ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাগত ১৪২৬

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

স্বাগত ১৪২৬

জীর্ণ পুরাতন ভেসে যায়। আসে নতুনের আবাহন। ধ্বনিত হয়, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা।’ চিরায়ত বাঙালীর জীবনের এক প্রাণস্পর্শী দিনের শুরু আজ ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। নতুনের কেতন উড়িয়ে বৈশাখ দেয় নতুনেরে ডাক, খোলো খোলো দ্বার। বাংলার মাটি, বাংলার সবুজ- শ্যামল, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল সবখানেই চির নতুনের আবাহন জেগে উঠছে উদীয়মান, ভোরের রাঙা সূর্যালোকে। বিদায় নিয়েছে পুরনো বছর ১৪২৫। এসেছে নতুন বছর ১৪২৬। বাঙালীর নববর্ষ। এবারের নববর্ষ এসেছে এক নতুন বাস্তবতায়। বাংলাদেশের রাজনীতি, উন্নয়ন অর্থনীতি সমাজকে পেছনের দিকে ঠেলে দেয়ার হীন চক্রান্ত চলে গত কয়েক বছরে। তাকে মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন বর্ষ এসেছে ধ্বংসের বিপরীতে নব সৃজনের গান নিয়ে। নববর্ষকে সামনে রেখে বলতেই হয় যে, বাঙালী জাতি অর্জন করেছে অনেক কিছু প্রতিকূল পরিস্থিতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে। স্বাধীন স্বদেশে বৈশাখের আবাহনে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে গ্রেনেড হামলায় বহু মানুষকে হতাহত করেছিল জঙ্গীরা। সেই দুঃসহ স্মৃতি এখন অতীত। ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগত নববর্ষ, ১৪২৬। আবহমানকাল ধরে বাঙালীর প্রিয় দিন। নববর্ষ হোক উত্থানের। নতুন বর্ষে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ হোক চিরতরে নির্মূল। নাশকতা, সহিংসতা বন্ধ হোক। স্বদেশ হোক নৈরাজ্যমুক্ত। পহেলা বৈশাখ বাঙালীর নববর্ষ। বৈশাখ বাঙালীর জীবনে কী গ্রামে কী শহরে এক নতুন সমারোহ নিয়ে আসে। হালখাতার পাতা খুলে যেমন তার বাণিজ্যের পুণ্যাহ উৎসব, তেমনি সাধারণ জীবনযাত্রায়ও থাকে প্রবল একটা প্রাণচাঞ্চল্য- ধ্বনিত হয় ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ বৈশাখ মানে গ্রীষ্ম ঋতুর শুরু। উজ্জ্বল রৌদ্রময় দিন। তেমনি আবার কালবৈশাখীর ভয়াল রূপ। জীবন সংগ্রামের দীক্ষা লাভের নানা রূপের সংমিশ্রণ নববর্ষের সূচনালগ্ন। এই সূচনালগ্নে নতুন ভাবনা-চিন্তায় কতটা এগিয়েছি আমরা তারও খতিয়ান করা দরকার। নতুন বছরে পদার্পণের অর্থই হলো নতুনের মুখোমুখি হওয়া। সামনের দিনগুলোকে নবউদ্যমে বিনির্মাণের তাগিদ। আমাদের উদ্যম, আমাদের অধ্যবসায় সব নিয়োজিত হোক জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে। উৎসবের আনন্দ নতুন সঙ্কল্পে দীক্ষিত জাতির ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নতুন শক্তির প্রেরণা হোক। এজন্য সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বাংলা নববর্ষ সুর-সঙ্গীতের, মেলা-মিলনের, আনন্দ ও উৎসবের, সাহস ও সঙ্কল্পের প্রেরণা জোগায়। দুঃখ-গ্লানি, অতীতের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে তাই এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেয়ার দিনও পহেলা বৈশাখ। দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে এগিয়ে যাওয়ার অগ্নিশপথ নেয়ার দিন এটি। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও বৈশাখের চেতনায় সবাই উজ্জীবিত হোক। নতুন ভবিষ্যত গড়ার প্রত্যয়ে সবাই হোক উদীপ্ত। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। স্বাগত ১৪২৬। অকপটে স্বীকার করতে হবে যে, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে একটা পরমাশ্চর্য বিস্ময়। বিশ্ববাসী অবাক তাকিয়ে রয় এ দেশের দিকে। স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাত্র ৪৮ বছরে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি উদাহরণ ও অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের অনেক দেশের কাছে। এমনকি সুমহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানও অকপটে স্বীকার করে থাকে, বাংলাদেশ আমাদের চেয়ে অন্তত ১০ বছর এগিয়ে আছে। অনুকরণীয় হতে পারে বাংলাদেশ তাদের কাছেও। সুতরাং ১৪২৬-এর শুভ বৈশাখের প্রারম্ভে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই এ দেশ নিয়ে গর্ব করতেই পারি।
×