ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষিত

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষিত

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রেস কনফারেন্স রুমে দল ঘোষণা করেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাচক ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে আগামী ৩০ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন তিনি। যথারীতি মাশরাফি বিন মর্তুজাই অধিনায়ক। তার ডেপুটি থাকছেন সাকিব আল হাসান। দলে একটি চমকও রয়েছে। তিনি আবু জায়েদ রাহী। এ পেসার এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের হয়ে কোন আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলেননি। তিনি বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়ে গেছেন। রাহী ছাড়াও গত বছর সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়া এশিয়া কাপের পর ওয়ানডে দলে সুযোগ না পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েছেন। যাকে নিয়ে এত আলোচনা হয়েছে, সেই পেসার তাসকিন আহমেদকে শেষপর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে রাখা হয়নি। বিশ্বকাপ দলে বিবেচনা করা হয়নি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস ও পেসার শফিউল ইসলামকেও। বিশ্বকাপের দলে আছেন মাশরাফি, সাকিব, তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহীম (উইকেটরক্ষক), মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান রুম্মন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও আবু জায়েদ রাহী। গত বিশ্বকাপে, ২০১৫ সালে হওয়া অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপে যারা খেলেছেন, তাদের মধ্য থেকে এনামুল হক বিজয়, মুমিনুল হক, নাসির হোসেন, তাইজুল ইসলাম, আল-আমিন হোসেন, আরাফাত সানি এবং তাসকিন আহমেদ বাদ পড়েছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজের দলে যারা ছিলেন, তাদের মধ্য থেকে বাদ পড়েছেন তাসকিন, শফিউল ও স্পিনার নাঈম হাসান। গত বিশ্বকাপে এবং সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে সিরিজে সৈকত ও রাহী ছিলেন না। এ দুইজন এবার বিশ্বকাপের জন্য বিবেচিত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিশ্বকাপ দল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচকের সঙ্গে নির্বাচক কমিটির সদস্য ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন, বিসিবির পরিচালক, সাবেক অধিনায়ক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান এবং বিসিবির পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন করে দল ঘোষণা করা হয়। সেখানে নান্নুকে বহুবিদ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। শুরুতেই অভিজ্ঞ দল গঠন করার কথা বলেন নান্নু। তিনি জানান, ‘যেহেতু ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপটি হচ্ছে। সুতরাং এখানে আমরা অভিজ্ঞতাকে বেশি মূল্যায়ন করেছি। আর ওখানকার কন্ডিশন উপমহাদেশ থেকে ভিন্ন। আমরা কিন্তু এক বছর (২০১৭ সালে) আগেও ওখানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে এসেছিলাম। সেই অভিজ্ঞতার কথা চিন্তা করেই কিন্তু অভিজ্ঞ দল সাজানো হয়েছে।’ স্বাভাবিকভাবেই সংবাদ সম্মেলনে তাসকিন প্রসঙ্গ আসবে। তিনিই যে বিশ্বকাপ দল দেয়ার আগে সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন। তাসকিন নিয়ে নান্নু বলেন, ‘আমরা ওকে নিয়ে অনেক দিন থেকেই চিন্তা করছি। সে কিন্তু ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ (ওয়ানডে ম্যাচ) খেলেছে বাংলাদেশের হয়ে। ওটার পরে কিন্তু আমরা যখন ওকে নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য চিন্তা ভাবনা করেছিলাম তখন আবার ইনজুরিতে পড়ে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত সে পুরোপুরি ফিট না। সেই হিসেবে আমরা তাকে স্কিল ফিট হিসেবে চাচ্ছি না। সে ঘরোয়া লীগে একটি ম্যাচে খেলেছে স্কিল ফিট হিসেবে। কিন্তু তার ফিটনেস শতভাগ নয়।’ রাহী এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের চমক। আর সৈকত তো পরীক্ষিত ক্রিকেটার। এ দুইজনকে দলে ভেড়ানো নিয়ে নান্নু ব্যাখ্যা দিলেন, ‘নিউজিল্যান্ড কন্ডিশনে সে (রাহী) টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল। ওয়ানডে খেলার সুযোগ পায়নি। তবে সেই কন্ডিশনে আমরা যতটা দেখেছি যে ওর বোলিংয়ে যথেষ্ট সুইং আছে। আমাদের পেসারদের মধ্যে সুইং বোলারের সংখ্যা বেশ কম। যেহেতু ইংলিশ কন্ডিশনে খেলা, আয়ারল্যান্ডেও ত্রিদেশীয় সিরিজ আছে। আর মে এবং জুন মাসের দিকে ঠা-াও বেশি থাকে। তাপমাত্রাও অনেক কম থাকে। সেই হিসেবে পেসারদের মধ্যে সুইং বোলার কাউকে যদি অন্তর্ভুক্ত করতে পারি তাহলে সেটি আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। সেই চিন্তা করে রাহীকে দলে রাখা হয়েছে। আরেকজন হলো সৈকত। সৈকত ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলেছে। আর আমরা একজন অলরাউন্ডার চাচ্ছিলাম যে অব স্পিন করতে পারে। কারণ রিয়াদেরও একটি কাঁধের ইনজুরি আছে। তাই সে বোলিং নাও করতে পারে। সেই কথা চিন্তা করে যেন ব্যাকআপ হিসেবে একজন স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার দরকার হয় তাই সৈকতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’ বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলের আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ রয়েছে। বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি ও স্পিনার নাঈম হাসানকেও রাখা হয়েছে। বিশ্বকাপ দল যেখানে ১৫ সদস্যের, সেখানে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের দল দেয়া হয়েছে ১৭ সদস্যের। যদি কেউ ইনজুরিতে পড়েন কিংবা আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে অনেক বাজে খেলেন, তাহলে ইয়াসির অথবা নাঈমেরও বিশ্বকাপ দলে ঢুকে পড়ার সুযোগ থাকবে। শুধু এই দুইজনই নন, তাসকিন, ইমরুল, শফিউলদেরও যে বাদ দেয়া হয়েছে, কেউ ইনজুরিতে পড়লে তাদেরও সুযোগ মিলে যেতে পারে। নান্নু তাই জানালেন, ‘আয়ারল্যান্ড সফরের পারফর্মেন্স তো অবশ্যই গণ্য হবে। আর এটি চিন্তা ভাবনা করতে হবে। যেহেতু ২২ মের (২৩ মে) আগে একটা (পরিবর্তন করার) সুযোগ আছে। সেই হিসেবে এখনই নিশ্চিত থাকা যাবে না, আমাদের পারফর্মেন্স এ্যানালাইসিস করতে হবে। আমাদের কিছু খেলোয়াড়ের ইনজুরিও আছে। আর যেহেতু একটা লম্বা সফরে যাচ্ছি, এই সময়ের মধ্যে যদি কেউ ইনজুরিতে পরে সেক্ষেত্রে আমাদের ব্যাকআপ খেলোয়াড় রাখতে হবে। ১৭ জনের বাইরে এখানে (দেশে) যারা খেলোয়াড় আছে তাদেরও আমরা একটি প্রস্তুতির মধ্যে রাখব। কারণ, কখন কাকে দরকার হয় বলা যায় না। মানসিকভাবে সেভাবে তৈরি করে রাখতে হবে যেন দ্রুতই রিপ্লেস করা যায়।’
×