হাসান ইমাম সাগর ॥ অবৈধ নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এজন্য বুড়িগঙ্গা তুরাগের দখলদারদের একটি নামের তালিকা তৈরি করছেন তারা। ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি না হলে চূড়ান্তভাবে উচ্ছেদ অভিযান শেষে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে রমজানের আগেই বুড়িগঙ্গা-তুরাগে উচ্ছেদ অভিযান চূড়ান্তভাবে শেষ করতে চায় বিআইডব্লিউটিএ বিধায় উচ্ছেদ অভিযান আরও বেগবান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে তৃতীয় পর্বের দ্বিতীয় পর্যায় থেকে একদিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে সপ্তাহে তিনদিনের পরিবর্তে চারদিন পরিচালিত হবে অভিযান। এ সপ্তাহের সোমবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান চলবে। ঈদ ও রমজান মাসে বেগ না পেতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক নূর হোসেন।
২৯ জানুয়ারি উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ২৭ কার্যদিবস উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এতে প্রায় তিন হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিআইডব্লিউটিএ। কামরাঙ্গির চর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের দুই পাড়ে এই উচ্ছেদ কার্যক্রম চালান হয়। এতে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীর দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবমুক্ত করা হয়েছে ৬৯ একর তীরভূমি। জরিমানা আদায় করা হয়েছে তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এছাড়া নিলাম হয়েছে কয়েক কোটি টাকার জব্দকৃত মালামাল।
ঢাকার চারপাশে নদ-নদী দখলমুক্ত করতে চলছে বিআইডব্লিউটিএ’র এই উচ্ছেদ অভিযান। এর আগেও স্বল্প পরিসরে কয়েক বার উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযান শেষ না হতেই ফের দখল হয়ে যায়। তাই এ সমস্যার সমাধান করতে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। সম্পূর্ণ উচ্ছেদের পর নদীর দুই তীর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হবে। হাতিরঝিলের আদলে ঢেলে সাজানো হবে ঢাকার চারপাশের অবস্থিত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীকে। এতে নির্মাণ করা হবে নদীর দুই পাড়ে ওয়াক ওয়ে, ব্যাংক প্রটেকশন, বাউন্ডারি ওয়াল ও নতুন সীমানা পিলার। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ কর্তকর্তাদের সমন্বয়ে নদীর পাড় পরিদর্শন ও সংরক্ষণ একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতি সপ্তাহে একবার বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর ও পরিবহন বিভাগের পরিচালক বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করবে। ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে নদীর পাড়ে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে ২০ কিলোমিটার ওয়াক ওয়ে। আরও ৫০ কিলোমিটারের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। সাড়ে আট শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে নদীর উভয় পাড়ে ১১০ কিলোমিটার করে মোট ২২০ কিলোমিটার ওয়াক ওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে। ড্রেজিং-এর কাজও শুরু হয়ে গেছে। মূলত নদীবান্ধব নগরী ঢাকাকে নতুন রূপে সাজাতে সরকারের এই উদ্যোগ। এজন্য উচ্ছেদ অভিযান দ্রুত শেষের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুস্তাফিজুর রহমান ও বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দীনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই অভিযান তুমুল গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। চলবে তুরাগ হয়ে বালু নদীর শেষ সীমানা পর্যন্ত।
এদিকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য দখলদারদের বিরুদ্বে মামলা দিতে নামের তালিকা তৈরি করছে বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক কায়সারুল আলম। তাকে সহযোগিতা করছে আরও ৬ কর্মকর্তা। এর আগে ২০১৮ সালে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। ৯০৮ ব্যক্তি ছিল ওই তালিকায়। এবার তারাসহ মোট দুই হাজার এক শ’ দখলদারের নামের খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে আমিন বাজারের পর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত এখন কোন ব্যক্তির নাম যুক্ত হয়নি। হলে এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।