ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের পর এবার নেপাল থেকে বিদ্যুত আমদানি

প্রকাশিত: ১০:২৫, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

 ভারতের পর এবার নেপাল থেকে বিদ্যুত আমদানি

রশিদ মামুন ॥ ভারতের পর এবার নেপাল থেকে বিদ্যুত আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার। ভারতেরই একটি কোম্পানি জিএমআর পাওয়ার কর্পোরেশনের কাছ থেকে প্রতিদিন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হবে। জিএমআর আপার কার্নালি জল বিদ্যুত প্রকল্পটি হবে ৯০০ মেগাওয়াটের। বাকি বিদ্যুত ভারতের তামিলনাড়ু সরকার কিনে নেবে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, খুব শীঘ্রই বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি সই করবে পিডিবি এবং জিএমআর পাওয়ার। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুত কেনার বিষয়ে গত সপ্তাহে ঢাকায় একটি নেগোসিয়েশন বা দরকষাকষি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড, জিএমআর পাওয়ার কর্পোরেশন এবং বিদ্যুত ভ্যাপার নিগামের (এনভিভিএন) শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিদ্যুতের দর, গ্রিড লাইন এবং বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। জানতে চাইলে পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় জিএমআর-এর সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা খুব আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি দ্রুত চুক্তি করতে। আশা করছি খুব শীঘ্রই চুক্তিটি হয়ে যাবে। আমাদের চুক্তির ওপর নির্ভর করছে কেন্দ্রটির অর্থসংস্থান বা ফাইন্যান্সিয়াল ক্লোজার। ফলে আমরা নয় তারাও (জিএমআর) আন্তরিক চুক্তির বিষয়ে। তিনি বলেন, জিএমআর-এর পাশাপাশি এনভিভিএন একটি পক্ষ। কারণ ভারতীয় অংশে বিদ্যুত আনতে এনভিভিএন’র সহায়তা প্রয়োজন। গত ৪ ডিসেম্বর কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত নেপাল-বাংলাদেশ বিদ্যুত খাতের যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে জিএমআর-এর কাছ থেকে বিদ্যুত আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে গত কয়েক বছর আগে থেকেই জিএমআর বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুত বিক্রির প্রচেষ্টা চলিয়ে আসছিল। জিএমআর-এর কাছ থেকে বিদ্যুত আমদানি করতে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে জি থমাস (টম) ওয়েস্ট। তারা ইতোমধ্যে এই বিদ্যুত আমদানিকে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বলছে। নেপালের কেন্দ্রটি যেহেতু জল বিদ্যুত উৎপাদন করবে তাই কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম কম পড়বে। তবে এখনও দামের বিষয়ে জিএমআর এবং পিডিবি ঐক্যমতে পৌঁছায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেপালের সঙ্গে ভারতীয় ভূখ- ব্যবহার করে সরাসারি বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। শীতে পানির স্তর নিচে নেমে গেলে নেপালে বিদ্যুত উৎপাদন বিঘ্নিত হবে। তখন পানির চাপ না থাকাতে নেপালে বিদ্যুত পাওয়া কঠিন হবে। আবার অন্যদিকে বাংলাদেশে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের জন্য বিদ্যুত প্রয়োজন না হওয়াতে ওই বিদ্যুত নেপালে রফতানি করা যেতে পারে। পারস্পরিক সহায়তার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হলে তাতে উভয় দেশ লাভবান হবে। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যে আন্তঃদেশীয় বিদ্যুত বাণিজ্যনীতি করছি সেখানে বিদ্যুত রফতানির বিধান রাখা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সহায়তার ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হলে আমরা নানাভাবে লাভবান হব বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রসঙ্গত, গত ১০ আগস্ট নেপাল এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুত খাতে সহায়তা সম্প্রসারণে একটি এমওইউ সই হয়। ওই এমওইউ সইর পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী খাদগা প্রসাদ অলি বাংলদেশ-নেপালের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার বিষয়ে প্রত্যাশা জানান। এরপর বিমসটেক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বৈঠক হয়। যাতেও দুই দেশের বিদ্যুত বাণিজ্যের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। দেশের বাইরে নেপাল এবং ভুটানে জল বিদ্যুত উৎপাদনে সরকার এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। বিদ্যুত বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। জল বিদ্যুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন হওয়ায় এক্ষেত্রে ঋণ প্রাপ্তিও সহজ। বাংলাদেশ বিগত কয়েক বছর ধরেই নেপালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করে আসছে। প্রতিবেশী দেশের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। নেপালে ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও দেশটি বর্তমানে সামান্য পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন করছে। এখানেও ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি কয়েকটি জল বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেপাল এবং ভুটানের উদ্যোগের সঙ্গে মিয়ানমারকে যুক্ত করতে পারলে আরও বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। দেশটিতে আরও ৪০ হাজার মেগাওয়াটের জল বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। অবশ্য মিয়ানমার এরই মধ্যে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করছে। যারা এসব বিষয়ে আগে থেকে পারদর্শী। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কোন আলোচনা করেনি। তবে চীনা কোম্পানিগুলো মিয়ানমারের সঙ্গে ইতোমধ্যে কয়েকটি চুক্তি করেছে। এখন ভারত থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। ভারত থেকে আরও আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।
×