ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অশনিসঙ্কেত ঢাকাই সিনেমায়

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১২ এপ্রিল ২০১৯

অশনিসঙ্কেত ঢাকাই সিনেমায়

মনোয়ার হোসেন ॥ ঢাকাই চলচ্চিত্রে চলছে এখন অশনি সঙ্কেত। বহুমুখী সমস্যায় ভুগছে দেশীয় চলচ্চিত্রশিল্প। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সঙ্গে এখন নিম্নবিত্ত শ্রেণীও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র থেকে। উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগে নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন দেশীয় চলচ্চিত্রের বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে সিনেমার গল্পহীনতা ও দক্ষ নির্মাতার অভাব। শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতাহীন প্রযোজকরা অল্প পয়সায় বেশি মুনাফার লোভে অদক্ষ নির্মাতাদের দিয়ে তৈরি করছেন ছবি। ফলে দুর্বল নির্মাণশৈলী, কারিগরি ত্রুটির সঙ্গে গল্পহীনতায় সিনেমা হারিয়েছে তার আবেদন। তাই পয়সা খরচ ও সময় নষ্ট করে দর্শক সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখতে আগ্রহী নন। দর্শকশূন্যতায় ব্যবসায়িক লোকসানের মুখে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ। অন্যদিকে প্রযোজক, প্রদর্শক ও পরিচালকদের মধ্যে রয়েছে ঐক্যের অভাব। দোষারোপ করছেন একে অপরকে। এমন প্রেক্ষাপটে ভারতীয় চলচ্চিত্র চালিয়ে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ধরে রাখতে চাইছেন প্রদর্শকরা। ছবি আমদানি করতে না দিলে হল বন্ধ রাখার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন তারা। পরবর্তীতে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রদর্শক সমিতির সমঝোতা বৈঠকে হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হলেও দেশীয় চলচ্চিত্রের ঘুরে দাঁড়ানোর কোন লক্ষণ নেই। ছবি নির্মাণ কমে যাওয়ার সঙ্গে বছরে হাতেগোনা দু-একটি ছবি মুনাফার মুখ দেখলেও অধিকাংশ ছবি টানছে না দর্শক। এদিকে আবার লোকসানের কারণে মালিকরাও সিনেমা হলের পরিবেশের প্রতি নজর দিচ্ছেন না। অস্বচ্ছ পর্দা ও বাজে শব্দগ্রহণব্যবস্থা, ভাঙ্গা আসন, বাথরুমের নোংরা পরিবেশ হলবিমুখ করছে সিনেমাপ্রেমীকে। এ অবস্থায় চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিতরা সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে হবে না সমস্যার সমাধান। ক্রমাগত ¤্রয়িমাণ হতে থাকবে দেশীয় চলচ্চিত্র। এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ জনকণ্ঠকে বলেন, আগে জানতে হবে দর্শক কেন ছবি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যায় না। মূলত হলগুলো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সিনেমা চালায়। আর এখন দর্শকের জন্য ইউটিউব, প্রাইভেট চ্যানেলসহ ছবি দেখার অসংখ্য মাধ্যম তৈরি হয়েছে। বিনোদনের বহুমুখী মাধ্যম সৃষ্টি হয়েছে। প্রযুক্তি সহজলভ্য মাধ্যম হয়েছে। দলবদ্ধভাবে ছবি দেখার রেওয়াজটিও হারিয়ে গেছে। অন্যদিকে বর্তমানে দেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রগুলোয় বিষয়বস্তুর প্রচ- অভাব রয়েছে। মৌলিক ও রুচিসম্মত গল্পের ছবি তৈরি হয় না। দর্শককে হলমুখী করার মতো মৌলিক ছবি নির্মিত হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ মেধাসম্পন্ন ও সৃজনশীল নির্মাতার অভাব। মান্ধাতা আমলের কৌশলে সিনেমার গল্প বললে চলবে না। দর্শক এখন মোবাইলে সারা বিশ্বের ছবি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। তাই দর্শককে হলে আনতে হলে ছবির কাহিনী ঢেলে সাজাতে হবে। যুক্ত করতে হবে দর্শক চিত্তহরণকারী বিষয়। সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিচালককে এদেশের প্রেক্ষাপট এবং মানুষের মানসিকতাকে বুঝতে