ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছেলেকে অপহরণের নাটক সাজালেন মা ও খালা

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১২ এপ্রিল ২০১৯

ছেলেকে অপহরণের নাটক সাজালেন মা ও খালা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ১১ এপ্রিল ॥ সৌদি প্রবাসী স্বামীর টাকা লোপাটের জন্য নিজ ছেলেকেই অপহরণের নাটক সাজালেন মা ও খালা। এলাকাবাসী ও পুলিশের তৎপরতায় অপহরণ নাটকের ৬ ঘণ্টা পর অপহৃত ২য় শ্রেণীর ছাত্র নিরব উদ্ধার হয়েছে। এ অভিনব ঘটনাটি ঘটেছে শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি এলাকায়। জানা গেছে, শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের চরচান্দ্রায় বাবার বাড়িতে ২ সন্তান নিয়ে বসবাস করেন সৌদি প্রবাসী কালাম শেখের স্ত্রী সাবিনা আক্তার। সাবিনার সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল স্বামীর। স্বামীকে শায়েস্তা করতে ও ব্যাংকে রক্ষিত টাকা হাতিয়ে নিতে ফাঁদ পাতে সাবিনা ও তার বোন মাকসুদা। নিজ ছেলেকেই অপহরণের নাটক সাজায় ২ বোন। হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয় সাবিনার সন্তান কাঁঠালবাড়ির চরচান্দ্রা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্র নিরবকে। পরিকল্পনা করে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে এগারোটায় নিরবের খালা মাকসুদা কৌশলে বিদ্যালয় গিয়ে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে ছুটি নেয়। পরে মাকসুদা নিরবকে নিয়ে শিবচর চলে আসে। শিবচর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাহেরচর এলাকার শেফালী বেগমের বাড়িতে ২০ হাজার টাকায় দেখভালের চুক্তিতে নিরবকে রেখে যায়। পরে শুরু হয় মূল নাটক। দুপুর ২টার দিক সাবিনা ও মাকসুদা এক হয়ে শিবচর বাজারের কৃষি ব্যাংকের সামনের লোকদের বলে তার ছেলে অপহরণ হয়েছে। এ সময় ব্যবসায়ীরা তাকে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ২ বোন থানা রোডের বাবুবাড়ি এলাকায় গিয়ে আবারও কান্না করতে থাকলে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সাংবাদিকদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিবচর থানার ওসি জাকির হোসেন তাৎক্ষণিক এসআই সুমন আইচকে ঘটনাস্থলে পাঠায়। এরই মধ্যে ২ বোন বারবার তাদের মোবাইল নাম্বারে (০১৭৮৮৯৯৩৮০৫) ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে অভিযোগ করেন। তাদের কান্নার নাটক সকলেরই কাছে সহানুভূতি পায়। পুলিশের নানান মুখী তৎপরতায় অভিযুক্ত নাম্বারটির কোন কললিস্ট পাওয়া যায়নি। সন্দেহের শুরু এখানেই। দুপুরে শিবচর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মা সাবিনা। গতি পায় তদন্ত অভিযান। সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টায় পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় শিবচর পৌরসভাধীন বাহেরচরে শেফালীর বাসা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। শিশু নিরব পুলিশের কাছে জানায় তার খালাই তাকে স্কুল থেকে নিয়ে এখানে রেখে যায়। রাতেই শিশুটির মা সাবিনা আক্তার ও খালা মাকসুদাকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে আসে। গভীর রাত পর্যন্ত ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে বেরিয়ে আসে অপহরণ নাটকের মূল রহস্য। বুধবার দুপুরে এ ঘটনায় শিবচর থানায় মামলা হয়েছে। খালা মাকসুদা বেগম জানান, আমার দুলাভাই বড় বোনকে খুব চাপে রাখে। সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। তাই তাকে শিক্ষা দিতে ও তার ৫ লাখ টাকা বোনকে দেয়ার জন্য এই নাটক সাজাই ২ বোন মিলে। সেই মোতাবেক নিরবকে আমিই স্কুল থেকে নিয়ে আসি। ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে শেফালীর কাছে রাখি।
×