ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কার্ফু অমান্য করে সুদানে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১৩ এপ্রিল ২০১৯

কার্ফু অমান্য করে সুদানে বিক্ষোভ

সুদানে নতুন সামরিক পরিষদের দেয়া সান্ধ্য আইন অমান্য করে রাজধানী খার্তুমের সড়কগুলোতে এখনও বিপুলসংখ্যক আন্দোলনকারী অবস্থান করছেন। তিন দশক ধরে দেশ শাসন করা ওমর আল বশিরকে উৎখাত করে সামরিক পরিষদ বৃহস্পতিবার রাতে ছয় ঘণ্টার ওই সান্ধ্য আইন জারি করেছিল। খার্তুমের সড়কগুলোতে কয়েক মাসের লাগাতার প্রতিবাদের পর বশিরকে ‘ক্ষমতা থেকে সরানো’র ঘোষণা আসে। সেনাবাহিনীকে বশির শাসনামলেরই অংশ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনকারীরা রাস্তা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। খবর বিবিসির। দুই পক্ষের এ মুখোমুখি অবস্থান দেশটিতে আরও সংঘাত উস্কে দিতে পারে; নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন অংশ এবং আধাসামরিক বাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতে পারে বলেও আশঙ্কা অনেকের। জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়ন সুদানের সব পক্ষকেই শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার ৭৫ বছর বয়সী বশিরকে গ্রেফতারের খবরে সড়কজুড়ে উল্লাস শুরু হলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সামরিক পরিষদের ক্ষমতা গ্রহণের ঘোষণায় ওই আনন্দ মিইয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা পরে সামরিক বাহিনীর সদরদফতরের বাইরে অবস্থানের কর্মসূচী দেয়। ‘এটা আগের শাসনেরই ধারাবাহিকতা। তাই আমাদের প্রয়োজন লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানো,’ বলেছেন সুদানের প্রফেশনাল এ্যাসোসিয়েশনের সারা আবদেল আজিজ। রাষ্ট্র-পরিচালিত গণমাধ্যম পরে এক ঘোষণায় সুদানজুড়ে স্থানীয় সময় রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন জারির কথা জানায়। ‘নাগরিকদের তাদের নিরাপত্তার জন্যই এ আইন মেনে চলতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং নাগরিকদের জানমাল রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী ও সামরিক পরিষদ তাদের দায়িত্ব পালন করবে,’ ঘোষণায় এমনটাই বলা হয়। এরপরও খার্তুমের রাস্তা ছাড়েনি আন্দোলনকারীরা। তাদের সুদানের পতাকা নেড়ে ‘পতন, ফের’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে; বশিরের পতন চেয়ে এর আগে তারা ‘পতন, এটাই সব’ স্লোগান দিত। ১৯৮৯ সাল থেকে গত ৩০ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন বশির। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে কয়েক মাস ধরেই সরকারবিরোধী বিক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছিল। তিন দশকের ক্ষমতার মেয়াদে প্রেসিডেন্ট বশির এবারই প্রথম বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন। গত সপ্তাহে দেশটির সেনাবাহিনীকে গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীর উর্দি পরা সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা খার্তুমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার চেষ্টা করলে সেনা সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। মঙ্গলবারের ওই সংঘর্ষে অন্তত ১১ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ছয় জনই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বশিরের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। সেনা অভ্যুত্থানের পর তাকে গ্রেফতার করে কোথায় রাখা হয়েছে কিংবা তার ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানা যায়নি। বশিরকে উৎখাতের ঘোষণা দেয়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আওয়াদ ইবনে আউফ দেশে তিন মাসের জরুরী অবস্থা জারি করে সংবিধান স্থগিত ঘোষণা করেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সীমান্তগুলোতে যাতায়াত বন্ধ রাখার পাশাপাশি শুক্রবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা আকাশসীমা বন্ধ রাখা হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
×