ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কার্টুনে বদলাবে বিশ্ব ॥ ফোর্বসের তালিকায় মিশু

প্রকাশিত: ১২:০৩, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

কার্টুনে বদলাবে বিশ্ব ॥ ফোর্বসের তালিকায় মিশু

স্বপ্ন ছিল সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশ সেবার। তবে তা হয়ে ওঠেনি, তাই এখন রং-তুলিতেই তার যুদ্ধ শান্তির পক্ষে। ক্যানভাস জুড়ে নিজের স্বপ্নকে এঁকে চললেও সন্তানকে নিয়ে একটা সময় দুশ্চিন্তার শেষ ছিলা না বাবা-মার। এখন যদিও সেখানে টকটকে লাল সূর্যের আভা, ছেলে যে গর্ব বাংলাদেশের। এখন খুশি পুরো পরিবারও। আর ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় সর্বকনিষ্ঠ সহকর্মীর নাম দেখে কর্মক্ষেত্র উন্মাদের অফিসে আনন্দের উন্মাদনা তো স্বাভাবিক। এমন অর্জনেই থেমে থাকছেন না মোরশেদ; গ্লোবাল হ্যাপিনেস চ্যালেঞ্জ থেকে এখন যুদ্ধটা- গ্লোবাল গড ফরবিড চ্যালেঞ্জে। পরিবার মোরশেদ মিশু ১৯৯১ সালের ২৯ জুলাই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ইব্রাহীমপুর আদর্শ পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। আকিকা করা নাম আব্দুল্লাহ আল মোরশেদ হলেও কার্টুন আঁকেন মোরশেদ মিশু নামে। তার ডাক নাম মিশু। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। গৃহিণী মা নীলুফা রাজ্জাককে নিয়ে মিশু বলেন, আমার চোখে আমার আম্মা রীতিমতো আয়রন লেডি। জীবনের কঠিন পরিস্থিতি দৃঢ়তার সঙ্গে সামলানোর অদ্ভুত গুণ আছে ওনার। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে মোরশেদ সবার ছোট। বড় বোন রাজিয়া ফেরদৌস পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। বড় ভাই নৌ বাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন। মোরশেদ মিশুর লিভিং লিজেন্ড তার মেজ ভাই পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত আব্দুল্লাহ আল মাহিন। কারণ কার্টুন আঁকার হাতেখড়ি এই ভাইয়েরর হাত ধরেই। শিক্ষাজীবন মোরশেদ মিশুর প্রথম স্কুল মিরপুরের ইউনিভার্সাল কিন্ডারগার্টেন। সেখানে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়া শেষে ভর্তি হন শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে। সেখান থেকে ২০০৮ সালে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। ২০১০ সালে ঢাকা বিএন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক। এরপর কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে ভর্তি হন মোরশেদ। তবে চার বছরের কোর্সে তৃতীয় বছরেই লেখাপড়া ছেড়ে দেন মিশু। এই বিষয়ে তিনি জানান, পড়ালেখার একটা সময় পর মনে হয়েছে সার্টিফিকেট কিংবা সিজিপিএর চেয়ে অধ্যবসায় আর একাগ্রতা বেশি গুরুত্ব বহন করে। মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর সময় নষ্ট করতে মন টানেনি। মনে রাখবেন, যে জিনিসে আপনার মন টানবে না, তার পেছনে শুধু শুধু সময় দেয়া প্রাণশক্তির অপচয় ছাড়া কিছু নয়। সার্টিফিকেটের ভরে বাঁচার চেয়ে আমার কাছে আনন্দ সহকারে বাঁচাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর ইরানের একটি জাতীয় দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল মোরশেদ মিশুর দ্য গ্লোবাল হ্যাপিনেস চ্যালেঞ্জ নিয়ে। এরপর তা বিস্তৃত হয়েছে সিএনএন, আলজাজিরা, বাজফিড, বোরডপান্ডাসহ ২৪টি দেশের ৭০টি সংবাদমাধ্যমে। তবে মিশুর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা উন্মাদ এর পুরস্কারটি। গত বছর জুলাই মাসে রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদের ৪০ বছর পূর্তি উৎসবে কার্টুন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। সে প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পায় মিশুর সিরিজটি। মিশু বলছিলেন, ‘আমি জীবনে কোন কাজে প্রথম হইনি। সেটাই প্রথম প্রথম হওয়া।’ হয়ে গেলেন কার্টুনিস্ট অধরা স্বপ্ন নিয়ে অনেকে কথা বলতে চান না। কিন্তু মোরশেদ মিশু অকপটে বললেন ছোটবেলার সে অধরা স্বপ্নের কথা। যে স্বপ্ন তার পেশার তরি ভিড়িয়েছে কার্টুন নামের এক সৃজনশীল পেশার সঙ্গে। ‘আমার লক্ষ্যই ছিল সামরিক কর্মকর্তা হওয়ার। এইচএসসি পাস করার পর সামরিক বাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। কিন্তু সুযোগ পেলাম না।’ টানা দুই বছর চেষ্টার পর স্বপ্নভঙ্গের হতাশা চেপে বসেছিল। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করেন কম্পিউটার বিজ্ঞানে। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) অষ্টম সেমিস্টার পর্যন্ত পড়ার পর তার খেয়াল হয়েছিল, এ যেন ‘অযথা সময় নষ্ট’। ছেড়ে দেন পড়াশোনা। তবে স্বপ্ন যে ছেড়ে দিয়েছেন তা নয়। যোগ করলেন, ‘আমি এ্যানিমেশন নিয়ে পড়তে চাই। আমার কাজের, ভাল লাগার বিষয় তো এটাই।’ তাই মিশু এখন পুরোদস্তুর কার্টুনিস্ট। উন্মোচিত হলো তার গোঁফ রহস্যও ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল মো. আতাউল গনি ওসমানীর গোঁফ দেখে আমারও ইচ্ছে হয়েছিল রাখার। সেটাই আমার এমন গোঁফ রাখার কারণ।’ সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখানো মোরশেদ মিশু ৯টা জাতীয় এবং ২টা আন্তর্জাতিক কার্টুন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। লন্ডন এবং বার্লিনে তার আঁকা কার্টুন প্রদর্শিত হয়েছে। এ ছাড়াও বইমেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকাশনীর এবং লেখকের জন্য বইয়ের প্রচ্ছদও করছেন মিশু।
×