ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে ঘটছে দুর্ঘটনা

তিন চাকার যান মহাসড়কে

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

তিন চাকার যান মহাসড়কে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে দিন দিন বেড়েই চলছে দুর্ঘটনা। এর কারণ মোটামুটি চিহ্নিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন স্থায়ী সমাধানে আসতে পারছে না। সচেতন মহলের দাবি-রাজনৈতিক দলের কতিপয় প্রভাবশালী নেতার কারণে ও প্রশাসনের উদাসীনতায় এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বিশেষ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিগত তিন বছরে বরিশালের সড়ক ও মহাসড়কে যেসব দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগই হচ্ছে থ্রি-হুইলার মাহিন্দ্রার কারণে। লাইসেন্সবিহীন চালকরা বেপরোয়া গতিতে যাত্রী নিয়ে এ যান চালানোর কারণেই দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বরিশালের একাধিক বাস চালক জানান, হাইকোর্ট থেকে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও তা বীরদর্পে চলছে। সিগন্যালের বালাই নেই এ যান চালকদের কাছে। যে যার ইচ্ছেমতো চালাচ্ছে, ওভারটেক করছে আবার আকস্মিক থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা অবগত থাকলেও স্থায়ী কোন সমাধান না হওয়ায় দুর্ঘটনার প্রতিরোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না। আর এতে করে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকে। সম্প্রতি বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের গড়িয়ারপারে থ্রি-হুইলারের সঙ্গে বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন সাতজন। আহত চারজনকে সুস্থ হতেও অনেক সময় লাগবে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেপরোয়া গতিতে দুর্ঘটনাকবলিত মাহিন্দ্রাটি মহাসড়কের রং সাইডে এসে বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী পরিবহনের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার কারণেই দুর্ঘটনার শিকার হয়। ফলে মাহিন্দ্রার চালকসহ সাতজন নিহত ও চারজন গুরুতর আহত হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যস্ততম মহাসড়কে প্রশিক্ষণবিহীন চালক থ্রি-হুইলার চালানো অবস্থায় যাত্রীরা যেখানে বসে সিগন্যাল দেয় সেখানেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সিগন্যাল ছাড়াই মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থ্রি-হুইলার মাহিন্দ্রায় যাত্রী উঠানোর কারণে ইতোমধ্যে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটেছে। সচেতন বরিশালবাসী নিয়ন্ত্রণহীন বেপরোয়া গতির এ যানবাহন বরিশালের ব্যস্ততম বিশেষ করে দূরপাল্লার সড়কগুলোতে নিষিদ্ধ করে তা কার্যকর করার জন্য জোর দাবি করেছেন। বাস শ্রমিকদের অভিযোগ, ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও সেই নিষেধাজ্ঞা কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার মাহিন্দ্রা চললে মাসোহারা পেয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট থানা ও হাইওয়ে পুলিশের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা। আর যার পেছনে শেল্টারদাতা হিসেবে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় প্রভাবশালী নেতা। যে কারণে নিষেধাজ্ঞা কাগজ-কলমেই চাপা পড়ে রয়েছে। আর এতে করেই বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক হয়ে প্রায় ১৪টি অভ্যন্তরীণ রুটে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থ্রি-হুইলার মাহিন্দ্রা বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে থাকে। এছাড়া রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে ঝালকাঠি, বাকেরগঞ্জ, নলছিটি ও লাহারহাট রুটেও চলাচল করে থ্রি-হুইলার মাহিন্দ্রা। এসব রুটে প্রায় প্রতিদিন দুর্ঘটনার খবর শোনা যায়। যার বেশিরভাগই থ্রি-হুইলারের কারণে হয়ে থাকে। বাস ও ট্রাকের সঙ্গে থ্রি-হুইলার যান পাল্লা দিয়ে চলাচলের কারণেই ঘটছে দুর্ঘটনা। নথুল্লাবাদের বাস শ্রমিকরা জানান, বরিশাল থেকে যে কয়টি রুটে বাস চলাচল করে সেই রুটগুলোতেই মাহিন্দ্রা চলাচল করে থাকে। বেপরোয়া গতিতে এসব থ্রি-হুইলার মাহিন্দ্রাগুলো চলাচলের কারণেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আর রহস্যজনক কারণে এদের বিরুদ্ধে সহসা পুলিশ প্রশাসন কোন ব্যবস্থাও গ্রহণ করছে না। মাহিন্দ্রা চালক ছাত্তার মিয়া বলেন, অধিকাংশ মাহিন্দ্রা চালকের লাইসেন্স রয়েছে। লাইসেন্স না থাকলে তো পুলিশ মামলাই দিত। বরিশাল নগরী থেকে আমাদের গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তাহলে এখন আমরা গাড়ি চালাব কোথায়। বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ ইউনুস আলী খান জানান, থ্রি-হুইলার মাহিন্দ্রার কারণে বাস চালানো দুস্কর হয়ে উঠেছে। বেপরোয়া গতির মাহিন্দ্রার কারণে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। আর এ যানগুলোর বেশির ভাগ চালকেরই নেই লাইসেন্স কিংবা প্রশিক্ষণ। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে আমরা অনেকবার অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল পাইনি। ইউনুস আলী খান বলেন, নিষেধাজ্ঞার পরেও মাহিন্দ্রাগুলো যেভাবে চলাচল করছে তাতে সামনে আরও প্রাণহানি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে এখনই প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার খায়রুল আলম বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধে আমরা প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে মামলা দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু মূলকথা হচ্ছে শহরের মধ্যে থেকে যদি একটি বাইপাস সড়ক থাকত তাহলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য ভাল হতো। আর এ গাড়িগুলোও মহাসড়কে চলাচল করত না। জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে মাহিন্দ্রা বা থ্রি-হুইলার যান চলাচলের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা পুলিশ। তবে এগুলো যে মহাসড়কে একেবারেই চলে না সেটা বলব না। আমাদের সামনে পড়লে এ যানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা থেকে শুরু করে বিপুল অংকের টাকা জরিমানা করা হচ্ছে।
×