হবে। উপমহাদেশের লোকজন গান পছন্দ করেÑ সেই বিষয়টির যথার্থ প্রয়োগ ঘটাতে হবে চলচ্চিত্রে। মনপুরা চলচ্চিত্রটি দারুণ হিট হয়েছিল। ওই ছবির সফলতার অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল গানের ব্যবহার। বর্তমানে অধিকাংশ চলচ্চিত্রে এসব বিষয়ের সম্মিলন ঘটছে না। আবার এত সংকটের মধ্যে আবার কিছু শিল্পী উচ্চমূল্যের সম্মানী চাইছেন। দুঃসময়ে এটাও চলচ্চিত্র শিল্পের এগিয়ে চলার পথে অন্তরায়। একসময় রূপবান ছবিটি দারুণভাবে দর্শক টেনেছে। ওই সিনেমাটি অবাস্তব গল্পের হলেও ভেতরের কাহিনী দর্শকের মনে দাগ কেটেছে। এই ভূখ-ের মানুষের মানসিক কাঠামো সেটা গ্রহণ করেছে। তাই নির্মাতার দেশের ইতিহাস, অর্থনীতি, শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। পাশাপাশি চলচ্চিত্রের বিপণনটাও জানতে হবে। সেন্সরশিপের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। অনেক নির্মাতার সেন্সরশিপ সম্পর্কেও ধারণা নেই। অন্যদিকে একের পর এক সিনেমা হল ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। গুলিস্তান বা রূপমহলের মতো দর্শক সমাগম ঘটা হল আজ বিলুপ্ত। টিকেটের মূল্যটাও সহনীয় হতে হবে। তার ওপর রাজধানীর অল্প কিছু প্রেক্ষাগৃহ ছাড়া অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ খারাপ। কোন কোন হলে ছারপোকাও কামড়ায়। এসব হলে ছবি দেখার যন্ত্রপাতি মান্ধাতা আমলের অনাধুনিক। আরেক প্রতিবন্ধ হলো মালিকের কাছ থেকে প্রযোজক টিকেট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ঠিকমতো পাচ্ছেন না। প্রসঙ্গক্রমে এই গবেষক বলেন, দেশীয় চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে হলে উপজেলা পর্যায়ে কালচারাল কমপ্লেক্স নির্মাণের মাধ্যমে সিনেমা হল গড়ে তুলতে হবে। সেখানে ই-টিকেটিং ব্যবস্থার পাশাপাশি টিকেটের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। দেশীয় চলচ্চিত্রের মন্দাদশায় হতাশা প্রকাশ করেন সোনালী সময়ের চিত্রনায়িকা সুচন্দা। চলচ্চিত্রের বর্তমান প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে তিন্রি জনকণ্ঠকে বলেন, ভাল চলচ্চিত্রের একটি নিজস্ব ভাষা থাকে। সেখানে শিল্পীর অভিনয় দক্ষতার সঙ্গে দর্শক হৃদয়ে দাগ কাটা সংলাপ ও গল্পের প্রয়োজন হয়। আর এসব কিছুকে এক করে যে মানুষটি ভাল চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন এখন সেই মানুষের বড্ড অভাব। জহির রায়হান, আলমগীর কবির, খান আতাউর রহমান, সুভাষ দত্ত, আমজাদ হোসেন, সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকি, আবদুল্লাহ আল মামুন, চাষী নজরুল ইসলামের মতো মেধাবী পরিচালকের দেখা মিলছে না। হাল আমলে শেখার প্রবণতাহীন নির্মাতারা শ্রম ও মেধার প্রয়োগ ঘটাচ্ছেন না চলচ্চিত্র নির্মাণে। সৃষ্টিশীল চলচ্চিত্র নির্মাণে যে সাধনার প্রয়োজন হয় তেমন প্রস্তুতি নেই এই নির্মাতাদের। এভাবে মিলিত প্রয়াসের অভাবে ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে চলচ্চিত্রশিল্প। সেই অর্থে এখন চলচ্চিত্র বলতে কিছু নেই। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত পুরনো মানুষগুলোর চেহারার দিকে তাকানো যায় না। তারা বেকার হয়ে বসে আছে। বয়স হয়ে যাওয়ায় অন্য কোন পেশায়ও যেতে পারছে না তারা। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহের স্বত্বাধিকারী ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ১৭৪টি হলেও প্রকৃত অর্থে বর্তমানে দেশে ১২০টির মতো হল পরিপূর্ণভাবে চালু আছে। অনেক হল শুধু বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে চালু হয়। ছবির সংখ্যা কমার পাশাপাশি মানসম্মত চলচ্চিত্রের অভাব চলতে থাকলে চালু থাকা প্রেক্ষাগৃহগুলোও একসময় বন্ধ হয়ে যাবে। আমার প্রেক্ষাগৃহে সপ্তাহে একটি ছবি চালালে আড়াই লাখ টাকার টিকেট বিক্রি হলে খরচ উঠে আসে। কিন্তু মানসম্মত ছবি না পাওয়ায় সেটি হচ্ছে না। ভাল ছবি হলে দর্শকরা ঠিকই হলে আসে। নির্মাণ ত্রুটিতে ভোগা ছবি দেখতে দর্শক হলে আসে না। দুর্বল নির্মাণের এসব ছবির ভেতর কাহিনী থাকে না। এখন এমন দশা যে, শাকিব খানের নতুন ছবি ছাড়া দর্শক টানতে পারা ছবি খুঁজে পাওয়া যায় না। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ৫ এপ্রিল থেকে মধুমিতায় চলছে ‘তুই আমার রানি হবি’ নামের নতুন চলচ্চিত্র। দর্শক না পাওয়ায় প্রতিদিন চারটি শোতে এই ছবি থেকে আয় হচ্ছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। অথচ মধুমিতায় একটি শো হাউজফুল হলেই আয় হয় ৪২ হাজার টাকা। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে আমরা প্রদর্শকরা ছবি আমদানির কথা বলছি। নইলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। আমদানিকৃত ছবি দিয়ে দর্শককে ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছি। না হলে হল বন্ধ হয়ে যাবে। তথ্যমন্ত্রী প্রেক্ষাগৃহের দুর্দশার বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন। সিনেমা হল বাঁচাতেই তিনি সীমিত পরিমাণে হিন্দী ছবি আমদানির পাশাপাশি সাফটা চুক্তি অনুযায়ী কলকাতার বাংলা ছবি আমদানির আশ্বাস দিয়েছেন। অথচ ঢাকা অ্যাটাক কিংবা আয়নাবাজির মতো ছবি নির্মিত হলে আমরা ভারতীয় ছবি আমদানির বিষয়ে আগ্রহী হতাম না। ভাল ছবি না পাওয়ার কারণেই ছবি আমদানির কথা বলছি। আমরাও চাই দেশের চলচ্চিত্র দিয়েই হল চালাতে। কিন্তু দেশী ছবি যখন একেবারেই দর্শক টানতে পারে না তখন আমরা বাধ্য হয়ে ছবি আমদানির কথা বলছি। ছবির টিকেট থেকে প্রযোজককে নির্ধারিত অর্থ না দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে নওশাদ বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। আমার প্রেক্ষাগৃহে ১৫০ টাকা মূল্যের একটি টিকেট থেকে প্রযোজককে প্রদান করা হয় ৩০ টাকা। এদিকে হল চালাতে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ট্যাক্স দিতে হয়। টিকেটের ভ্যাট দিতে হয়। সঙ্গে আছে এসিসহ বিদ্যুতের খরচ। সিনেমা হলে পরিবেশ উন্নতকরণ প্রসঙ্গে এই প্রদর্শক বলেন, রাজধানীর কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহ ছাড়া দেশের অধিকাংশ সিনেমা হলে ছবি দেখার সুস্থ পরিবেশ নেই। এই সমস্যা দূর করতে যৌথভাবে কাজ করছে বাণিজ্য ও তথ্য মন্ত্রণালয়। একটি উপকমিটির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে সারাদেশের ৪০টি প্রেক্ষাগৃহকে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে তিনটি ধাপে এই প্রেক্ষাগৃহগুলোর পরিবেশ উন্নত করা হবে। মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণে নির্মাতার অভাবের বিষয়টি অস্বীকার করেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। জনকণ্ঠকে বলেন, প্রকৃত অর্থে নির্মাতার অভাব নেই। অভাব রয়েছে প্রযোজকের। পেশাদার প্রযোজকরা এখন আর ছবি নির্মাণ করেন না। বর্তমানে যারা চলচ্চিত্রে প্রযোজনা করছেন তাদের অধিকাংশই শখের বশে এটি করছেন। স্বল্প বাজেটে ৩০/৪ লাখ টাকায় তারা ছবির নির্মাণ করছেন। অথচ একটি ভাল ছবির জন্য দক্ষ নির্মাতার পাশাপাশি ভাল চিত্রনাট্যের প্রয়োজন। অল্প বাজেট থাকায় এসব প্রযোজক চিত্রনাট্যের জন্য কোন টাকা খরচ করতে চান না। ফলে দুর্বল নির্মাণের সঙ্গে ছবিতে যুক্ত হয় দুর্বল বিষয়, যা দর্শককে টানে না। গুলজারের সঙ্গে সহমত পোষণ করে প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, প্রেক্ষাগৃহ থেকে ঠিকমতো প্রদর্শনীর টাকা না পাওয়া, মধ্যস্বত্বভোগী এজেন্টদের দৌরাত্ম্যসহ নানা সমস্যায় এখন আর পেশাদার প্রযোজকরা ছবি নির্মাণে আগ্রহী না। এই সুযোগে মৌসুমি প্রযোজকরা বিনিয়োগ করছেন চলচ্চিত্রশিল্পে। ছবি নির্মাণে এসব প্রযোজক দক্ষ নির্মাতা