ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভয়ঙ্কর শিবির ক্যাডাররা হঠাৎ উধাও-বড় নাশকতার ছক কষছে!

প্রকাশিত: ১০:৫১, ১৩ এপ্রিল ২০১৯

 ভয়ঙ্কর শিবির ক্যাডাররা হঠাৎ উধাও-বড় নাশকতার ছক কষছে!

শংকর কুমার দে ॥ হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে এক সময়ের রগকাটা ও আগুন সন্ত্রাসী বলে পরিচিত যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন ছাত্র শিবিরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভয়ঙ্কর সাথী ক্যাডাররা। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিচার চলাকালে ও রায় ঘোষণার সময়ে সহিংস সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত হয় তারা। বিএনপির ডাকে বিএনপি-ছাত্রদল ক্যাডারদের পেট্রোলবোমার সহিংস আগুন সন্ত্রাসের নেতৃত্বেও ছিল জামায়াতের সহযোগী এই ছাত্র সংগঠনের শিবির ক্যাডাররাই। নাশকতার মামলা মাথায় নিয়ে সহিংস সন্ত্রাসে মাঠ কাঁপানো, দাবড়িয়ে বেড়ানো ভয়ঙ্কর প্রকৃতির সাথী ক্যাডারদের হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার বিষয়টিতে নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, চাঁদে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চেহারা দেখা গেছে বলে গুজব ছড়িয়ে সন্ত্রাসের তান্ডবলীলা চালিয়েছে জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা। ২০১৩ সালে সারাদেশে বিভিন্নস্থানের বেশিরভাগ এলাকার মসজিদ থেকে সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে একযোগে মাইকে ঘোষণা দিয়ে শত শত কর্মী-ক্যাডারকে রাস্তায় নামিয়ে এনে সহিংস সন্ত্রাস চালায় তারা। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের নারকীয় তান্ডবের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মানুষজন, দোকান-পাট, অফিস-আদালত, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি কোন কিছুই রক্ষা পায়নি। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে শুরু করে বগুড়ার নন্দীগ্রাম, ধূনট, বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, শাহজাহানপুর, শেরপুর কাহালু উপজেলা পরিষদ ও থানায় হামলার পাশাপাশি ৬টি পুলিশ ফাঁড়ি, অফিস আদালত, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় তারা। সে দিনের ভয়াবহতার কথা মনে হলেই এখনও আঁতকে ওঠেন অনেকে। সর্বশেষ জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা ধনকুবের মীর কাশেমের ফাঁসির রায় কার্যকর করার সময় থেকেই অদৃশ্য হয়ে পড়ে শিবিরের সাথী ক্যাডাররা। ফাঁসির রায় কার্যকরের বিরুদ্ধে হরতাল আহ্বান করা হলেও মাঠে দেখা যায়নি তাদের কোন তৎপরতা। অথচ দেশব্যাপী যে পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাস চালানো হয় তার অগ্রভাগে ছিল এই সাথী ক্যাডাররাই। নাশকতার মামলায় আসামি হওয়ার কারণে শিবির ক্যাডারদের গ্রেফতারের জন্য খোঁজ করেও তাদের হদিস করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অথচ নাশকতার মামলা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে থেকেও চোরাগুপ্তা হামলা করে সারাদেশে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছিল জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ছাত্র শিবিরের সাথী ক্যাডাররা। তারা সহিংস সন্ত্রাসী হামলা চালাতে আধুনিক পোশাক পরে বেশভূষা পাল্টে ফেলায় পারদর্শী। শিবির ক্যাডাররা জঙ্গী গোষ্ঠীর সদস্যদের সহায়তা ও সহযোগিতা করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু কোথায় গেল সেইসব তালিকাভুক্ত ছাত্র শিবিরের সাথী ক্যাডারররা? হঠাৎ করেই কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে তারা। কোন শিবিরের সাথী ক্যাডারের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না কেন? তাহলে তারা উধাও হয়েছে কোথায়? এই প্রশ্ন গোয়েন্দা সংস্থার। গোয়েন্দা সূত্র জানান, সারাদেশে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া শিবিরের কর্মী-ক্যাডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শিবির ক্যাডারদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হতে হলে প্রথমে তাকে হতে হবে ‘দাওয়াত প্রাপ্তি’। ছাত্র শিবিরের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। দাওয়াত প্রাপ্তির কাজে সন্তুষ্ট হওয়ার পর ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর তার কাজের ওপর ভিত্তি করে হয় ‘কর্মী’ পদধারী। দুই থেকে তিন বছর কর্মী পদে থাকার পর পরীক্ষার ভিত্তিতে তাকে ‘সাথী’ পদে নিযুক্ত করা হয়। শিবিরের একটি ইউনিটে থাকে শতাধিক কর্মী ও দাওয়াত প্রাপ্তি। একজন সাথীর অধীনে থাকে তারা। সাথীরা সংগঠনে অপারেশন কমান্ডার হিসেবে কাজ করে। একজন শিবির কর্মী ‘সাথী’ পদে নিযুক্ত হওয়ার পর তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। ওই প্রশিক্ষণে শিবিরের একাধিক সাথী অংশ নেয়। বিপরীত সংগঠনকে দমন করতে প্রতিশোধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করার কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় প্রশিক্ষণ শিবিরে। বিক্ষোভ মিছিল থেকে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার কৌশল সম্পর্কে দলীয় কর্মী ও দাওয়াত প্রাপ্তিদের শিখিয়ে দেয় শিবিরের সাথীরা। রাজপথে শিবিরের ধ্বংসাত্মমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করার সময় একজন নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। স্লোগান দেয়া ওই ব্যক্তিরাই সাধারণত হয় সাথী। সাথীরা হয় খুবই ভয়ঙ্কর প্রকৃতির। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিবিরের সাথী ক্যাডাররাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্থানে চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সুর্নিদিষ্ট মামলা রয়েছে। সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডে জড়িত ও মামলা থাকার অভিযোগেই তাদের গ্রেফতারের জন্য খোঁজা হচ্ছে। জঙ্গী বিরোধী অভিযান জোরদার করার পর শিবিরের সন্ত্রাসীরা এখন ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আত্মগোপন করে আছে। গত দশ মাস ধরে সারাদেশে জঙ্গী বিরোধী অভিযান জোরদার করার পর থেকেই মূলত গা ঢাকা দিতে থাকে শিবির ক্যাডাররা। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ছাত্র শিবিরের শিবিরের সাথী, নেতাকর্মীদের মামলায় অভিযুক্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বিগত সময়ে শিবির ক্যাডারদের অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েও শিবিরের সাথী পরিচয় দেয়নি। সংগঠনের পরিচয় লুকিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত পরিচয় কিংবা ভুয়া পরিচয় দিয়ে নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করে এসব সাথী ক্যাডার। সহিংস সন্ত্রাসে অভিযুক্ত সাথী ক্যাডারদের প্রকৃত পরিচয় উদঘাটনের চেষ্টার পাশাপাশি হঠাৎ কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তবে কি তারা কৌশল পাল্টাচ্ছে নাকি নাশকতার বড় ছক কষছে? প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিবিরের সাথী ক্যাডারদের অনেকেই জঙ্গী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়ে জঙ্গী সদস্য হয়ে গেছে এমন অভিযোগেরও তদন্ত করে দেখছেন গোয়েন্দারা।
×