ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই আসামি গ্রেফতার॥ অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষকের এমপিও স্থগিতে পদক্ষেপ

নুসরাতের ঘাতকদের বিচার দাবিতে রাজধানীতে পদযাত্রা

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১৩ এপ্রিল ২০১৯

 নুসরাতের ঘাতকদের বিচার দাবিতে রাজধানীতে পদযাত্রা

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ফেনী সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) পুড়িয়ে হত্যা মামলার অন্যতম দুই আসামি নুর উদ্দিন ও কাউন্সিলর মাকসুদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, এরা পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহের অন্যতম হোতা। এদিকে রাজধানীতে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে পদযাত্রা করেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। তারা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি দ্রুততম সময়ে করার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে নুসরাতকে যৌন নির্যাতনের মূলহোতা ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলাসহ দুই শিক্ষকের এমপিও স্থগিতের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শুক্রবার সকালে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল ময়মনসিংহে দুপুরে ভালুকা সিডস্টোর এলাকায় অভিযান চালিয়ে নুর উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পিবিআই সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত নুর উদ্দিন ফেনীর মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অন্যতম আসামি ও অভিযুক্ত অধ্যক্ষ এ এস এম সিরাজ উদদৌলার মুক্তি দাবিতে আন্দোলনের নেতৃত্বদাতা। সে এ মামলার দুই নম্বর আসামি। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম সরাসরি জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে। প্রত্যক্ষদর্শী ময়মনসিংহের ভালুকা সিডস্টোর এলাকার শ্রমিক নেতা শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার দিকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে আমার মোবাইলে কল আসে। ফোনে আমাকে সিড স্টোরে অবস্থিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসে আসতে বলে। পরে আমি সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলি। কথা বলার এক পর্যায়ে তারা ফেনীর সোনাগাজীর আকবর নামের এক লোকের ব্যাপারে জানতে চান। তখন আমি তাদের বলি চার বছর আগে আকবর নামের ওই লোকটি সিড স্টোরের আমতলী এলাকার আব্দুল মজিদের কাছ থেকে একটি খ- জমি কিনে টিনশেডের একটি বাড়ি করেছেন। পরে তারা আমাকে নিয়ে আকবরের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে আকবরের বাড়ির একটি ঘর থেকে নুর উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। এ সময় আকবর বাড়িতে ছিলেন না। পরে নুর উদ্দিনকে নিয়ে পুলিশ দু’টি সাদা রঙের গাড়িতে করে ঢাকার পথে রওনা দেন। তারা নিজেদের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশের পরিচয় দেন। এই শ্রমিক নেতা জানান, আকবরের গ্রামের বাড়ি ও নুর উদ্দিনের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীর একই এলাকায়। সেই সূত্র ধরে গত রাতের কোন এক সময় নুর উদ্দিন আকবরের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভালুকার সিডস্টোর থেকে নুর উদ্দিন গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি সাদা পোশাকধারী বিশেষ টিম। পিবিআই সূত্র জানায়, ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম সরাসরি জড়িত বলে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কারণ নুসরাতকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে করা মামলায় ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার মুক্তির দাবিতে ‘সিরাজ উদদৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ’ নামে কমিটি গঠন করা হয়। ২০ সদস্যের এ কমিটির আহ্বায়ক নুর উদ্দিন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হন শাহাদাত হোসেন। তাদের নেতৃত্বে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে গত ২৮ ও ৩০ মার্চ উপজেলা সদরে দুই দফা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয়। তারাই নুসরাতের সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে একইদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পিবিআইয়ের আরেকটি টিম মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মাকসুদ আলমকে (৪৫) নামে এক কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করেছে পিবিআইয়ের আরেকটি টিম। সেই এই হত্যা মামলার চার নম্বর আসামি। পিবিআইয়ের সূত্র জানায়, রাতে মাকসুদকে ঢাকা থেকে গ্রেফতারের পর শুক্রবার সকালে তাকে পিবিআই এর ফেনী জেলা শাখার কর্মকর্তাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। ফেনী পিবিআইয়ের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান জানান, আজ (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আসামি হাতে পেয়েছি। পিবিআই ঢাকা মেট্রো ও ফেনী যৌথ অভিযানে তাকে রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার