ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এ মৃত্যু মানা যায় না ॥ নুসরাতের জন্য গোটা জাতি শোকস্তব্ধ

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১২ এপ্রিল ২০১৯

এ মৃত্যু মানা যায় না ॥ নুসরাতের জন্য গোটা জাতি শোকস্তব্ধ

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ কফিনবন্দী পোড়া দেহ নিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি (১৮) এই যাত্রা কেউ মেনে নিতে পারছে না। স্বজনদের ছাড়াও তার মৃত্যুতে গোটা জাতি আজ শোকস্তব্ধ ও মর্মাহত। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে তিন সদস্যের একটি বোর্ড নুসরাতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। বেলা ১২টার দিকে তার কফিনবাহী পোড়া দেহ এ্যাম্বুলেন্স তোলার মুহূর্তে বাবা, দুই ভাই, মামাসহ স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদে মর্গের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এরপর সেখান থেকে স্বজনরা লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সে করে তার মরদেহ নিয়ে সোনাগাজীর উদ্দেশে রওয়ানা হন। ময়নাতদন্ত শেষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন জানান, আজ পুরো জাতির সঙ্গে ঢামেক পরিবার মর্মাহত। আমাদের তিন সদস্যের একটি টিম ছিল যারা ময়নাতদন্তের কাজটি সম্পন্ন করেছেন। যেহেতু ময়নাতদন্তের সঙ্গে কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় আছে যেমন ডিএনএ, মাইক্রোবায়োলজিক্যাল টেস্ট করতে হয়, তাই এই মুহূর্তে আমরা কোন রিপোর্ট দিচ্ছি না। আমরা ডিএনএ নমুনা ও অন্যান্য যা প্রয়োজন তা সংগ্রহ করেছি। যেহেতু শরীরের ৮০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। এ কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরিতে কিছুটা সময় লাগবে। রাত ৯টায় মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হতে এতটা সময় লাগল কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের পরিচালক জানান, ময়নাতদন্ত সকালে করতে হয়। এর আগে পুলিশের কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা মরদেহের ময়নাতদন্ত শুরু করি। স্বাভাবিকভাবে যেটুকু সময় লাগে এর মধ্যেই হয়েছে। এর আগে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সোহেল মাহমুদকে প্রধান করে গঠিত বোর্ডের অন্য দুই সদস্য ছিলেন প্রভাষক সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ প্রদীপ বিশ্বাস ও জান্নাতুল ফেরদৌস শারমিন। নুসরাতের মৃত্যুতে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি নম্বর-৬০২) বিপরীতে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন শাহবাগ থানার এসআই মোঃ শামছুর রহমান। এদিকে সকাল থেকে ঢামেক হাসপাতাল মর্গে বাবা মাওলানা একেএম মানিক, তার দুই ভাই, চাচা, মাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। একমাত্র মেয়ের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তার বাবা মানিক। মেয়ের নাম মুখে এনে অঝোরে কাঁদছেন। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে ঠিকমতো কথাই বলতে পারছেন না। সবারই কাছে মেয়ে নুসরাতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে বলছেন। মাথা ন্যুয়ে মেয়ের মরদেহের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তিনি। আমার মেয়ে নুসরাত অনেক লক্ষ্মী ছিল। ওর স্বপ্ন ছিল অনেক বড় হবে। মানুষের মতো মানুষ হবে। পড়ালেখা শেষে উচ্চপদে আসীন হবে। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হলো না। আজ মেয়ের পোড়াদেহ বহন করে নিতে হচ্ছে। এর চেয়ে কষ্ট কি হয়। এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন মাওলানা মানিক। এ সময় নুসরাতের চাচা নুরুল হুদা শামীম জানান,পুরো পরিবার নুসরাতকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ। তার বাবা কোন কথা বলতে পারছেন না। আর নুসরাতের মা আহাজারি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। একমাত্র বোনকে হারিয়ে শোকে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন দুই ভাই। যখনই জ্ঞান ফিরছে তখনই কাঁদছেন। তারাও মেনে নিতে পারছেন না বোনের অকাল মৃত্যু। গত ৫ দিন ধরে নুসরাতের অঘুম রাত কাটিয়েছে তারা। নুসরাতে বাবা মাওলানা মানিক জানান, ডাক্তার, নার্স, এলাকার মানুষ, মন্ত্রী, সাংবাদিকসহ আপনারা সকলেই আমার মেয়ের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। এজন্য আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। দোয়া করবেন আল্লাহ যেন ওকে কবুল করেন। আর যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আইন অনুযায়ী সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার কামনা করছি। রাফির লাশের পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন কী ছিল ॥ ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ‘দুই কান, থুঁতনি, গলা ও ঘাড় ঝলসানো। তার মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে এমন তথ্য উল্লেখ করেছেন ডিএমপির শাহবাগ থানার এসআই মোঃ শামছুর রহমান। বৃহস্পতিবার সকালে দুই পৃষ্ঠার এই সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদনের শুরুতে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে গত ১১ এপ্রিল শাহবাগ থানায় করা সাধারণ ডায়েরি (নম্বর-৬০২)। এতে নুসরাত জাহানের বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ১৮ বছর। এসআই মোঃ শামছুর রহমান সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, এএসআই মিনারা খাতুন ও মোঃ রমজান আলীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে যান। মরদেহটি মর্গের মেঝেতে সরকারী স্ট্রেচারের ওপর উত্তর শিয়রে চিৎ অবস্থায় শায়িত পান। নুসরাতের আপন চাচাত ভাই মুহাম্মদ আলী (৩৫) তাকে শনাক্ত করেন। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে শালিনতা বজায় রেখে মর্গে কর্মরত বিশেষ আয়া চাঁন বিবিকে দিয়ে নুসরাত জাহানের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা শুরু হয়। প্রতিবেদনে তিনি বলেন, নুসরাতের মাথার চুল পোড়া, লম্বা অনুমান ১৮ ইঞ্চি। কপাল স্বাভাবিক। উভয় চোখ ও মুখ বন্ধ। নাক দিয়ে সাদা ময়লা বেরিয়ে এসেছে। উভয় কান, থুঁতনি, গলা, ঘাড়সহ পোড়া ও ঝলসানো। উভয় হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত রাউন্ড গজ ব্যান্ডেজ, যাতে পোড়া ঝলসানো। গলার নিচ থেকে বুক-পেট-পিঠ-যৌনাঙ্গ-মলদ্বারসহ উভয় পায়ের পাতা পর্যন্ত রাউন্ড গজ ব্যান্ডেজ, যাতে পোড়া ঝলসানো। গায়ের রঙ ফর্সা। লম্বা অনুমান ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। পরনে ব্যান্ডেজ ছাড়া কিছু নেই, সরকারী চাদর দিয়ে ঢাকা’, উল্লেখ করা হয়ছে সুরতহাল প্রতিবেদনে। নুসরাতের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদে ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক স্বাক্ষরিত মৃত্যুর প্রমাণপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ৬ এপ্রিল সকাল অনুমান ৯টা ৪৫ মিনিটে ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার সাইক্লোন সেল্টার ভবনের ছাদে নুসরাত জাহানকে পরিকল্পিতভাবে দুষ্কৃতকারীরা (ঘাতক) নিয়ে গায়ে কেরোসিন অথবা পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। নুসরাতের জানাজা ও দাফন ॥ আমাদের ফেনীর নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে ৫ দিন অসহ্য যন্ত্রণায় লড়াইয়ের পর মৃত্যুর কাছে হার মেনে যাওয়া মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের মরদেহ তার ফেনীর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার গ্রামের বাড়ি সোনাগাজীর উত্তর চরচান্দিয়ায় এসে পৌঁছে। এ সময় এলাকার হাজার হাজার মানুষের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। স্বজনসহ এলাকাবাসী রাফির এই অপমৃত্যুর ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তারা এই বর্বরোচিত ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। রাফির লাশ স্বজনদের দেখানো শেষে জনতার ভিড় ঠেলে ধীরে ধীরে লাশের এ্যাম্বুলেন্সটি নির্ধারিত জানাজার স্থান সোনাগাজীর মোঃ সাবের পাইলট হাই স্কুল মাঠে প্রবেশ করে। জানাজায় ইমামতি করেন রাফির বাবা মাওলানা এসএম মুসা। জানাজায় অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম, ফেনীর জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার প্রমুখ। জানাজা শেষে খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদ্রাসার কবরস্থানে দাদির কবরের পাশে তার লাশ দাফন করা হয়। রাফির মৃত্যুর ঘটনায় মামলাটি সোনাগাজী থানার কাছ থেকে পিবিআইতে হস্তান্তর করা হলে সোনাগাজী থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মামলার নথিটি বৃহস্পতিবার সকালে পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করেন। এর আগে সকাল থেকে উত্তর চরচান্দিয়ায় নুসরাতের গ্রামের বাড়িতে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন নুসরাতের দাদা মওলানা মোশারফ হোসেন। তার পাশে খালা সকিনা খাতুন অঝোরে কাঁদছেন। প্রতিবেশীরা শোকে ¤্রয়িমাণ। প্রতিবেশীরা জানান, ৬ এপ্রিল নুসরাতকে হাসপাতালে নেয়ার পর বাড়িটি গত কয়েক দিন সুনশান নীরবতার মধ্যে থাকলেও মৃত্যুর পর কাছের ও দূরের স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাড়িতে এসে জড়ো হচ্ছেন। সবাই কাঁদছে আর অপরাধীদের বিচার চাইছে। এদিকে বাড়িটিতে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকায় চলছে শোকের মাতম। নুসরাতের দাদা মোশারফ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার নাতিনটা অনেক কষ্ট করেছে। সারা গা পুড়ে গিয়ে আজ পাঁচটা দিন অমানুষিক কষ্ট করে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। নাতিনকে আল্লাহ জান্নাত নসিব করুক। আমার নাতিনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। স্বজনরা জানিয়েছেন, সোনাগাজী সাবের মোঃ পাইলট স্কুল মাঠে নুসরাতের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হবে। