ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাতার ভূমিকায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, শীঘ্রই গতি ফিরবে ॥ পুঁজিবাজারে বিশাল দরপতন

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

 ত্রাতার ভূমিকায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, শীঘ্রই গতি ফিরবে ॥ পুঁজিবাজারে বিশাল দরপতন

অপূর্ব কুমার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মাঝখানে গড়ে ওঠা আশার আলো নিভে গেছে ১১ সপ্তাহের টানা দরপতনে। ’১০ সালের শেয়ারবাজারে ইতিহাসে বড় দরপতনের সময়ও একটানা ১১ সপ্তাহ টানা সূচক কমেনি। কিন্তু এবার তাই ঘটেছে। এই টানাপতনে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেমে গেছে শূন্যের কোটায়। মূলত আস্থা ও তারল্য সঙ্কটের কারণে চলমান টানা দরপতন ঠেকাতে ফের ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে তিনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেনকে গণভবনে ডেকে নিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর বৃহস্পতিবারই শেয়ারবাজারে সবকটি সূচকই বেড়েছে ১ শতাংশের ওপর। বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে শেয়ারবাজারের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময়ে শেয়ারবাজারের বর্তমান মন্দাবস্থা দূর করতে করণীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিএসইসি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে বাজারের স্বাভাবিক গতি ফেরাতে অর্থমন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংককে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারের চলমান মন্দাবস্থার কারণে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে শেয়ারবাজারের চলমান অবস্থার বিস্তারিত জানতে চান। এর আলোকে বিএসইসি চেয়ারম্যান বিস্তারিত তুলে ধরেন, চলমান সমস্যা কাটিয়ে উঠতে কিছু পরামর্শ শেখ হাসিনার কাছে দেন। এরপরে করণীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অর্থমন্ত্রণালয়, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শেয়ারবাজারের জন্য করণীয় পদক্ষেপ দৃশ্যমান হবে । শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরাতে ইতোমধ্যে ঢাকা স্টক একচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ, ঢাকা ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবের আলোকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশে ফিরলে অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশ চালু হবে। বন্ড ছাড়তে পারবে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস ॥ পুঁজিবাজারে ব্যবসায়রত ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো আগামী দিনে বন্ড ইস্যু করে তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ড সংগ্রহের অনুমতি দেয়ার বিষয়টি ইতিবাচক বিবেচনা করছে। আগামী ২৪ এপ্রিল বন্ড সংক্রান্ত ইস্যুতে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আছে। ওই বৈঠকে বন্ডের স্ট্যাম্প ডিউটি কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বন্ডের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে তারা আশা করছেন। গত মঙ্গলবার চলমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) নিজেদের মধ্যে একটি বৈঠক করে। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পুঁজিবাজারে ব্যবসায়রত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান তথা ব্রোকারেজ হাউস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে বন্ড ইস্যু করে তহবিল সংগ্রহ করার সহজ সুযোগ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। অনলাইনে শেয়ার বেচাকেনার সুযোগ ॥ পুঁজিবাজারে সরাসরি অনলাইনে শেয়ার বেচাকেনার সুযোগ আসছে। এ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ব্রোকার হাউসকে লেনদেনের লাইভ ডেটা সরবরাহের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশন অনুমোদন দেয়ার পর আগ্রহী ব্রোকারেজ হাউসগুলো স্টক এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে লেনদেনের সরাসরি ডাটা নিতে পারবেন। একইসঙ্গে ব্রোকার হাউসগুলো নিজস্ব এ্যাপসের মাধ্যমে তাদের গ্রাহকদের শেয়ার বেচাকেনার সুযোগ দিতে পারবেন। ব্রোকারেজ হাউসের শাখা খোলার শর্ত শিথিল ॥ পুঁজিবাজারের ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সুবিধার্থে তাদের সম্প্রসারিত অফিস স্থাপনের শর্ত শিথিল করতে যাচ্ছে বিএসইসি। মন্দা বাজারে ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অফিসের কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিএসইসি এমন সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে। তথ্য মতে, বর্তমানে ব্রোকার হাউসগুলো স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে সর্বোচ্চ ২ কিলোমিটারের মধ্যে বর্ধিত অংশের কার্যক্রম পরিচালনা করার নিয়ম রয়েছে। তবে এর বেশি দূরত্বে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না তারা। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দেশের ব্রোকরেজ হাউসগুলোর শাখা স্থাপনে অনুমোদন পাচ্ছে না। স্ক্রিপ্ট নেটিং চালুর সিদ্ধান্ত ॥ পুঁজিবাজারে চলমান দরপতনের ধারায় লাগাম টেনে বাজারকে স্বাভাবিক গতিশীলতার দিকে ফেরাতে কিছু ব্যবস্থা স্ক্রিপ নেটিং চালুর বিষয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে স্ক্রিপ্ট নেটিং-এ প্রকৃত অর্থে তারল্য বাড়বে না। শুধু বিনিয়োগকারীরা একই টাকায় বেশিবার শেয়ার কেনা ও বেচার সুযোগ পাবেন। একদিনেই শেয়ার কিনে ওইদিনেই বিক্রি করা যাবে। এই কেনাবেচার ফলে ব্রোকারেজ হাউসের সার্বিক লেনদেন বাড়বে। সক্রিয় হচ্ছে আইসিবি ॥ দীর্ঘদিন পরে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশও (আইসিবি) বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নির্দেশনা পাওয়ার পর শেয়ার কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে পোর্টফলিতে শেয়ার কেনা শুরু করে। আইসিবির সঙ্গে সঙ্গে সরকারী-বেসরকারী কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও শেয়ার বেচার পরিবর্তে কেনা শুরু করে। আগামীতেও প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে শেয়ার কেনার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে। চালু হচ্ছে স্মল ক্যাপ বোর্ড ॥ বিনিয়োগকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে নিয়ে চালু হচ্ছে স্মল ক্যাপ বোর্ড। এই বোর্ডে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হবে। সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা শেয়ার কিনতে চাইলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা যাবে। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। সেইসঙ্গে আস্থার পরিবেশও ফিরে আসবে। স্কিপ্ট নেটিং চালু হলে নতুন করে তারল্য প্রবাহ না বাড়লেও ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর লেনদেন বাড়বে।
×