ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বোরকা ও কেরোসিন কিনে আনে এরা

নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যায় জড়িত তরুণীসহ দুই ছাত্রী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১১:০৫, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যায় জড়িত তরুণীসহ দুই ছাত্রী গ্রেফতার

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয়া কামরুন্নাহার মনি (১৮)সহ দুই ছাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আলোচিত এই দুই তরুণী নুসরাত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কেরোসিন ও বোরকা কিনে এনেছিল। এদের একজন নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এদিকে এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত আরেক আলোচিত আসামি হাফেজ আব্দুল কাদেরকে খুঁজছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। অন্যদিকে নুসরাত হত্যার এক মাসের মধ্যে রায় চায় মানবাধিকার কমিশন। স্থানীয় সূত্র জানায়, মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয়া কামরুন্নাহার মনিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সে ওই মাদ্রাসার আলীম পরীক্ষার্থিনী। মঙ্গলবার দুপুরে মনিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদ্রাসার সামনে থেকে আটক করা হয়। ফেনী জেলা পিবিআইয়ের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে জান্নাতুল আফরোজ নামে আরেক ছাত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা নুসরাত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কেরোসিন ও বোরকা কিনে এনেছিল। পিবিআইপ্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয়া মনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে কেরোসিন ও বোরকা কিনে মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারে এনেছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। পিবিআই সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সন্দেহভাজন আসামি মনি। সে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল। এমনকি নুসরাতকে পুড়িয়ে মারতে ব্যবহৃত এক লিটার কেরোসিন পলিথিনে বহন করে এনেছিল এই মনি। সোনাগাজী উপজেলার পালগিরী গ্রামের বদির আহম্মদ ভূঞাঁ বাড়ির সালেহ আহম্মদের মেয়ে। ওই মাদ্রাসার মাওলানা মোঃ হোসাইন জানান, মাদ্রাসার ছাত্রী জান্নাতুল আফরোজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুরে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে জান্নাতুলকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ। সে স্থানীয় আবদুল আজিজের মেয়ে। পিবিআই সূত্র জানায়, এ নিয়ে মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত আটজনের মধ্যে ৭ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, এই হত্যাকা-ে সরাসরি অংশ নেয়া হাফেজ আব্দুল কাদেরকে গ্রেফতার করতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শাহ আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, হাফেজ আব্দুল কাদের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। এই মামলার অন্যতম প্রধান আসামি নুর উদ্দিন ও শামীম রবিবার রাতে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলছিল, তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী উম্মে সুলতানা পপি গিয়ে নুসরাতকে ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। ওই সময় ছাদে কামরুন্নাহার মনি ছিল। সন্দেহের তীর স্থানীয় প্রভাবশালী এক উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতার দিকে ॥ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতকে কেরোসিন ঢেলে হত্যার ঘটনায় শুরু থেকেই আলোচনায় ছিল সেখানকার উপজেলা এক আওয়ামী লীগ নেতার। তিনি ওই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি। এই মামলা তদন্তকারী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রবিবার রাতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আলোচিত অন্যতম আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। আর এতেই উঠে আসে আওয়ামী লীগের ওই নেতার নাম। নুসরাতের পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বানানোর চেষ্টাও চলে ॥ মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে আগুন দেয়ার পর পরই ঘটনাটি ‘আত্মহত্যাচেষ্টা’ বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা হয়েছে। সোনাগাজী থানার প্রত্যাহার হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের ‘ভাষ্য’ দিয়ে ‘আত্মহত্যাচেষ্টা’ বলে চালিয়ে দেয়ার প্রচারে ছিলেন একটি পত্রিকার সোনাগাজী প্রতিনিধিসহ অনেকে। নুসরাতের পরিবারের অভিযোগ, নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালানো হয় ‘আত্মহত্যাচেষ্টা’ হিসেবে। এই অপপ্রচারে ছিল কিলিং মিশনের অংশ। বিপুল অর্থের বিনিময়ে হয়েছিল অপপ্রচারটি। যদিও ওই সাংবাদিকের দাবি, তিনি প্রত্যাহার হওয়া ওসির কথায় এই স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। ৬ এপ্রিল সকাল পৌনে ১০টার দিকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন দেয়া হয়। রাফি হত্যার আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বাড়িতে তালা ॥ মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার পরিবার ঘরে তালা দিয়ে পালিয়েছে। ফেনী শহরের পাঠানবাড়ী এলাকার মকছুদুর রহমান সড়কের ‘ফেরদৌস মঞ্জিল’ নামে দোতলা বাড়িটি অধ্যক্ষ সিরাজের। ঘটনার পর থেকে ওই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে সিরাজ উদদৌলার পরিবারের সদস্যরা। নুসরাত হত্যা এক মাসের মধ্যে রায় চায় মানবাধিকার কমিশন ॥ মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর আখ্যা দিয়ে এক মাসের মধ্যে তার হত্যা মামলার রায় চেয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। মঙ্গলবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এ দাবি জানান।
×