ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু সড়ক দুর্ঘটনা তহবিল

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

বঙ্গবন্ধু সড়ক দুর্ঘটনা তহবিল

উদ্যোগ নিঃসন্দেহে জনসম্পৃক্ত এবং জনগুরুত্বপূর্ণ। দেশে যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আর্থিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানো মহৎ কাজ বৈকি। যারা এই উদ্যোগ নিয়েছেন, তারা সময় ও যুগোপযোগী একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন বলা যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বিশেষ তহবিল গঠন করছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি’ বা আইডিআরএ। প্রাথমিকভাবে এ তহবিলের নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু সড়ক দুর্ঘটনা সহায়তা তহবিল। প্রতিবছর বীমা খাতে যানবাহন বীমায় যে মুনাফা আসে তার কমপক্ষে এক শতাংশ এ তহবিলে জমা হবে। এছাড়া প্রতিটি সাধারণ বীমা কোম্পানি প্রতিবছর এ তহবিলে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দেবে। পুরো টাকা থাকবে ব্যাংকে। এ টাকার সুদ দিয়ে সহায়তা দেয়া হবে ক্ষতিগ্রস্তদের। সড়ক দুর্ঘটনায় যারা গুরুতর আহত বা নিহত হন, কিন্তু কোন্ গাড়ি এ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে তা খুঁজে পাওয়া যায় না, এসব ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে এ তহবিল থেকে সহায়তা দেয়া হবে। দেখা গেছে, প্রতিবেশী ভারতে ‘সোলাটিয়াম ফান্ড’ নামে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বে এ ধরনের একটি তহবিল রয়েছে। এ তহবিল থেকে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে ২৫ হাজার ভারতীয় রুপী দেয়া হয়। আহতদের সাড়ে ১২ হাজার রুপী দেয়া হয়। বাংলাদেশে এই প্রথম অনুরূপ তহবিল করা হচ্ছে। বীমা খাতের উদ্যোক্তাদের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ইতিবাচক। উদ্যোক্তারা অবশ্য বলেছেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে এটা করা হচ্ছে। বীমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি রূপরেখা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। বীমা কোম্পানির প্রতিনিধি এবং আইডিআরের প্রতিনিধি মিলে তহবিল পরিচালনার একটি কমিটি হবে। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে যে আবেদন আসবে, পুলিশি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এক লাখ অথবা নির্দিষ্ট একটি অঙ্কের অর্থ প্রদান করা হবে। দেশে প্রতিবছর দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। নিহতদের পরিবারগুলো অনেক ক্ষেত্রে উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। আর অর্থাভাবে আহত অনেকে চিকিৎসা করতে পারছে না। সেখানে এই আর্থিক সহায়তা অনেকটাই সহায়ক হতে পারে। দেশে বীমা খাতের ‘গ্রস প্রিমিয়াম’ দাঁড়াচ্ছে ৩৪৪ কোটি টাকার বেশি। আর ‘নীট প্রিমিয়াম’ আসে ৩২৭ কোটি টাকার মতো। ব্যয় বাদে ‘আন্ডার রাইটিং’ মুনাফা আসে ১০৩ কোটি টাকা। এই হার প্রতিবছর বাড়ছে। এখান থেকে এক শতাংশ ওই তহবিলে নেয়া হলে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা থাকে। এ টাকায় অনেক পরিবারকে সহায়তার আওতায় আনা যাবে। দেশে যে ৪৬ বীমা কোম্পানি রয়েছে তাদের প্রত্যেকে প্রতিবছর এ তহবিলে কমপক্ষে এক লাখ টাকা দিলেও তহবিল গঠন করা সম্ভব। এভাবে পর্যায়ক্রমে তহবিল বেড়ে যাবে। বিষয়টি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে সরকারীভাবেও তহবিলে টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা যেতে পারে। বাস্তবিক যে, দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়া যানবাহনটি কোন না কোন কোম্পানিতে বীমা করা। কারণ বীমা ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চালানো যায় না। এ কারণেও বীমা কোম্পানিগুলোকে এর দায় নেয়া উচিত। সেদিক থেকে এই উদ্যোগটি যথাযথ ও বাস্তবসম্মত। প্রস্তাবিত তহবিল সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে মানুষ উপকৃত হবে।
×