ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জুবায়ের বারি

পশু-পাখির আচরণ বিশ্লেষণ

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১২ এপ্রিল ২০১৯

পশু-পাখির আচরণ বিশ্লেষণ

পশু-পাখিদের আচরণ থেকে কত কিছুই না জানার আছে। এক বিশাল প্রকল্পের আওতায় বিজ্ঞানীরা মহাকাশ থেকে তাদের গতিপথ ও আচরণ পর্যবেক্ষণ করে মূল্যবান তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ চালাচ্ছেন। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ইকারুস প্রকল্প। ‘ইকারুস’ নামের প্রকল্প শুরু করতে সেখানে জার্মান বিজ্ঞানীরাও উপস্থিত আছেন। পক্ষী বিশেষজ্ঞ মার্টিন ভিকেলক্সি-র একটি স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। তিনি মনে করেন, পৃথিবী পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে নতুন এক যুগের সূচনা ঘটছে, যা সত্যি অবিশ্বাস্য এক ঘটনা। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে একটি অভিযান চলছে। রুশ মহাকাশচারীরা আইএসএসের গায়ে বিশেষ এক এ্যান্টেনা বসাচ্ছেন। এই ইকারুস-এ্যান্টেনা পৃথিবী থেকে অসংখ্য তথ্য গ্রহণ করবে। অভিনব বিষয় হলো, এক্ষেত্রে প্রাণীরা সেই সব তথ্য সংগ্রহ করছে। মার্টিন ভিকেলক্সি বলেন, ‘প্রয়োজন এমন বুদ্ধিমান সেন্সর, যা আমাদের হয়ে পৃথিবী স্ক্যান করবে। সেই কাজ প্রাণীদের থেকে কে বেশি ভালভাবে করতে পারে!’ প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য প্রাণীরা তাদের ইন্দ্রিয় কাজে লাগিয়ে ভিন্ন মাত্রার চিত্র পায়। পৃথিবী সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তারা অতি দুর্গম প্রান্তেও পৌঁছে যেতে পারে। ভিন্ন এই ক্ষমতা কাজে লাগানোই ইকারুস প্রকল্পের লক্ষ্য। প্রায় ১৬ বছরের দীর্ঘ প্রস্তুতির পর তা সম্ভব হয়েছে। গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা ভিকেলস্কি-র টিমের সঙ্গে একযোগে প্রাণীদের গতিপথ অনুসরণ করার প্রক্রিয়া নিখুঁত করে তুলেছেন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা সম্ভব হচ্ছে। প্রাণীদের গায়ে লাগানো প্রেরক যন্ত্র শুধু তাদের অবস্থান জানাচ্ছে না, এর মাধ্যমে তাদের কার্যকলাপ ও পরিবেশ সম্পর্কেও মূল্যবান তথ্য পাচ্ছেন গবেষকরা। প্রত্যেক প্রজাতির প্রাণীর জন্য সেই প্রক্রিয়ায় রদবদল ঘটাতে হয়েছে। এই পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অসংখ্য প্রাণীর চলাফেরা সম্পর্কে চিত্র সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু তাঁদের আরও স্বপ্ন রয়েছে। পক্ষী বিশেষজ্ঞ মার্টিন ভিকেলক্সি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এবার আমাদের হাতে সত্যি বুদ্ধিমান এক সেন্সর নেটওয়ার্ক আসছে। সেটি স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যও কাজে লাগিয়ে পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন সম্পর্কে এক সার্বিক চিত্র তুলে ধরবে। এই ব্যবস্থা এমনকি পূর্বাভাসও দিতে পারবে।’ রোগব্যাধির পূর্বাভাস এর মাধ্যমে রোগব্যাধির বিস্তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে প্রাণীদেরও ভূমিকা থাকতে পারে। যেমন আফ্রিকার এক বিশেষ প্রজাতির বাঁদুড় সার্স বা মারবুর্গ ভাইরাসের মতো বিপজ্জনক রোগের বাহক বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। কিন্তু এই প্রজাতির জীবনযাত্রা সম্পর্কে এখনও বেশি কিছু জানা যায়নি। গবেষকরা তাই কয়েকটি প্রাণী ধরে তাদের শরীরে সেন্সর লাগিয়ে তাদের গতিপথ পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তাঁদের মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। যেমন ঠিক কোথায় বাঁদুড় বিপজ্জনক ভাইরাসের সংস্পর্শে আসে? রোগ ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে তাদের কি আদৌ কোন ভূমিকা থাকে? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে গবেষকরা ইকারুস প্রকল্পের সাহায্যে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে যত বেশি সম্ভব বাঁদুড়ের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করতে চান। বিপর্যয়ের পূর্বাভাস মার্টিন ভিকেলস্কি এটনা আগ্নেয়গিরির কোলে বসবাসরত ছাগল পর্যবেক্ষণ করে অন্য ধরনের এক পূর্বাভাস আশা করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রাচীন কাল থেকে আমাদের সবসময়ে মনে হয়েছে যে, প্রাণীরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দিতে পারে। ইলেকট্রনিক পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা এই প্রথম সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার সুযোগ পাচ্ছি। বড় আকারের প্রাকৃতিক ঘটনার আগে, ঘটনার সময় ও তার পরে এমন প্রাণী ঠিক কী করে, তা বোঝার চেষ্টা করছি।’ এখনও এমনটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে ভবিষ্যতে ইকারুস প্রকল্পের মাধ্যমে তা করা যাবে বলে বিজ্ঞানীদের মনে আশা রয়েছে। কক্ষপথে ওড়ার সময়ে আইএসএস অসংখ্য প্রাণীর শরীর থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে। ইকারুস এ্যান্টেনাসহ আইএসএস কোন জায়গার কাছাকাছি এলেই প্রাণীদের শরীরে লাগানো প্রেরক যন্ত্র সক্রিয় হয়ে ওঠে ও সংগৃহিত তথ্য পাঠিয়ে দেয়। মহাকাশ থেকে সেই তথ্য আবার পৃথিবীর বুকে পাঠানো হয়, যাতে গবেষকরা তা বিশ্লেষণ করতে পারেন।
×