ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নববর্ষে নুসরাতের জন্য ভালবাসা গণপদযাত্রা

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

নববর্ষে নুসরাতের জন্য ভালবাসা গণপদযাত্রা

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ নিপীড়নের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ না থেকে প্রতিবাদ করেছিলেন। মামলা হয়েছিল নিপীড়কের বিরুদ্ধে। তাই মামলা তুলে নিতে আপোসের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল ফেনীর সোনাগাজীর মেয়ে নুসরাত জাহান রাফিকে। কিন্তু প্রতিবাদী নুসরাত আপোস না করায় পুড়তে হয়েছে অন্যায়কারীদের আগুনে। কিন্তু সারাদেশের মানুুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে সেই প্রতিবাদী নুসরাত। তাই তো নববর্ষের রাশি আনন্দের মাঝেও স্মরণ করা হয়েছে এই সাহসিকা মেয়েকে। জানানো হয়েছে তার প্রতি ভালবাসা। সেই ভালবাসায় উচ্ছ্বাসমুখরতার মাঝেও ছিল বিষাদের ছায়া। রবিবার পহেলা বৈশাখে ‘কন্যা সাহসিকা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া নুসরাতের জন্য ঝরেছে মানুষের মমতা।। নির্মম হত্যার প্রতিবাদে হয়েছে গণপদযাত্রা। তার খুনীদের বিচারের শোক স্বাক্ষর কর্মসূচী ও মানববন্ধনও হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। নুসরাত স্মরণে ছায়ানটের নীরবতা ॥ নুসরাত জাহান রাফির হত্যার প্রতিবাদ ও তার খুনীদের বিচার দাবিতে ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজনটি খুঁজে নেয় প্রতিবাদী পথ। দেশের সংস্কৃতি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ও ছায়ানট সভাপতি সন্্জীদা খাতুনের আহ্বানে রমনা বটমূলের প্রভাতী আয়োজনে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। নীরবতা পালনের আগে সন্্জীদা খাতুন বলেন, আমরা সবাই উঠে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করব, আমাদের ক্ষোভ জানাব, প্রতিবাদ জানাব, দেশে অনাচারের বিরুদ্ধে। নুসরাত জাহান, তনু, সাগর-রুনী, মিতুÑযে সমস্ত বিষয়ে আমরা আজ পর্যন্ত কোন খবর পেলাম না বিচারের, সেসব বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং বিগত প্রাণগুলোর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকব। নীরবতা পালন শেষে তিনি বলেন, অত্যাচার অনাচার নিপাত যাক, জয় হোক সত্যের সুন্দরের। নুসরাত হত্যার বিচার দাবিতে গণপদযাত্রা ॥ পহেলা বৈশাখ সকাল ১১টার দিকে একদল সংস্কৃতিকর্মীর আহ্বানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত গণপদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোকের রং কালো গেঞ্জি পড়ে এ পদযাত্রায় অংশ নেন সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। এ গেঞ্জিতে লাল রঙে লেখা ছিলো ‘কন্যা সাহসিকা’ এবং সাদা রঙে লেখা ছিল ‘নুসরাত জাহান রাফি’। নুসরাত হত্যার দ্রুত বিচারসহ সব ধরনের নারী নির্যাতন বন্ধের দাবিতে অনুষ্ঠিত এ পদযাত্রায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, নাট্যজন ইশরাত নিশাত, নাট্যজন-সাংবাদিক তপন দাশ, অলক বসু, অনন্ত হীরা, নির্মাতা লিসা গাজী, সংস্কৃতিকর্মী সেলিনা শেলিসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। নীরবে অনুষ্ঠিত এ পদযাত্রার পথিমধ্যে যোগ দেন অনেকেই। নুসরাতের প্রতি ভালবাসায় উৎসবকে এড়িয়ে এ পদযাত্রায় অংশ নেন তারা। শহীদ মিনারে তপন দাশের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ পদযাত্রা। শোক স্বাক্ষর কর্মসূচী ॥ নুসরাত জাহান রাফি হত্যার দ্রুত বিচার চেয়ে পহেলা বৈশাখে শোক স্বাক্ষর কর্মসূচী পালন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটি। রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ শোক স্বাক্ষর কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ শোক বইতে নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে মন্তব্য করেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিম রেজা বলেন, পহেলা বৈশাখে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শোক স্বাক্ষর কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তারা জেলা পর্যায়ে এ কর্মসূচী পালন করবেন। মূলত মানুষকে এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে সতর্ক করতে তাদের এ কর্মসূচী বলে জানান তিনি। নুসরাতের জন্য শোক বইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জোবায়ের আলম লিখেছেন, আসামির ফাঁসি চাই আর ওর লাশও আগুনে পোড়ানো হোক জনসম্মুখে। ইয়াসমিন সুলতানা ইলা লিখেছেন, নারী নির্যাতন থেকে মুক্তি না পেলে দেশের উন্নতি হবে কীভাবে?’ এজাজ রহমান লিখেছেন, শিশু-নারী নির্যাতন ও মাদক-সন্ত্রাস প্রতিরোধ গড়ে তুলি ঘরে ঘরে। ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ॥ পহেলা বৈশাখের দিন নুসরাত হত্যার বিচারসহ সকল ধরনের নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ‘নববর্ষে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা’ স্লোগানে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ছাড়াও নববর্ষে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা সাধারণ মানুষও অংশ নেন। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে নুসরাত হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে বর্ষবরণে যৌন নিপীড়ন; স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাসায় নারী নির্যাতন; মাদ্রাসায় শিশু বলাৎকারসহ সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন তারা। কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনু হত্যাকারীদেরও ফাঁসি দাবি করা হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নুসরাতকে যারা আগুন দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। সিরাজ উদ দৌলাসহ ঘাতকদের কোন ক্ষমা নেই। এ জন্য দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
×