ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোনাল্ডোই রক্ষা করলেন জুভেন্টাসকে

প্রকাশিত: ১২:২১, ১২ এপ্রিল ২০১৯

রোনাল্ডোই রক্ষা করলেন জুভেন্টাসকে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সময়ের অন্যতম সেরা তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে নিয়ে ছিল ধ্রুমজাল। চোটের কারণে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে তিনি খেলবেন কি না তা নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা। তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে আমস্টারডামের জোহান ক্রুইফ এ্যারানায় ঠিকই নেমেছিলেন সিআর সেভেন। নেমেই ক্ষান্ত হননি। দলকেও উদ্ধার করেছেন। বুধবার রাতে তার করা গোলেই স্বাগতিক ডাচ ক্লাব আয়াক্সের মাঠ থেকে ১-১ গোলে ড্র করে ফিরেছে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাস। এর ফলে আগামী ১৬ এপ্রিল তুরিনে শেষ আটের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে টেনেটুনে গোলশূন্য ড্র করলেও সেমিফাইনালে উঠে যাবে তুরিনের ওল্ডলেডিরা। আর জয় পেলে তো কথাই নেই। অথচ পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছে ডাচ ক্লাব আয়াক্স। ম্যাচে বলের দখলে এগিয়ে ছিল তারাই। গোলমুখে শটও নিয়েছে বেশি। তাদের ১৯টি শটের ৬টি ছিল লক্ষ্যে। এর মধ্যে একটি থেকে গোল আদায় করে। অন্যদিকে জুভেন্টাসের গোলমুখে প্রচেষ্টা ছিল মাত্র ৭ বার। যার একটি থেকে গোল আদায় করেন রোনাল্ডো। চোটের কারণে জুভেন্টাসের হয়ে গত পাঁচটি ম্যাচে মাঠে নামতে পারেননি রোনাল্ডো। তবে মাঠে নামার পর একদমই বোঝা যায়নি সেটা। আয়াক্সের বিপক্ষে প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় গোল করেন তিনি। ডি বক্সের ডানদিক থেকে জোয়াও কানসেলোর বাড়ানো ক্রসে নিখুঁত হেডে গোল করে জুভদের ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন পর্তুগীজ তারকা। পিছিয়ে গিয়ে ম্যাচে ফিরতে খুব বেশি সময় নেয়নি আয়াক্স। বিরতির পর প্রথম মিনিটেই প্রায় একার চেষ্টায় দলকে সমতায় ফেরান ডেভিড নেরেস। বাম পাশ দিয়ে আক্রমণে উঠে জুভেন্টাসের বেশ কয়েকজন ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে দুর্দান্ত শটে বল জালে জড়িয়ে ১-১ সমতা আনেন তরুণ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। বাকি সময়ে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচটা জমে উঠলেও গোল পায়নি কোন দলই। এর মধ্যে খেলার ধারার বিপরীতে ৮২ মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ নষ্ট হয় জুভেন্টাসের। এ সময় ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ডগলাস কোস্টার শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। তবে পুরো ম্যাচের ৬১ শতাংশ সময় বল নিজেদের দখলে রাখে আয়াক্স। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে জয় পায়নি শেষ ষোলো থেকে আসরের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় করা দলটি। পরশু রাতের ম্যাচের পর আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে রোনাল্ডো-মেসির দ্বৈরথ। দুই সুপারস্টারই নিজ নিজ দলের হয়ে এ দিন মাঠে নেমেছিলেন। রোনাল্ডো গোল পেলেও পাননি মেসি, বরং বার্সা ডায়মন্ড রক্তাক্ত হয়েছেন। ম্যাচে জুভেন্টাস তেমন ভাল খেলেনি। কিন্তু রোনাল্ডো ঠিকই জাল খুঁজে পেয়েছেন। ইউরোপসেরা হওয়ার এই টুর্নামেন্টে পর্তুগীজ তারকা বরাবরই দুর্দান্ত। প্রতিযোগিতা যত এগোয় রোনাল্ডোর গোলক্ষুধাও যেন বেড়ে যায়। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে এ নিয়ে ১৬১ ম্যাচে ১২৫ গোল করেছেন সিআর সেছেন। মেসি পিছিয়ে আছেন ১৭ গোলের ব্যবধানে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে আর কোন ফুটবলারই রোনাল্ডোর মতো এত বেশি গোল করতে পারেননি। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফাইনাল পর্যন্ত হিসাব কষলে তো তার ধারে কাছে কেউ নেই। এই তিন মঞ্চে ৪১ গোল করেছেন বর্তমান জুভেন্টাস তারকা। এই মঞ্চেও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মেসি। কিন্তু গোল করেছেন মাত্র ১৬টি। ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে রোনাল্ডোর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ অভিষেক ২০০৩ সালে। শুরু থেকেই গোলের দেখা পেলে তার পরিসংখ্যান আরও সমৃদ্ধ হতো। কিন্তু উড়াল দিতেই দেরি হয়ে যায়। প্রথম গোলের দেখা পেতে রোনাল্ডোকে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় চার বছর। ২০০৭ সালের ১০ এপ্রিল এস রোমার বিপক্ষে জোড়া গোল করে ইউরোপ সেরার আসরে গোলের খাতা খোলেন রোনাল্ডো। এখান থেকে ঠিক এক যুগ পেরিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ১২৫ গোল করেছেন তিনি। অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে মেসির অভিষেক ২০০৪ সালে। শুরুর দিকে গোল করায় মেসি রোনাল্ডোর চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। ২০১১-১২ মৌসুম শেষে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে রোনাল্ডোর চেয়ে ১৩ গোল বেশি ছিল মেসির। এরপর থেকেই এই আসরে রোনাল্ডো অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। ২০১১-১২ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লীগের প্রতি মৌসুমেই ন্যূনতম ১০টি করে গোল করেছেন রোনাল্ডো। কিন্তু ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি মেসি। তাতেই এগিয়ে গিয়ে বার্সা ডায়মন্ডের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছেন জুভেন্টাস তারকা।
×