ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক বহনে নতুন কৌশল ভারতীয় কারবারিদের

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক বহনে নতুন কৌশল ভারতীয় কারবারিদের

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত ঘুরে এসে ॥ এবার ভারতীয় অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা এখন অস্ত্র বহনে মুটে মজুর ব্যবহার না করে ব্যবহার করছে যানবাহন। একই সঙ্গে প্রতিরোধে ব্যবহার করছে অস্ত্র। তাই বাংলাদেশে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশের মুখে প্রথমেই তাক বা লক্ষ্যবস্তু করছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে। পরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে অনুধাবন করার চেষ্টা করছে তাদের ধরার জন্য কেউ ওঁৎপেতে রয়েছে কি না? বুঝতে পারলে অস্ত্র ভর্তি যানবাহন ফেলে কিংবা যানবাহনে রাখা অস্ত্রের বস্তা নিয়ে ঢুকে পড়ছে আবার ভারতে। এসব নিয়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুবই চিন্তিত, বিব্রত। তারা এতদিনকার কৌশল পুরোপুরি পরিবর্তন করে এগোবার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে বৃহত্তর রাজশাহীর চাঁপাই সীমান্তে ও পবা সীমান্তে দুটি ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেকটাই নড়েচড়ে বসেছে। প্রথমটি ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের সোনামসজিদ এলাকার খনিয়াদীঘি এলাকায়। এটি ঘটেছে ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার গভীর রাতে। অভিযানে যদিও তিনটি ওয়ানশূটার গান, ২টি ইউএসএ পিস্তল, ১৩ রাউন্ড গুলি ২৯৮ বোতল ফেন্সিডিলসহ একটি ভারতীয় মিশুক আটক করে বিজিবি। অস্ত্র বহনে এই মিশুকটি ব্যবহার করা হয়েছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৫৯ বিজিবি অস্ত্র গোলাবারুদ ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে। বিজিবি ৫৯ ব্যাটালিয়নের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় কতিপয় ভারতীয় চোরাকারবারি কৌশল পরিবর্তন করে যানবাহনে এসব অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আনছিল। বিজিবির একটি টহল দল খনিয়াদীঘি এলাকায় অবস্থান নিয়ে প্রহর গুনতে থাকে। রাত সোয়া একটার দিকে ভারতের সীমান্ত থেকে একটি মিশুক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। টহল দল (বিজিবির) মিশুকটিকে চ্যালেঞ্জ করলে গাড়িতে থাকা অস্ত্র চোরাকারবারিরা টহল দলের ওপর কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। জবাবে টহল দল আত্মরক্ষার স্বার্থে চোরাকারবারিদের ওপর পাল্টা ৭ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে চোরাকারবারিরা মিশুক থেকে নেমে কয়েক বস্তা নিয়ে একটি আমবাগানে ঢুকে পড়ে। পরে ভারতে চলে যায়। গুলি বিনিময়কালে কেউ হতাহত হয়নি। পরে বিজিবি তল্লাশি চালিয়ে এইসব অস্ত্র উদ্ধার করে। দ্বিতীয় ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী সীমান্তের পবা উপজেলার বাথানবাড়ি সীমান্তে। ঘটনাটি ঘটেছে ৫ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে। এখানেও পাচারকারিদের সঙ্গে বিজিবির গোলাগুলি হয়েছে। এ অভিযানে বিজিবির ১ ব্যাটালিয়নের একটি টহল দল অংশ নিয়েছিল। নেতৃত্বে ছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম। গভীর রাতে পাঁচ জনের একটি পাচারকারী দল ভারত থেকে অস্ত্র ও মাদক নিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করা মাত্র বিজিবি সদস্যদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে চোরাকারবারিরা গুলি করে। এই সময় বিজিবি সদস্যরা আত্মরক্ষায় ১৪ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এই সময় পাচারকারীরা অস্ত্র, গুলি ফেলে ভারতে পালিয়ে যায়। পরে বিজিবি আমেরিকার তৈরি দুইটি পিস্তল, ৩টি ম্যাগজিন, ৭ রাউন্ড গুলি, ১২০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করেছে। এই দুটি ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন খুবই সজাগভাবে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে। যার কারণে মার্চ ও এপ্রিল মাসে একাধিক অভিযানে অস্ত্র ও গুলিসহ একাধিক অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করেছে। সম্প্রতি শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়ামারা এলাকা থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি উদ্ধারসহ ঝন্টু আলী (৩৫) নামের এক অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করে র‌্যাব। তার বাড়ি মরদনা। এই ধরনের টুকটাক অস্ত্র প্রায় উদ্ধার হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। ধরাও পড়ছে একাধিক অস্ত্র ব্যবসায়ী। স্থানীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা এখন মাদকের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছে। ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের অস্ত্র, গোলাবারুদ ঠেলে দিতে এখন নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করছে।
×