ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ময়ূরপঙ্খী নিয়ে সুমন

প্রকাশিত: ১২:০৪, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

ময়ূরপঙ্খী নিয়ে সুমন

তরুণদের গতানুগতিক জীবন কেমন? পড়াশোনা করা, ক্যারিয়ার গড়ে তোলা আর অবসরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া। এরই মধ্যে একজন তরুণ একটু ভিন্নভাবে জগতটাকে দেখলেন। পরবর্তী এক যুগের বেশি সময় ধরে নিজেকে নিয়োজিত করলেন নানা রকমের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে। সুমন রহমানের শুরুটা হয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে। কিশোর সুমন উপবৃদ্ধি করতেন মানুষের জন্য কিছু করা উচিত। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে ডাস্টবিনে দুটো ছেলেকে খাবার কুড়াতে দেখেন তিনি। পকেট থেকে ১০ টাকা দিয়ে রুটি কিনে দেয়া। আসলে একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বীজ বপন হয়েছিল সেদিন। সেদিন রাতে সুমনের মাথায় দুটি ভাবনা কাজ করছিল। একদিকে ওই দুজন পথশিশুর তৃপ্তিটাকে আনন্দ দিচ্ছিল অন্যদিকে সে ভেবে যাচ্ছিল এরকম বহু শিশুই আছে। কিন্তু তাদের জন্য কী করা যায়? সুমন ধর্না দিলেন পরিচিত সবার কাছেই। কিন্তু কাজে নামার পর অল্প কিছুদিন যেতেই সবাই হাওয়া! কিছুদিন একাই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে গেলেন সুমন। কিছুদিন পর তিনি দেখা পেলেন তারই মতো কিছু মানুষের যারা সত্যিকার অর্থে এই সমাজের কিছু পরিবর্তন চায় এবং দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে যায়। এভাবেই যাত্রা শুরু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ময়ূরপঙ্খীর। ২০০৮ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলেও বন্ধুদের নিয়ে সুমনের মানবতার সেবা করার গল্প আরও আগে থেকেই। সেই থেকে ৪০০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করেছে তাদের স্কুল। ৩০০ জন নারী পেয়েছেন শিক্ষা এবং হাতে কলমে কাজ করার প্রশিক্ষণ সঙ্গে সরঞ্জাম। বর্তমানে এই সংগঠন দায়িত্ব নিয়েছে ৬০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর যারা বস্তি এলাকায় বেড়ে উঠছে। একইভাবে ৪০ জন নারীকে দেখাশোনা করা এবং স্বাবলম্বী করার কাজ করছে তারা। ময়ূরপঙ্খীর উদ্দেশ্যটা একটু অন্যরকম। শিক্ষা প্রদান বা পুষ্টিকর খাদ্য প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে সুবিধাবঞ্চিতদের ভবিষ্যতে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ তাদের। শুরুটা ঢাকার মিরপুরকেন্দ্রিক হলেও বর্তমানে আশেপাশের গ্রাম এলাকায় পাঠাগার স্থাপন এবং বই বিতরণ করছে ময়ূরপঙ্খী। বর্তমানে তাদের পাঠাগারে সদস্য সংখ্যা ৫২০ জন। ব্যক্তিগতভাবে একজন ইভেন্ট ম্যানেজার সুমন। নিজের আয়ের একটা বড় অংশ ঢেলে দিচ্ছেন সংগঠনে। সদস্যদের মাসিক চাঁদাই বর্তমানে সবচেয়ে বড় আয় এই সংস্থার। এছাড়াও কিছু অনুদান আছে, প্রকশিত ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপন থেকেও কিছু আয় হয়। ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে সুমন বলেন মানবতার যেমন সীমারেখা নেই তেমনি তাদেরও পরিকল্পনার কোন শেষ নেই! তরুণদের মধ্যে অনেকেই এখন এগিয়ে আসছেন মানবতার সেবায়। তাদের প্রতি সুমনের পরামর্শ, কে কী বলল সেদিকে না তাকিয়ে লক্ষ্য স্থির করে কাজ চালিয়ে যাওয়া। অন্যের মুখে হাসি ফোটানোটেই তো আত্মার শান্তি!
×