ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গাঁও-গেরামের দুয়ারে বৈশাখের চেনাজানা সুরে শোরগোল

প্রকাশিত: ১১:৩২, ১২ এপ্রিল ২০১৯

গাঁও-গেরামের দুয়ারে বৈশাখের চেনাজানা সুরে শোরগোল

সমুদ্র হক ॥ এই রোদ এই মেঘ এই বৃষ্টির চৈত্রের অচেনা আবহাওয়ায় দুয়ারে বৈশাখ চেনাজানা সুরেই শোরগোল তুলেছে। বর্ষবরণের ঢাকের কাঠি আগেই নেচে উঠেছে। সাধারণ মানুষ বর্ষবরণের আয়োজনে মহাব্যস্ত। সকল ধর্মের মানুষের এই ব্যস্ততা টেনে নিয়ে যায় বৈশাখের সম্প্রীতির মহা উৎসবে। পরিণত হয় এক বন্ধনহীন অবারিত মিলনমেলায়। গাঁও গেরামেও বর্ষবরণের আয়োজনে মোটেও ভাটা পড়েনি। কখনও শহরের চেয়েও বেশি। গ্রামে চৈত্র শেষের দিনগুলিতে বর্ষ বরণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কৃষক ফসলের মাঠে গিয়ে রোদেলা দুপুরে পরিচর্যার পর ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিচ্ছে গাছের ছায়ায়। গাঁয়ের বধূরা ঘরের চারধারে মাকড়সার জালসহ যত ময়লা আছে তা সাফসুতরো করছে। গ্রামে এখন নিকট অতীতের কুঁড়েঘর নেই। কোন বাড়ি টিনে ছাওয়া, কোন বাড়ি টিনে ছাওয়া আধা পাকা, কোন বাড়ি পাকা। পাকা মেঝে ধোয়া মোছা হচ্ছে। মাটির মেঝে, বাড়ির উঠান এবং আঙিনায় মাটি ছেনে কাদা করে পানিতে গুলে লেপার কাজ করছে গাঁয়ের নারী। বাঙালী নদী তীরের রানীরপাড়া গ্রামের ক’জন কৃষক বধূ বললেন, বৈশাখ মাসের আগের দিনও এই লেপা মোছার কাজ চলবে। আঙিনা ও খুলি (বহিঃআঙ্গিনা) লেপে একেবারে ঝকঝকে তকতকে করা হবে। ঘরের বিছানাপতি ধুয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। টিউবওয়েলের পাড় পরিষ্কার হচ্ছে। বৈশাখী আনন্দে ঘরদোর ঝকঝকে রাখতে যা করা দরকার তাই হচ্ছে। মনে হবে যেন ঈদের আনন্দের পালা। বাঙালীর ঐতিহ্য মাটির হাঁড়িতে রান্না। মাটির হাঁড়ি পাতিলে রান্না করা ভাত তরকারির স্বাদই আলাদা। গেরস্ত বধূ ফেরদৌসী বললেন, মাটির পাতিলে খড়ির চুলায় রান্নায় যে স্বাদ সিলভারের পাতিলে গ্যাসের চুলার রান্নার সেই স্বাদ হয় না। নববর্ষের দিনে গ্রামের মানুষ মাটির পাতিলে ভাত রাঁধে। রাতের ভাতে পানিতে ভিজিয়ে পরদিন সকালে সেই পান্তা নুন কাঁচা লঙ্কা দিয়ে খাওয়ার যে কী স্বাদ! জিহ্বায় লেগে থাকে। হালে শহরের অনেক বাড়িতে বৈশাখী উৎসবে রান্নার ধরন পাল্টেছে। শহর ও নগরীর অনেক গৃহিণী বৈশাখী রান্নার প্রস্ততিতে মাটির হাঁড়ি-পাতিল কিনছে। ফিরে আসছে ঐতিহ্যের সেই দিনগুলি। শহরে আর্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের মাটির হাঁড়ি পাতিল, বাঁশ বেতে তৈরি গ্রামের কৃষকের মাথার মাথালে নক্সা করতে দেখা যায়।
×