মাকসুদ আলম সোনাগাজী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। একইসঙ্গে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্যও ছিল মাকসুদ। এই মাদ্রাসায় পড়তেন নুসরাত জাহান রাফি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা আলিম পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগাম দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেছেন এমন অভিযোগ এনে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকাশ্যে অধ্যক্ষের পক্ষ নেয় কাউন্সিলর মাকসুদ। সে নুসরাত ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার চাপ ও হুমকি দিতে থাকে। নুসরাতের পরিবার অভিযোগ করে, এরপর মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের পক্ষে একটি মানববন্ধনের আয়োজনও করে মাকসুদ। এমনকি মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিচার চেয়ে একটি মানববন্ধন করেছে ওই মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর শেখ মামুন। এই প্রতিবাদ করায় ওই কাউন্সিলর মামুনকে মারধর করে। গত ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে দুর্বৃত্তরা কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়ার ঘটনার পর এই কাউন্সিলরের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নুসরাত যখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউয়ে ছটফট করছে। তখনও পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে ‘ঘটনাটি সাজানো, ‘মেয়েটি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে’ ইত্যাদি বলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে কাউন্সিলর মাকসুদ। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নুসরাতকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়াসহ প্রয়োজনে সিঙ্গাপুরে পাঠাতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিকিৎসকদের নির্দেশ দেয়ার পরেও ঘটনার মোড় ঘোরাতে স্থানীয় পুলিশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালায় মাকসুদ। তার প্রভাবে সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের নির্দেশে মাদ্রাসার সাইক্লোন সেন্টারের তিন তলার ছাদের যেখানে নুসরাতের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয় সে জায়গাটির আলামত সংরক্ষণেরও চেষ্টা করেনি থানা পুলিশ। ফলে রাতের বৃষ্টিতে জায়গাটি ধুয়ে মুছে গেছে। এসব কারণসহ মামলাটির ব্যাপারে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় পরে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহারও করা হয় ওসি মোয়াজ্জেমকে। পরে পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলে সাজানো ছক উল্টে যাওয়ায় কাউন্সিলর মাকসুদ আলম নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে। পরে নুসরাতের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলায় তাকে চার নম্বর আসামি করা হলে সে আত্মগোপনে চলে যায়। বৃহস্পতিবার নুসরাতের জানাজায় অংশ নেয়ার পর সোনাগাজী পৌর মেয়র রফিকুল আলম খোকন জানিয়েছেন, পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তার কাউন্সিলর পদও চলে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। নুসরাতে বাড়িতে মাতম ॥ ফেনীর সোনাগাজী পৌর শহরের আল হেলাল একাডেমির পাশের সামাজিক কবরস্থানে দাদির পাশেই দাফন করা হয় নুসরাত জাহান রাফিকে। শুক্রবার ভোরে ফজরের নামাজের পর কবরস্থানে এসেছিলেন নুসরাতের বাবা একেএম মুসা মানিক ও বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানসহ স্বজনরা। এ সময় তারা নুসরাতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন। নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান কোনভাবেই তার বোনের অসহ্য কষ্টের কথা ভুলতে পারছেন না। মৃত্যুশয্যায় বোনের মলিন চেহারা বারবার মনে পড়ছে তার। আর এ সময় মনের অজান্তে অঝোরে কেঁদে ফেলেন। বাবা একেএম মুসা মানিকও শোকে পাথর হয়ে আছেন। স্ত্রী ও সন্তানদের সান্ত¡না দেয়ার জন্য তাকে একটু শক্ত থাকতে হলেও নিজেকে তিনি সামলে নিতে পারছেন না। বারবার ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছেন। তিনি বলছেন, আল্লাহ যেন আমার মেয়েকে মাফ করে নেয়। কবুল করে নেয়। এটাই ফরিয়াদ। আল্লাহ যেন আমার একমাত্র মার কবরটাকে জান্নাতের বিছানা বানিয়ে দেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতি পোশাক পরিয়ে দেন। জান্নাতি হিসেবে কবুল করে নেন দোয়া চেয়েছেন মুসা মানিক। সোনাগাজী উত্তর চর চান্দিয়া এলাকার মেজো মৌলভী নুসরাতে বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। ওই বাড়ির নারীরা জানান, ওর মা শিরিন মেয়ের শোকে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। কোন কথাই বলতে পারছেন না। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। নুসরাতের দুঃসম্পর্কের খালা সকিনা বেগমও কাঁদতে কাঁদতে বলেন, নুসরাতের মা কখনও যদি বাড়ির বাইরে যেতেন, তাহলে মেয়েকে আমার কাছেই রেখে যেতেন। মেয়েটা অসম্ভব ভাল ছিল। নিষ্পাপ মেয়েটাকে কেন ওরা পুড়িয়ে মারল। আমাকে কে এখন খালা বলে ডাকবে। যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রা ॥ ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে পদযাত্রা করেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। শুক্রবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে গৌরব একাত্তরের আহ্বানে ‘যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রা’ শীর্ষক এ পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। চেতনা বাংলাদেশ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, পূর্ণিমা ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি এতে অংশ নেন। পদযাত্রাটি জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে গৌরব একাত্তরের সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পদযাত্রায় অংশ নেয়া ব্যক্তিরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রোকেয়া হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী ইসলাম বলেন, নুসরাতের মতো নির্যাতনের ঘটনায় আমরা আর রাস্তায় দাঁড়াতে চাই না। প্রতিবাদ হয়, সেটাও শেষ হয়। কিন্তু ধর্ষকদের বিচার হয় না। আর তাই ধর্ষণের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বেলা সাড়ে ১১টায় শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে এই গণপদযাত্রা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায়। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার শতাধিক মানুষ এই কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই স্লোগান ধরেন। গণপদযাত্রা শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, এ অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে হলে প্রচলিত আইনে এটি সম্ভব নয়। যার কারণে আমরা বলছি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার শেষ করার জন্য একটি সময় বেঁধে দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সেটি ৩০ দিন হোক, ৬০ দিন হোক বা ৯০ দিন হোক। এর মধ্যে এই বিচারের প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এটিই আমাদের দাবি। আরেকটি দাবি হল- এই নির্যাতনের শিকার হলো নারী। অথচ নারীকে পুলিশি তদন্তসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যে হয়রানির শিকার হতে হয়, তার জন্য আমরা মনে করি যে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার সকল ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হোক। বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। এর পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই অর্থ দণ্ডের বিধান আছে। বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ ॥ আগুনে পুড়িয়ে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কয়েকটি ইসলামী ছাত্র সংগঠন। এ সময় তারা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলেন। জুমার নামাজের পর ইসলামী ছাত্র মজলিসের বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়ে এসে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। অধ্যক্ষের এমপিও স্থগিত ॥ নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা ঘটনার হোতা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদদৌলার এমপিও স্থগিতের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তার পাশাপাশি ওই মাদ্রাসার অন্য এক শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করতেও বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে চিঠি পাঠিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। চিঠিতে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ এস এম সিরাজ উদদৌলা (ইনডেক্স-৩০৪১১১) এবং ইংরেজীর প্রভাষক আফসার উদ্দিনের (ইনডেক্স-২০৩০৫০৮) এমপিও স্থগিত করতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে শ্লীলতাহানি মামলা নং-২৪, তারিখ ২৭/০৩/২০১৯ এবং হত্যা মামলা নং-১০, তারিখ ০৮/০৪/২০১৯ সোনাগাজী থানার প্রেক্ষিতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং ইংরেজী বিষয়ের প্রভাষক গ্রেফতার হওয়ায় তাদের এমপিও স্থগিত হওয়া প্রয়োজন। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এই দুই শিক্ষকের এমপিও স্থগিতের ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফরের মহাপরিচালককে অনুরোধ জানিয়েছেন। রেওয়াজ অনুযায়ী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর এখন এই দুই শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করে আদেশ জারি করবে। নুসরাতের পরিবারের করা শ্লীলতাহানির মামলায় গ্রেফতার হয়ে এখন বন্দী রয়েছেন শিক্ষক সিরাজ। ওই মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়া হলেও নুসরাত রাজি না হওয়ায় গত ৬ এপ্রিল তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পাঁচ দিন ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন থাকা নুসরাত বুধবার মারা যান। ফেনীর সোনাগাজীর মেয়ে নুসরাত এ বছর আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী ছিলেন তিনি। এই ঘটনার পর দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজকে সাময়িক বরখাস্ত করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়।
×