ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বব্যাংক- আইএমএফ সভা শেষ

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সঠিক পথে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:০৩, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সঠিক পথে বাংলাদেশ

এম শাহজাহান, ওয়াশিংটন থেকে ॥ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ সঠিক পথে হাঁটছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বর্তমান সরকার কর্তৃক বেশকিছু উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে সংস্থাটি। উন্নয়নশীল বিশ্বে বাংলাদেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে। বর্তমান বিশ্বে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে ৭০ কোটির বেশি মানুষ। কিন্তু জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী দশ বছরের মধ্যে স্থায়িত্ব উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য দূর করতে হবে। আর এটি করতে হলে ৬৮ কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের নিচ থেকে বের করে আনা প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন সভার শেষ দিনে দারিদ্র্য নির্মূল সংক্রান্ত এক সভায় এসব বিষয় উঠে আসে। গত ৮-১৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সভায় ১৮৯টি সদস্যরাষ্ট্র অংশগ্রহণ করে। সভায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় দারিদ্র্য বিমোচন। বিশ্বব্যাংক বলছে, বর্তমান বিশ্বে আর দারিদ্র্য নয়। এখন দারিদ্র্য একেবারে বিদায় করার সময়। দারিদ্র্য বিমোচনে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মতামতও চাওয়া হয়েছে এবারের বৈঠকে। শুধু তাই নয়, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের দারিদ্র্য সংখ্যা নির্মূল করতে প্রতিটি দেশে এ্যাকশন প্লান গঠনের আহ্বান জানানো হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে। দারিদ্র্য নিরসনের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বের ১৮৯টি দেশকে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত আট দিনব্যাপী বিশ্বব্যাংক-আইএমফের বসন্তকালীন বৈঠক শেষ হয়েছে। এবারের বৈঠকের শেষের দিন বক্তব্যে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস বলেছেন বিশ্বের অনেক দেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর চ্যালেঞ্জের প্রতি আমরা মনোযোগ দিয়েছি। বর্তমান বিশ্বেও ৭০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের নিচে বাস করছে। এদের আয় বৃদ্ধিও সমৃদ্ধ অর্জন অপ্রতুল। এ জন্য তাদের তুলে আনতে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া অর্থনীতিতে নারী ও যুবকদের পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত করে আরও শক্তিশালী ও স্থিতিশীল বিশ্ব অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য বিশ্বব্যাংক নিরলসভাবে কাজ করছে। এদিকে বসন্তকালীন বৈঠকে আলোচনায় গুরুত্ব পায় দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও বিশ্ব অর্থনীতি। সেখানে বলা হয়, এই মুহূর্তে ৭০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। যাদের প্রত্যেকের গড় আয় প্রতিদিন ১৬১ টাকা (১ দশমিক ৯০ ডলার)। এই দারিদ্র্যের হার ১৯৯০ এবং ২০০০ দশকের চেয়ে বেশি। তবে এ দারিদ্র্যের সংখ্যা বেশি হচ্ছে সাব সাহারাতে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৮ কোটি দারিদ্র্য মানুষকে দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করে আনতে একমত পোষণ করেন বিশ্ব অর্থনৈতিক নেতারা। এ কাজটি সুন্দরভাবে সফল করতে প্রত্যেক দেশকে নিজস্ব কৌশল ও এ্যাকশন প্লান জরুরী ভিত্তিতে প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। বৈঠকে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের মন্দার পূর্বাভাস বিরাজ করছে বলে আভাস দেয়া হয়। এর ফলে নিম্নমানের ঝুঁকি বাড়ছে। পাশাপাশি তুলে ধরা হয় এই মুহূর্তে বৈশ্বিক বাণিজ্য হ্রাস পাওয়া বিনিয়োগের সম্ভাবনা কমে যাওয়ার বিষয়কে। এ জন্য চাকরি বাজার কমছে ও ঋণ দুর্বলতা অব্যাহত আছে। আর নীতি অনিশ্চয়তার আস্থা নষ্ট হচ্ছে। সেখানে এসব সূচক পর্যালোচনা করে বলা হয় এগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এই উদ্বেগগুলো নিয়ে বিশ্বব্যাংক কাজ করছে। সম্মেলনে বিশ্ব অর্থনীতির দিকগুলো তুলে ধরে বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষ নানা ধরনের সমস্যার মোকাবেলা হচ্ছে। ২০১৮ অর্থবছরে শেষ কোয়াটারে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। বৈঠকে বাংলাদেশও বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সহায়তা চাওয়ায় দেশে আধুনিকমানের শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। এছাড়া বড় প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে অর্থায়ন করতে বলা হয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগের আহ্বান ছিল বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনেক ইস্যু তুলে ধরা হয়েছে বৈঠকে। শিক্ষা খাতে সব বেশি সহায়তা এই বৈঠকে চাওয়া হয়। এছাড়া বিশ্বব্যাংক এই বৈঠকে বেশি কিছু শর্ত দিয়েছে চলমান প্রকল্পগুলো শেষ করতে। সেগুলো মেনে নেয়া হয়েছে। বৈঠকে ব্যাংকিং খাত নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে এই মুহূর্তে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওই বৈঠকে জলবায়ু চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বসন্তকালীন সম্মেলন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে একটি বৈঠক হয়। সেখানে ৩৫ জন অর্থমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেছেন। প্রত্যেকে কথা বলেছেন। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী বলেন, এসডিজি অর্জন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন অর্থায়ন। মোট অর্থের পরিকল্পনা নিরূপণ করেছে। বাংলাদেশ নিরূপণ করেছে এক ট্রিলিয়ন ডলার। সেখানে আরও বলা হয় এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছে। এ জন্য প্রতিটি দেশ এ ধরনের রূপরেখা প্রণয়ন করলে এ খাতে কত টাকার প্রয়োজন সে হিসাব পাওয়া যাবে। পরবর্তীতে এসডিজি বাস্তবায়নে সহজ হবে।
×