। অংশগ্রহণকারীদের বয়সসীমা ১২-২২ বছর। এ বছর প্রায় ৩০ ছবি প্রদর্শিত হবে এই বিভাগে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এক্সপেরিয়েন্স : দ্য লাস্ট গুডবাই বিভাগে ইউসি শোহা ফাউন্ডেশন- ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কালিফোর্র্নিয়ার সহায়তায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়াবহতা ও হত্যাযজ্ঞ নিয়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি চলচ্চিত্র ‘দ্য লাস্ট গুডবাই’। ছবিটির দৈর্ঘ্য ১৫ মিনিট। ছবিটি দেখার জন্য পূর্বে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন থেকে লটারির মাধ্যমে ছবিটি দেখার সুযোগ দেয়া হবে। বিস্তারিত : বা ভন.পড়স/রভফভষযৎ থেকে জানা যাবে।
উৎসবে থাকছে এক্সপোজিশন অব ইয়াং ফিল্ম ট্যালেন্ট বিষয়ক কর্মশালা। চার দিনব্যাপী কর্মশালা উৎসব চলাকালীন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিভাগে ১২ জন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা তাদের প্রকল্পসমূহ জমা দিয়েছেন, যাদের অধিকাংশেরই বিষয় মুক্তিযুদ্ধ। এছাড়া ১০ জন চলচ্চিত্র নির্মাতা পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। নির্বাচিত সেরা নির্মাতার উপস্থাপিত প্রকল্প থেকে ছবি নির্মাণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকার অনুদান সহায়তা পাবেন। এই কর্মশালাটি ঢাকা ডকল্যাব ও বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করা হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতাগণ কর্মশালা পরিচালানা করবেন। উৎসব ওয়েবসাইট : ও উৎসবের ফেসবুক পেজ থেকে বিস্তারিত জানা যাবে।