ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মণিরামপুরে প্রসূতির মৃত্যু ॥ ক্লিনিক মালিক গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

মণিরামপুরে প্রসূতির মৃত্যু ॥ ক্লিনিক মালিক গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মণিরামপুরে মনোয়ারা ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রে সন্তান প্রসব করতে এসে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় মৃত প্রসূতি শামসুন্নাহারের স্বামী আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে দশজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলার সূত্র ধরে রবিবার রাতে পুলিশ ক্লিনিকের মালিক কথিত সার্জিক্যাল চিকিৎসক আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করেছে। আটক আব্দুল হাই উপজেলার জামজামি গ্রামের মৃত আফসার আলী বিশ্বাসের ছেলে। তিনি নিজে ডাক্তার না হলেও ‘সার্জিক্যাল ডাক্তার’ পরিচয়ে বহুদিন ধরে রোগীর স্বজনদের ধোঁকা দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, অভয়নগরের নওয়াপাড়া এলাকার সুব্রত মহলদার, উপজেলার কাজির গ্রামের শরিফুল ইসলাম, সুবলকাঠি গ্রামের সাইফুল ইসলাম, জয়পুরের মোন্তাজ হোসেন, স্বরুপদহ গ্রামের তানিয়া সুলতানা হালিমা, হাসাডাঙ্গার নাসিমা খাতুন, যশোর সদর উপজেলার সিরাজসিংহ গ্রামের দীপা খাতুন, রামনগরের মঞ্জুয়ারা খাতুন এবং আব্দুল হাইয়ের স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন। এদিকে, ডাক্তার গ্রেফতার হওয়ার খবরে ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন স্বজনরা। গ্রেফতার আতঙ্কে অন্য আসামিরা ক্লিনিক ছেড়ে পালিয়েছেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, জয়পুর গ্রামের আসাদুজ্জামানের স্ত্রী শামসুন্নাহারের গত ১২ এপ্রিল রাতে প্রসব বেদনা ওঠে। তখন তাকে মণিরামপুর সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় গেটে অবস্থিত মনোয়ারা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। বাইরে থেকে ডাক্তার আনার নামে সাড়ে ১১ হাজার টাকা চুক্তিতে সিজারের কথা বলে ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাই রোগীকে ভর্তি করান। কিন্তু কোন ডাক্তার আসেননি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাই নিজেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে শামসুন্নাহারের অপারেশন করেন। প্রসূতি একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেন। আব্দুল হাইয়ের সহযোগীরা সেই নবজাতককে এনে বাবা আসাদুজ্জামানের কোলে দেন। আসাদুজ্জামান তার স্ত্রীর কথা জানতে চাইলে ‘রোগী ভাল আছে’ বলে জানান কথিত ডাক্তার। কিছুক্ষণ পর মালিক আব্দুল হাই জানান, প্রসূতির অবস্থা খারাপ তাকে খুলনায় নিতে হবে। ঘণ্টা দেড়েক পরে আবার তারা জানান, খুলনায় না রোগীকে এই মুহূর্তে যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। পরে ডাক্তারের কথামতো রাত সাড়ে তিনটার দিকে আসাদুজ্জামান ক্লিনিকের এ্যাম্বুলেন্সে স্ত্রীকে নিয়ে যশোরের উদ্দেশে রওনা হন। ওই সময় এ্যাম্বুলেন্সে ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাই নিজেও ছিলেন। আসাদুজ্জামানের অভিযোগ, এ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর সময় ভেতরে আলো বন্ধ করা ছিল। তিনি আলো জ্বালাতে বললে রোগীর ক্ষতি হবে বলে জানান ডাক্তার। এ্যাম্বুলেন্স কিছুদূর গেলে আসাদুজ্জামানের দুই পা জড়িয়ে ধরেন আব্দুল হাই। হাই তাকে প্রলোভন দেখিয়ে বলেন, যদি রোগী মারা যান তাহলে তিনি (আসাদুজ্জামান) যেন কাউকে কিছু না জানান। তিনি নবজাতকের যাবতীয় দায়িত্ব নেবেন এবং আসাদুজ্জামানকে ক্লিনিকে চাকরি দেবেন। এ্যাম্বুলেন্স কুয়াদা বাজার পার হলে ভেতরে আলো জ্বালানো হয়। তখন প্রসূতি শামসুন্নাহার মারা গেছেন।
×