ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এ্যাকশন এইডের গবেষণা রিপোর্ট

রানা প্লাজা ধসে আহতদের ৫১ শতাংশের কর্মক্ষমতা নেই

প্রকাশিত: ১১:১২, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

রানা প্লাজা ধসে আহতদের ৫১ শতাংশের কর্মক্ষমতা নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে ২০ দশমিক ৫০ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতার কারণে ৫১ শতাংশ আহত শ্রমিক কাজ করতে পারছেন না। এই কাজ করতে না পারাদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ শারীরিক দুর্বলতা এবং ২৭ শতাংশ মানসিক দুর্বলতার কারণে কাজ করতে পারছেন না। এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘রানা প্লাজার ৬ বছর পর পোশাক খাত’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এসট্রপ পিটারসেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ। অনুষ্ঠান প্ররিচালনা করেন এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এ্যাকশন এইডের ম্যানেজার নুজহাত জাবিন। এ্যাকশন এইডের গবেষণা প্রতিবেদনটি রানা প্লাজার জীবিত এক হাজার ৪০০ শ্রমিকের মধ্যে ২০০ জনের সঙ্গে কথা বলে তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিক দাবি করেছেন, তাদের অবস্থার অবনতি হয়েছে। অন্যদিকে ৫১ শতাংশ বলেছেন তাদের অবস্থা কোনরকম স্থিতিশীল এবং ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পূর্ণ স্থিতিশীল হয়েছেন। শ্রমিকরা তাদের প্রধান সমস্যা হিসেবে মাথা, হাত-পা এবং কোমর ব্যথার কথা বলেছেন। এদিকে আহতের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে এ্যাকশন এইড বলছে, মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গত বছরের ২২ দশমিক ৫ শতাংশের বিপরীতে এ বছর বিপর্যস্তদের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। বর্তমানে ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ জীবিত শ্রমিক দাবি করেছেন, তারা কমবেশি স্থিতিশীল এবং ২১ শতাংশ পুরোপুরি আঘাত কাটিয়ে উঠেছেন। এ্যাকশন এইডের গবেষণায় দেখা যায়, ৪৯ শতাংশ আহত শ্রমিক বিভিন্ন ধরনের বেতনভুক্ত এবং স্বনির্ভর কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আর বাকি ৫১ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন, তারা কোন কাজ করতে পারছেন না। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বলেন, মজুরি বাড়ালেও শ্রমিকরা তার ফল পায় না। এর প্রধান কারণ, বাড়তি বাড়ি ভাড়া। মজুরি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ভাড়া বেড়ে যায়। তাই স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করা যায়, সেই বিষয়ে কাজ করছি। এটি করতে পারলে শ্রমিকরা উপকার পাবেন। তিনি বলেন, রানা প্লাজা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এখন এ থেকে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তহবিল গঠন, শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি, দুর্ঘটনা মোকাবেলায় সক্ষমতা তৈরিসহ বেশকিছু প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেয়া হয়। এখন ওসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের গতি অনেকটা কমে গেছে। এ ছাড়া কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে আমরা অগ্রগতি করতে পারলেও বিদেশী বিক্রেতা ও ভোক্তাদের সমস্যার কথা আমরা বুঝাতে পারেনি। এসব ক্ষেত্রে এখন আমাদের জোর দিতে হবে। বেতন বাড়ানোর পরও শ্রমিকরা নিম্নমানের জীবনযাপন করছেন উল্লেখ করে এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, এখনও ১৭ শতাংশ শ্রমিকের ঘুমানোর বিছানা নেই। ১৩ শতাংশ ফ্যান ছাড়া ঘুমান। ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, বলা হচ্ছে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি অংকে এটি বিশ্লেষণ করি তাহলে কি দাঁড়াবে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মিল রেখে মজুরি বাড়াতে পেরেছি? ২০১৩ সালে ৫ হাজার ৩০০ টাকায় যে পণ্য ক্রয় করা যেত ২০১৮ সালে এসে ওই পণ্য কিনতে লাগছে ৭ হাজার ৯০০ টাকা। অর্থাৎ সেই হিসাবে শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে মাত্র ১০০ টাকা। অর্থাৎ বাস্তব অর্থে আমাদের মজুরি বাড়েনি। অন্যদিকে খরচ ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলাতে না পেরে রানা প্লাজা ঘটনার পরবর্তী অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়টিও মালিক, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখতে হবে। ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত বলেন, একটি ভাল শ্রম বাজার তৈরি করতে না পারলে এসডিজি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এটি করতে হলে আন্দোলন নয়, রাজনৈতিক আলোচনা ও পদক্ষেপ দরকার। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে ৯ তলা ভবন রানা প্লাজা ধসের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৭৫ জনের বেশি শ্রমিক প্রাণ হারান। আহত হন আরও কয়েক হাজার। দেশের ইতিহাসে ভবন ধসে একসঙ্গে এত শ্রমিক মারা যাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।
×