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে চিরসমাহিত করা হবে বলে স্বজনরা জানান। দুই আসামি রিমান্ডে ॥ ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আরও দু’জনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ফেনীর আদালত পরিদর্শক গোলাম জিলানী জানান, বৃহস্পতিবার পুলিশের আবেদন শুনানি শেষে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহম্মেদ পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দ্ইু আসামি হচ্ছেন, নুসরাতের সহপাঠী ও অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপি ও মাদ্রাসা ছাত্র জোবায়ের আহমেদ। এর আগে আরও সাতজনকে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। এ মামলায় পুলিশ মোট নয়জনকে গ্রেফতার করেছে। নুসরাত হত্যার তদন্ত শুরু ॥ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিকেএম এনামুল করিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল নুসরাত জাহান রাফির মাদ্রাসায় যায়। মাদ্রাসার অভ্যন্তরে সাইক্লোন শেল্টারের তিনতলার ছাদে, যেখানে নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে সেটি পরিদর্শন করেন তদন্ত দলের সদস্যরা। প্রধান আসামির পক্ষে আদালতে লড়ায় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে বহিষ্কার ॥ ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে আগুন দেয়ার মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলাকে আইনী সহায়তা দেয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট কাজী বুলবুল সোহাগকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যৌন হয়রানির ঘটনাকে নাটক বানাতে চেয়েছিল সোনাগাজী থানার ওসি (ভিডিও) ॥ যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে গিয়ে ফেনীর সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষে আরেক দফা হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে। ওসি নিয়ম ভেঙ্গে জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোন নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ভিডিও করার সময় নুসরাত অঝোরে কাঁদছিলেন। তার মুখ দু’হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে। দায়িত্বে অবহেলার দায়ে গত ৯ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা বিন্দুমাত্র ছাড় পাবে না ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে জড়িত কেউই বিন্দুমাত্র ছাড় পাবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পিবিআই তদন্ত করছে, দ্রুত চার্জশীট দেয়া হবে। ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় এবং অপরাধে সহযোগিতার অভিযোগে প্রত্যাহার হওয়া সোনাগাজীর ওসিসহ যারাই জড়িত ও দোষী তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষী কেউই বিন্দুমাত্র ছাড় পাবে না। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় যারা অভিযুক্ত সিরাজ উদদৌলার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করছেন, হয়তো তারা না জেনে করছেন। তদন্তসাপেক্ষে বিস্তারিত জানা যাবে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। এদিকে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ৬ এপ্রিল নুসরাত জাহান রাফির শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই দিন রাতে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত জাহান রাফি মারা যান। নুসরাতকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। তার শরীরের ৭৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে যায় বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। নুসরাতের ফুসফুসকে সক্রিয় করতে মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে অস্ত্রোপচার করা হয়। গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন মেয়েটির মা। ছাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ, মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় অধ্যক্ষের পক্ষের লোকজন নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। গত শনিবার গুরুতর আহত অবস্থায় ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার আগে গত রবিবার অগ্নিদগ্ধ ওই ছাত্রী চিকিৎসকদের কাছে জবানবন্দী দেন। তিনি বলেন, নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা পরা চারজন তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই চারজনের একজনের নাম ছিল শম্পা।
×