খোঁজার চেষ্টাও করেন না। ফলে যেসব নির্মাতা ছবি তৈরি করছেন তারা মেধা না খাটিয়ে নকল গল্পের ছবি নির্মাণ করছেন। ছবি নির্মাণে অনেকেই তামিল ছবির গল্পের অনুকরণ করছেন। প্রযোজকের অল্প টাকার বাজেটে চলচ্চিত্র সৃষ্টির বাসনায় এসব নির্মাতা ছবির মৌলিক গল্পের জন্য উপযুক্ত চিত্রনাট্যকারের ধার ধারেন না। একটি ভাল সিনেমার জন্য চিত্রনাট্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এসব প্রযোজক চিত্রনাট্যের জন্য টাকা খরতে করতে চান না। তাই ছবির গল্পে দর্শক ধরে রাখার মতো মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, পারিবারিক টানাপোড়েন, সামাজিক প্রেক্ষাপট, শহুরে কিংবা গ্রামীণ জীবনের কাহিনী কিংবা লোককাহিনীনির্ভর গল্পের গাঁথুনি নেই। আগে সৈয়দ শামসুল হক, মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের মতো লেখকরা চিত্রনাট্য লিখতেন। সেখানে দর্শক গল্পের খোঁজ পেত। কিন্তু এখন যারা সিনেমার গল্প লিখছেন তাদের কোন যোগ্যতার মাপকাঠি নেই। আর অদক্ষ নির্মাতারা এসব গল্পকারের চিত্রনাট্য নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন যা মধ্যবিত্ত দর্শকের মনে কোন দাগ ফেলছে না। চলচ্চিত্রশিল্পকে বাঁচাতে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন চলচ্চিত্র বোদ্ধা ও প্রদর্শক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দীন। তিনি বলেন, দুর্বল নির্মাণশৈলী ও কারিগরি ত্রুটিপূর্ণ ছবি দর্শক গ্রহণ করছে না। নকল বা একটু এদিক-ওদিক করে পুনরাবৃত্ত গল্পের ছবির দেখতে দর্শক কেন প্রেক্ষাগৃহে আসবে? দেশীয় স্বকীয়তাবর্জিত গল্পহীনতায় এখন ঢাকাই ছবির ভাটার প্রধান কারণ। সংস্কৃতিবিবর্জিত তথাকথিত কিছু প্রযোজক স্বল্প বিনিয়োগে অধিকার মুনাফার লোভে অদক্ষ পরিচালকদের দিয়ে যেনতেন প্রকারে ছবি বানাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে আবার উচ্চমূল্যের সম্মানীর সঙ্গে পরিচালকের কাছে অযাচিত সুবিধা চাইছেন কিছু শিল্পী। সম্প্রতি ঢাকার বাইরে ছবির শুটিং করতে গিয়ে এক নায়িকার স্থানের জন্য মিনারেল ওয়াটার সরবরাহ করতে হয়েছে পরিচালককে। অথচ ওই স্পটে ডিপ টিউবওয়েলের ভালো পানি ছিল। সেই পানি ব্যবহারে অস্বীকৃতি জানায় ওই নায়িকা। অপেশাদার প্রযোজক ও অদক্ষ নির্মাতার মতো এই শিল্পীদেরও চলচ্চিত্রের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই। এই উদাহরণ থেকে বলা যায়, ভাল চলচ্চিত্র নির্মাণ না হলেও সমস্যার অন্ত নেই। অন্যদিকে উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতিতে দর্শকরা সারা বিশ্বের বৈচিত্র্যময় নানা ছবি দেখছে। তাই পুরনো বা নকল গল্পের ছবি তারা প্রত্যাখ্যান করছে। হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো বছরে দু-একটি ভালো ছবি হলেও অধিকাংশই হচ্ছে নিম্নমানের। ফলে দর্শকখরায় ক্রমশ কমছে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা। বছরে দর্শক আকৃষ্ট করা ৩০টি ছবি নির্মিত হলে বেঁচে যেতে সিনেমা হলগুলো। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। একসময় সারাদেশে ১২০০ সিনেমা হল থাকলেও কমতে কমতে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৪টিতে। বর্তমানে ঝালকাঠি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, রাজশাহী, পিরোজপুর, বরগুনাসহ কয়েকটি জেলা সদরে কোন সিনেমা হল খোলা নেই। এসব স্থানে উৎসব-পার্বণ উপলক্ষে দু-একটি হল খোলা থাকে। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের অবস্থা পোস্ট অফিসের মতো হবে। কারও কোন কাজ থাকবে না। এ অবস্থায় দেশী চলচ্চিত্রশিল্পকে ঘুড়ে দাঁড়াতে হলে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন। প্রযোজক, প্রদর্শক, নির্মাতা, শিল্পী সবাইকে এক হয়ে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে।
×