ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দিশেহারা চাষী

বরিশালে বোরো ক্ষেতে পাতাপোড়া রোগ

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

বরিশালে বোরো ক্ষেতে পাতাপোড়া রোগ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কৃষকের স্বপ্ন সবুজের সমারোহ। সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউয়ের মতো সবুজ ধানের পাতাগুলো দোল খাচ্ছে। রাশি রাশি সোনালি ধানে ভরে উঠবে কিষানির শূন্য গোলা, চলতি বোরো মৌসুমে এমনটাই আশা ছিল চাষীদের। বোরো মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রবের পর এবার ধান পাকার কয়েকদিন বাকি থাকতেই নতুন করে ধান ক্ষেতে পাতাপোড়া বা বিএলবি রোগ দেখা দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার গৌরনদী উপজেলার বোরো চাষীরা। কীটনাশক প্রয়োগ করেও রোগ মুক্ত হচ্ছে না আক্রান্ত ধানক্ষেত। ফলে জমির ধানগুলো চিটা হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে পৌর এলাকার হরিসেনা ব্লকের চাষী শাহিন শরীফ জানান, গত কয়েকদিনের অতিবর্ষণের পর প্রথমে দুই একটি ধানের পাতা পুড়ে যায়। পরবর্তীতে পুরো জমির ধানের পাতাগুলো পুড়ে দ্রুত পার্শ্ববর্তী জমিগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। ওষুধ ছিটিয়েও বোরো ধানের এ পাতা পোড়া রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, পাতাপোড়া রোগের কারণে তার আবাদি জমির অর্ধেক ধান ইতোমধ্যে নষ্ট (চিটা) হয়ে গেছে। চাষী রিপন প্যাদা জানান, তিনি আগেও বোরো ধানের চাষ করেছেন। তবে এবারই প্রথম তার জমিতে পাতাপোড়া রোগ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন কিন্তু কোন প্রতিকার পাননি। তিনি আরও বলেন, ধারদেনা করে তিনি ১২০ শতক জমিতে বোরো চাষাবাদ করেন। এরমধ্যে সেচ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ করে প্রতি ৩০ শতকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শুরুতে ফলন বেশ ভাল হয়েছে। এখন ধান পাকার কয়েকদিন বাকি থাকতেই পাতাপোড়া রোগের কারণে অনেক ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চাষী হেলাল বেপারী জানান, চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের পর সঠিক সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় তারা বাম্পার ফলনের আশা করেছিলেন। কিন্তু ধান রোপণের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দেয়। ওইসময় বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ দিয়ে তারা ইঁদুর নিধন করেছেন। এখন ধান পাকার পূর্বমুহূর্তে জমিতে পাতাপোড়া রোগ দেখা দেয়ায় তাদের ওপর একধরনের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ওপর গত কয়েকদিনের অতিবৃষ্টির কারণে বোরো ক্ষেতে হাঁটু সমান পানি জমে থাকায় জমি থেকে পাকা ধান তুলতে তিনি শ্রমিক সঙ্কটেরও আশঙ্কা করছেন। গৌরনদীর বিভিন্ন বোরো ব্লক ঘুরে দেখা গেছে একরের পর একর আধা পাকা ধানক্ষেতে পাতাপোড়া রোগ দেখা দিয়েছে। ধানক্ষেতগুলোতে আধা পাকা ধানের পাতা পুড়ে শীষ শুকিয়ে ভেতরে চিটা হয়ে যাচ্ছে। পাতাপোড়া রোগের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রহমান বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে গৌরনদী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকায় ছয় হাজার তিনশ’ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। ধান চাষের মাঝামাঝি সময়ে ইঁদুর ধান গাছ কেটে দেয়ায় কৃষকরা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। খবর পেয়ে তিনি নিজেই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে মাঠপর্যায়ে গিয়ে বিভিন্ন উদ্ভাবনীর মাধ্যমে ইঁদুর নিধনে সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি আরও বলেন, ধান কাটার আর কয়েকদিন বাকি থাকলেও হঠাৎ করে এখন দিনে গরম আর রাতে ঠা-া পড়ছে। এছাড়া গত কয়েকদিনের অতিবর্ষণে কয়েকটি ব্লকের জমিতে আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত পাতাপোড়া রোগ দেখা দিয়েছে। বোরো ক্ষেতে পাতাপোড়া বা বিএলবি রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্লক পরিদর্শন করে কৃষকদের পাতাপোড়া রোগ প্রতিকারে পরামর্শ দিয়েছেন।
×