ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাতক্ষীরায় ১০ গ্রামের ফসল নষ্টের আশঙ্কা

নির্দেশ লঙ্ঘন করে নোনা পানি তোলার চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

নির্দেশ লঙ্ঘন করে নোনা পানি তোলার চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেট দিয়ে ফের নোনা পানি তোলার পাঁয়তারা চলছে। স্থানীয় জনসাধারণের আপত্তি এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে একটি প্রভাবশালী মহল নোনা পানি তুলে চিংড়ি চাষের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে দশটি গ্রামের সাত কিলোমিটার এলাকার মৌসুমি ফসল বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে বহু সংখ্যক মিষ্টি পানির পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছও মরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কালিগঞ্জের রতনপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের স্লুইস গেট দিয়ে এই পানি তোলার চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগী গ্রামবাসী এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে নতুন করে আবেদন করে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। পানি তোলা বন্ধ করতে তারা কালিগঞ্জ থানায়ও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। নোনা পানি তোলা বন্ধ রাখতে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদনকারী কৃষক ইমান আলি সরদার ও হাবিবুর রহমান জানান, তারা দীর্ঘদিন যাবত মিষ্টি পানি ব্যবহার করে কৃষি ও মৎস্য চাষ করে আসছে। সীমান্তের কালিন্দী নদী থেকে লবণাক্ত পানি তুলে শিবপুর স্লুইস গেট দিয়ে কলপলি খালের মধ্য দিয়ে একটি মহল নোনা পানি তোলা শুরু করেন। তারা এই পানি সাত কিলোমিটার দূরে খইতলা সোনাখালি খুবদিপুরের পুবের বিলে নিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষ করছিলেন। এর ফলে স্থানীয় খড়মী, মলেঙ্গা, মুড়াগাছা, আবদুলখালি, মাদকাটি, গোয়ালপোতা, আড়ংগাছাসহ প্রায় ১০ গ্রাম নোনা পানির কবলে পড়ে। নোনা পানিতে এসব গ্রামের কৃষি ও মিষ্টি পানির মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে থাকে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আবেদন করেন। গ্রামবাসীর আবেদন অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড নোনা পানি তুলতে নিষেধ করেন। কিন্তু তাদের নির্দেশনা না মানায় গ্রামবাসী উচ্চ আদালতে রিট করেন। তিন বছর আগে হাইকোর্টের এক আদেশে নোনা পানি তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সম্প্রতি গোয়ালপোতা গ্রামের বাগদা চিংড়ি চাষী মনসুর সরদার ও জাহিদুন্নবী মুন্না, খুব্দিপুর গ্রামের আবদুল আলিম, নৈহাটি গ্রামের আফসার আলিসহ কয়েকজন বাগদা চিংড়িচাষী নতুন করে কলপলি খাল দিয়ে কালিন্দি নদীর নোনা পানি ঢোকানোর চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে তারা পানি প্রবাহের জন্য ড্রেন ও খাল সংস্কার করেছেন। তারা যে কোন মুহূর্তে পানি তুলবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন বলে গ্রামবাসী জানান। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এই আশঙ্কা ব্যক্ত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কালিগঞ্জ থানার সহযোগিতা চেয়েছেন। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা ১নং ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর আবেদন পেয়ে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপবিভাগীয় প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কালিগঞ্জ থানায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা পেয়ে পুলিশের মাধ্যমে পানি তোলা বন্ধ রাখা হয়েছে দাবি করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকবল কম থাকায় রাতের আঁধারে কেউ গোপনে স্লুইস গেট দিয়ে পানি তুললে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে ।
×